রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। —ফাইল চিত্র।
ভোট নিয়ে অশান্ত দিনহাটায় কি রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস আসছেন? বুধবার দুপুর ৩টের সময় রাজ্যপালের কোচবিহারে পা দেওয়ার আগে এমনই প্রশ্ন তৃণমূলের। অন্য দিকে, ভোটের আগে অশান্তি, সন্ত্রাস এবং বিরোধীদের মনোনয়ন জমা দিতে বাধা— এমন একগুচ্ছ অভিযোগ নিয়ে রাজ্যপালের কাছে দরবার করতে চায় বিজেপি। যদিও রাজ্যপাল তাঁর নির্ধারিত কর্মসূচি থেকে সেই সময় দেবেন কি না, তা এখনও স্পষ্ট নয়।
গত ২৪ ঘণ্টায় দুটি গুলি চালানোর ঘটনা ঘটেছে দিনহাটায়। মঙ্গলবার কাকভোরে গীতালদহের জারিধরলা এলাকায় তৃণমূল-বিজেপি সংঘর্ষে এক তৃণমূল কর্মীর মৃত্যু হয়েছে। তার পর সন্ধ্যায় গুলি চলেছে গীতালদহ-১ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায়। সেখানে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন বিদায়ী পঞ্চায়েত প্রধান তথা তৃণমূল প্রার্থীর ভাই। এই দুটি ঘটনা ছাড়াও দিনহাটায় ছোটখাটো অশান্তি লেগেই রয়েছে। তাই দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙড়ের মতো কোচবিহারের দিনহাটায় রাজ্যপাল আসবেন কি না, সেই কৌতূহল তৈরি হয়েছে। রাজ্যপালের যে সফরসূচি রয়েছে, তাতে কোচবিহারের কোনও এলাকায় যাওয়ার কথার উল্লেখ নেই। সূচি অনুযায়ী, দুপুর ৩টের সময় বাগডোগরা বিমানবন্দর থেকে কপ্টারে উঠবেন রাজ্যপাল। কোচবিহার বিমানবন্দরে নেমে তিনি সোজা চলে যাবেন সার্কিট হাউসে। সেখানেই রাতে থাকবেন। সকালে তিনি চলে যাবেন মুর্শিদাবাদ। তবে তার মধ্যে রাজ্যপাল অন্য কোনও কর্মসূচি রেখেছেন কি না জানা যায়নি। তৃণমূল চাইছে, মৃত এবং আহত তৃণমূল কর্মীর বাড়িতে যান রাজ্যপাল। শাসকদলের মুখপাত্র পার্থপ্রতিম রায়ের কথায়, ‘‘উনি (রাজ্যপাল) আগে আসুন। দেখি ওঁর শিডিউল কী আছে। দেখা যাক মৃত এবং আহতদের বাড়িতে উনি যান কি না।’’
রাজ্যপাল আসার আগে কোচবিহার সার্কিট হাউস গোছগাছের কাজ চলছে। —নিজস্ব চিত্র।
অন্য দিকে, কোচবিহারের বিজেপি জেলা সভাপতি সুকুমার রায় জানান, তাঁরা চাইছেন রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করতে। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের বিধায়কদের নিয়ে একটি প্রতিনিধি দল রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করার জন্য সময় চাইবে। ভোট ঘোষণার পর থেকে জেলায় যে পরিস্থিতি চলছে, হিংসা এবং সন্ত্রাসের কথা রাজ্যপালের কাছে তুলে ধরতে চাই আমরা।’’
শুক্রবার সকালে কোচবিহার সার্কিট হাউসে রাজ্যপালের নিরাপত্তারক্ষীরা চলে এসেছেন। চলছে সার্কিট হাউস গোছগাছ পর্ব। সেখানে ওঠার পর রাজ্যপাল কোনও জায়গায় যান কি না, সেটাই দেখার। উত্তরবঙ্গ সফরে এসেই রাজ্যপাল বলেছেন, কী পরিস্থিতি চলছে, তা তিনি দেখতে এসেছেন।
প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার ভোর ৫টা নাগাদ কোচবিহারের গীতালদহেরই জারিধরলা এলাকায় তৃণমূল-বিজেপি সংঘর্ষে এক তৃণমূল কর্মীর মৃত্যু হয়। গুলিবিদ্ধ হন চার তৃণমূল কর্মী। একই দিনে গীতালদহে আরও একটি গুলি চলার ঘটনা ঘটেছে। তৃণমূলের মুখপাত্র পার্থপ্রতিম রায়ের অভিযোগ, মঙ্গলবার রাত ১১টা নাগাদ গীতালদহে তৃণমূলের প্রার্থী বিজলী খাতুনের নির্বাচনী প্রচার সেরে বাড়ি ফেরার পথে বিজেপি আশ্রিত দুষ্কৃতীদের হাতে আক্রান্ত হন তাঁর ভাই শাহানুর। দুষ্কৃতীরা তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। শাহানুরের পেটে গুলি লেগেছে। সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।’’ পার্থ আরও বলেন, “বিজেপি আশ্রিত দুষ্কৃতীরা দিনহাটায় তৃণমূল প্রার্থীদের চিহ্নিত করে তাঁদের উপর হামলা চালাচ্ছে। প্রশাসনের কাছে আমরা দ্রুত পদক্ষেপের আবেদন জানাব।” তাঁর দাবি, সীমান্তবর্তী এলাকায় বিএসএফের মদতে পার পেয়ে যাচ্ছে বিজেপি আশ্রিত দুষ্কৃতীরা। এখন কোচবিহারের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন শাহানুর। বিজেপি অবশ্য যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তাদের দাবি, তৃণমূলের গোষ্ঠীকোন্দলের ফলে এই ঘটনা ঘটেছে। পঞ্চায়েত ভোটে টিকিট বিলি নিয়ে শাসকদল আড়াআড়ি বিভক্ত বলে দাবি করেছে তারা।