পুরনো সহকর্মী অশোককুমার রায়চৌধুরীকে আলিঙ্গন রাজ্যপালের। নিজস্ব চিত্র
“একটু বাদেই, মাননীয় রাজ্যপাল আপনার বাড়িতে যাচ্ছেন,” দীর্ঘদিন আগে অবসর নেওয়া ব্যাঙ্ককর্মীকে ফোনে জানিয়েছিলেন রাজ্যপালের সচিব। বৃহস্পতিবার দুপুরে হঠাৎ এমন ফোন পেয়ে ঘাবড়ে গিয়েছিলেন চুয়াত্তরে পা দেওয়া অশোককুমার রায়চৌধুরী। ভেবেছিলেন, ডাক পড়বে নিরাপত্তায় মোড়া কোনও অতিথিনিবাসে। খানিক বাদেই প্রশাসন থেকে খবর এল, রাজ্যপাল আসবেন জলপাইগুড়ির পুরাতন মসজিদপাড়ায় অশোকের বাড়িতেই। তখন হাতে সময় আধ ঘণ্টার কিছু বেশি। গোটা এলাকা জুড়ে নিরাপত্তা তুঙ্গে। ছোটাছুটি শুরু করে দিয়েছেন পুলিশ আধিকারিক। চলে এসেছেন জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু, জেলা পুলিশ সুপার বিশ্বজিৎ মাহাতো।
শেষ পর্যন্ত রাজ্যের বর্তমান রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস পূর্বনির্ধারিত সূচি ছাড়াই পুরোনো বন্ধুর বাড়িতে এলেন। বড় রাস্তায় গাড়ি রেখে, সরু গলি দিয়ে হেঁটে ঢুকলেন। উঠোনে দাঁড়ানো বন্ধুকে দেখে জড়িয়েও ধরলেন।
অশোকের সঙ্গে রাজ্যপালের বন্ধুত্ব হয় ১৯৭৭ সালে। তখন তিনি একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের জলপাইগুড়ি শাখায় শিক্ষনাবিশ আধিকারিক হিসাবে কাজে যোগ দিয়েছেন। অশোক ছিলেন করণিক। রাজ্যপাল হয়ে বঙ্গে আসার পরেই সি ভি আনন্দ বোস অশোকের নম্বর খুঁজে যোগাযোগ করেছিলেন। এ দিন অশোক বলেন, “তাই বলে আমার সঙ্গে দেখা করতে একেবারে বাড়িতে চলে আসবেন, ভাবতেই পারিনি! কত জনের সঙ্গে কত সম্পর্ক ছিল, তাঁদের অনেকেই আর মনে রাখেননি। কিন্তু রাজ্যপালের পদে আসীন হয়েও, তিনি আমার বাড়িতে এসেছেন, এ অনুভূতি বোঝানোর কোনও উপায় নেই!”
অশোককে নিজের লেখা বই-সহ নানা উপহার দিয়েছেন রাজ্যপাল। অশোকও শাল দিয়েছেন। রাজ্যপাল অশোকের কাছে জলপাইগুড়ি নামের উৎস জানতে চেয়েছেন, জঙ্গলের কথা শুনতে চেয়েছেন, জেলায় কী ধরনের চাল হয় তা বুঝতে কৌটো থেকে চাল হাতে নিয়ে দেখেছেন। ভিতরে সঙ্গে থাকা এলাকার কাউন্সিলর তৃণমূলের তপন বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, “কত গল্প যে করলেন রাজ্যপাল।’’
যাঁকে ঘিরে শোরগোল, তিনি পুরোনো বন্ধুর বাড়ি থেকে বেরিয়ে বললেন, “রায়চৌধুরী (অশোক) আমার চাকরি জীবনের শিক্ষক। ব্যাঙ্কের চাকরিতে জলপাইগুড়ি ছিল আমার প্রথম কর্মস্থল। রায়চৌধুরী আমাকে একটি উপদেশ দিয়েছিলেন, তা হল— যদি তোমার পছন্দের কিছুকে না পেয়ে থাক, তা হলে যা পেয়েছ, সেগুলিকে পছন্দ করতে শুরু করো। সে শিক্ষার প্রাপ্তিস্বীকারেই ছুটে এসেছি।” ফিরতি আমন্ত্রণে পুরোনো সহকর্মী-বন্ধু অশোককে কলকাতায় রাজভবনে যেতে বলেছেন রাজ্যপাল।