মতামত: পাহাড়ে ভোট দিচ্ছেন অনীত থাপা। নিজস্ব চিত্র।
সাত সকালে বৃষ্টি ভেজা, কুয়াশা ঘেরা দার্জিলিং চকবাজার এলাকার ষাট ছুঁইছুই ঊষা গুরুং জানিয়ে দেন, ভোটটা তিনি দেবেনই। তাঁর যুক্তি, ‘‘অনেকে ভোট দিতে না করছেন। গণতন্ত্র, বহুদলীয় ব্যবস্থার প্রয়োজন তো রয়েছে। দেখা যাক না কী হয়!’’ সঙ্গে ভোট দেন নাতি রবীন এবং নাতনি রমোনা। ঊষার কথায়, ‘‘সুবাস ঘিসিং এবং বিমল গুরুং-র আমলে কার্যত একদলীয় শাসন দেখেছি। তা পুরোপুরি বদল হয়েছে।’’
এক দশক পর, রবিবার পাহাড়ে শান্তিতেই জিটিএ ভোট হল। সকাল থেকে আবহাওয়া খারাপ থাকায় ভোটদানের হার কম ছিল। পরে তা ধীর গতিতে বেড়েছে। সরকারি হিসাব, প্রায় ৫৭ শতাংশ ভোট পড়েছে পাহাড়ে। দার্জিলিং ও কালিম্পং জুড়ে মূল লড়াই ছিল প্রজাতান্ত্রিক মোর্চার অনীত থাপা এবং হামরো পার্টির অজয় এডওয়ার্ডের মধ্যে। অনীত এ দিন বলেন, ‘‘ভোট শান্তিতে হয়েছে। আমরা প্রথমে পাহাড়ে শান্তিই চাই। তার পরে সব। যাঁরা ভোটের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন, আমাদের আশা মানুষ তাঁদের প্রত্যাখ্যান করেছেন।’’
অনীতের দল ৪৫টি জিটিএ আসনের মধ্যে ৩৬টি আসনে লড়েছে। বাকি আসনে তাঁরা নির্দলদের সমর্থন করেছেন। হামরো পার্টি একা ৪৫টি আসন প্রার্থী দিয়েছে। সমতলের গাড়িধুরা থেকে বিজনবাড়ি সর্বত্র দল লড়াই করেছে। দলের প্রধান নেতা অজয় এডওয়ার্ড বলেছেন, ‘‘ভাল ভাবে শান্তিতে ভোট হয়েছে। মানুষ যা রায় দেবে তা মাথা পেতে নেব।’’
সুকনায় একটি বুথে ভোট দিলেন এই ভোটাররা। তবে মুখে মাস্ক নেই কারও। নিজস্ব চিত্র।
শেষবার পাহাড়ে জিটিএ ভোট হয়েছিল ২০১২ সালে। সেবার জিতে চেয়ারম্যান হয়েছিলেন জনমুক্তি মোর্চার সভাপতি বিমল গুরুং। ২০১৭ সাল থেকে ছিল প্রশাসনিক বোর্ড। এ বার বিজেপি, জিএনএনএফ এবং গুরুংয়ের দল ভোটের বিরোধিতা করেছে। গুরুং পাঁচদিন অনশনও করেছেন। যদিও বহু নির্দল প্রার্থীকেই তারা সমর্থন করেছে বলেও অভিযোগ। তবে এ দিন সকাল থেকে বাড়ি ও অফিসে বসে গুরুং ভোটের খবর নেন। তিনি বলেছেন, ‘‘আমি ভোট দিইনি। আমরা কাউকে জোর করিনি। যাঁদের যা মর্জি তা করেছেন। গোর্খা জাতির স্বার্থে আমাদের ল়ড়াই জারি থাকবে।’’
ভোট দেননি জিএনএলএফ প্রধান মন ঘিসিংও। তিনি এ দিন বলেন, ‘‘মানুষ দিল্লি থেকে বড় কিছু আশা করেছিলেন। কিছু হয়নি। তাতে তো একটা প্রভাব পড়বেই।’’
তৃণমূল অবশ্য লড়েছে ১০টি আসনে। দলের নেতা তথা প্রার্থী বিনয় তামাং বলেছেন, ‘‘কম ভোট পড়েছে। কিন্তু পাহাড়ে আমাদের আনা শান্তি বজায় রয়েছে, এটাই বড় প্রাপ্তি।’’