পাশে: ‘হর ঘর স্বনির্ভর’ কেন্দ্রের সূচনায় জিটিএ-র চিফ এগজ়িকিউটিভ অনীত থাপা। বুধবার শিলিগুড়ির শালবাড়িতে। ছবি: স্বরূপ সরকার।
বিজেপিকে সরাসরি আক্রমণের পথে গেলেন ‘গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’ (জিটিএ)-এর চিফ এগজ়িকিউটিভ অনীত থাপা। বুধবার সুকনা লাগোয়া শালবাড়ি এলাকায় বন দফতরের এক অনুষ্ঠানের পরে অনীত জানান, দ্বিস্তরের বদলে, ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েতের জন্য দার্জিলিঙের বিজেপি সাংসদ রাজু বিস্তা লোকসভায় দরবার করছেন বলে দাবি। অথচ, তাঁদের কেন্দ্রীয় সরকার কিছুই করছে না। তাঁর দাবি, একই অবস্থা আলাদা রাজ্যের দাবিরও এবং পুরোটাই ‘দ্বিচারিতা’। বিজেপি পাহাড়ের মানুষকে ‘ফাঁকা বুলি’ শুনিয়ে চলেছে বলে কটাক্ষ অনীতের। যদিও বিজেপি সাংসদের বক্তব্য, ‘‘রাজ্য জিটিএ-কে দিয়ে নিজের মতো পাহাড় চালাচ্ছে, মানুষ পরিষেবা পাচ্ছেন না এবং বিষয়টি কেন্দ্রীয় বলেই কেন্দ্রীয় সরকারকে ত্রিস্তরীয় বিষয়টি দেখতে বলা হয়েছে।’’ তাঁর দাবি, ‘‘এর মধ্যে রাজনীতির কিছু নেই।’’
এ দিন অনীত বলেন, ‘‘এক দশকেরও বেশি সময় হয়ে গেল, বিজেপির মুখে নানা কথা আর দিল্লি গিয়ে নানা দাবি তোলা। কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনেই তো পঞ্চায়েতের বিষয়টি রয়েছে। ওরা কিছুই করেনি। মুখে না বলে কাজে করে, নথিপত্র এনে দেখাতে হবে।’’
তরাইয়ের জিটিএ এলাকায় বনবস্তি এবং লাগোয়া অঞ্চলের যুবক-যুবতীদের স্বনির্ভর হওয়ার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। হস্তশিল্প থেকে বোতলজাত খাবার, সেলাই, বিউটিশিয়ানের মতো নানা স্বল্প সময়ের ‘কোর্স’ করানো হয়। এ দিন শালবাড়িতে এমনই একটি প্রশিক্ষণ শিবিরের উদ্বোধন করেন অনীত। সেখানে পাহাড়ের পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে রাজু বিস্তার সংসদে সরব হওয়ার প্রসঙ্গ তুলে বিজেপিকে কার্যত এক-হাত নেন অনীত। তিনি জানান, পাহাড়ে ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত ভোটের কথা জিটিএ চুক্তিতেই উল্লিখিত রয়েছে। কিন্তু পঞ্চায়েতের এই বিষয়টি কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের অধীনে। সেখান থেকেই ব্যবস্থা নিতে হবে। অনীতের বক্তব্য, বিষয়টি নিয়ে বিজেপি সাংসদেরই বলা উচিত, যদিও তিনি মুখে দাবি তুলেই চলে আসছেন। অনীতের বক্তব্য, ত্রিস্তরীয় ভোটের ব্যবস্থা করুক বিজেপি, পাহাড়ের সবাই খুশি হবেন। তিন দিন আগেই বিজেপি সাংসদ লোকসভায় রাজ্য সরকার এবং জিটিএ-র ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে পাহাড়ে ত্রিস্তরীয় ভোটের কথা বলেন। কেন্দ্রীয় সরকারকে তা দেখার অনুরোধ করেন।
আশির দশকে পার্বত্য পরিষদ তৈরির সময় দার্জিলিং জেলা পরিষদ ভেঙে দেওয়া হয়। সমতলে শিলিগুড়়ি মহকুমা পরিষদ হয়। এখন পাহাড়ে জিটিএ রয়েছে। এই অবস্থায় ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত ভোট করতে হলে আইন সংশোধন প্রয়োজন, যা কেন্দ্রীয় সরকারের বিষয়। রাজ্যের তরফে কেন্দ্রকে বহু দিন আগে চিঠি দেওয়া হলেও আইনি প্রক্রিয়াগত কারণে বিষয়টি নিয়ে আর নাড়াচাড়া হয়নি। এই অবস্থায় বিজেপি সাংসদের বক্তব্যকে ঘিরে পাহাড়ে রাজনৈতিক চাপানউতোর শুরু হয়েছে।
পাহাড়ের রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা মনে করছেন, পঞ্চায়েত ভোট যত এগিয়ে আসবে, পাহাড়ে শাসক-বিরোধী সংঘাত বাড়তে থাকবে।