মুখ্যমন্ত্রী আসবেন। তাই তিন দিন আগেই সরকারি কটেজ থেকে সরিয়ে দেওয়া হল পর্যটকদের।
আজ সোমবার মুখ্যমন্ত্রী ডুয়ার্স সফরে এসে কালিম্পং মহকুমার সুনতালেখোলার বন উন্নয়ন নিগমের কটেজে পৌঁছবেন। সোম এবং মঙ্গলবার দু’দিনই মুখ্যমন্ত্রীর সুনতালেখোলার থাকার কথা। সে কারণে গত শুক্রবার থেকেই পর্যটকদের সরিয়ে দেওয়া হল কটেজ থেকে। পর্যটকদের অভিযোগ, মাসখানেক আগে সরকারি কটেজের ঘর ‘বুক’ করেও পর্যটকদের থাকতে হল এক কিলোমিটার দূরে বেসরকারি রিসর্টে। নিগম সূত্রে জানানো হয়েছে, মুখ্যমন্ত্রীর মতো ভিভিআইপিকে রাখতে হলে কটেজের নিরাপত্তা ব্যবস্থা সহ শেষ মুহূর্তে কিছু সংস্কার কাজের প্রয়োজন হয়। সে কারণেই পর্যটকদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
সূত্রের কবর, দু’টি পরিবারকে কটেজ থেকে সরানো হয়েছে। এই বাতিলের কথা তাঁদের আগেভাগে জানানোও হয়নি বলে অভিযোগ।
প্রশাসনের বক্তব্য, মুখ্যমন্ত্রীর মতো ভিভিআইপি এলে বাংলো খালি করে দেওয়ার নিয়মই রয়েছে। সেই নিয়ম মতোই বুকিং বাতিলও করা যায়। রাজ্যের বনমন্ত্রী বিনয় বর্মন বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী যখনই উত্তরবঙ্গে আসেন, খুবই কম নিরাপত্তা এবং সরকারি ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। এর ফলে তেমন কোনও অসুবিধে হওয়ার কথা নয়।”
অনলাইনে কটেজ বুক করে গত শুক্রবারে সুনতালেখোলাতে এসেছিলেন কোচবিহারের বাসিন্দা অমিতকুমার সাহা, শিলিগুড়ির সন্দীপ সরকারেরা। শুক্রবার এবং শনিবার দুই রাত থাকার জন্যে ৪টি কটেজের আগাম টাকাও মিটিয়েছিলেন তাঁরা। সুনতালেখোলায় মোট আটটি কটেজ রয়েছে। সুনতালেখোলাতে এসেই জানতে পারেন মুখ্যমন্ত্রীর সফরের কথা। যে ঘর তাদের বুক করা রয়েছে, সেই ঘরটিতেই মুখ্যমন্ত্রী থাকবেন। তাই সেখানে তখন চূড়ান্ত পর্যায়ের সংস্কারের কাজ চলছে। এই কথা বলে তাঁদের কটেজের যেতে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। বিকল্প জায়গা হিসেবে, সরকারি কটেজের থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে একটি বেসরকারি কটেজে তাঁদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়। শুধু তাই নয়, কম ভাড়ার বেসরকারি রিসর্টে তাঁদের রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন পর্যটকেরা। বন উন্নয়ন নিগমের চেয়ারম্যান রবীন্দ্রনাথ ঘোষ দাবি করে বলেন, “ঘর সংস্কার হচ্ছে, কেন হচ্ছে এ সব পর্যটকদের ভাল ভাবে বুঝিয়ে বলা হয়েছে। এতে ওঁরা কিছু মনে করেননি, পর্যটনেরও ক্ষতি হয়নি।”
রবিবাবু যাই দাবি করুন না কেন, পর্যটকরা কিন্তু ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন। অমিতবাবুর অভিযোগ, “সরকারি কটেজের একটি ডিলাক্স রুমের ভাড়া বাবদ ১৭০০ টাকা নেওয়া হয়েছে। তার ওপর বাড়তি পরিষেবা করও ছিল। সেখানে বেসরকারি যে রিসর্টে আমাদের রাখা হল, তার ঘর ভাড়া ১২০০ টাকা। মোট চারটি ঘর বুকিং ছিল। ঘর প্রতি ৫০০ টাকা ক্ষতি হল। সেই টাকা কিন্তু আমরা ফেরত পাইনি।” আরেক পর্যটক সন্দীপ সরকার বলেন, “আমাদের বুকিং যখন আগাম নেওয়া হয়েছে, তখন বাতিল করার বিষয়টিও আগে থেকে জানাতে হত। বেসরকারি রিসর্টে থাকতে চাইলে আমরা একমাস আগে থেকে সরকারি বাংলোতে থাকার চেষ্টাও করতাম না।”
কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর সফর হবে বলে জানা থাকলেও, কেন পর্যটকদের বুকিং নেওয়া হল? নিগম সূত্রের খবর, গত ২৪ মার্চেই মুখ্যমন্ত্রীর সুনতোলাখোলায় আসার কথা ছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে সফর পিছিয়ে যায়। সে কারণেই মার্চের শেষের দিনগুলোতে অনলাইনে বুকিং নিয়ে নেওয়া হয়েছিল। ডুয়ার্সের ট্যুর অপারেটর সন্তু চৌধুরী বলেন, “আগে থেকে জানিয়ে দিলেই এই বিপত্তি হত না। এমন ঘটনা পর্যটকেরা ভাল ভাবে নেন না।”
এদিকে সরকারি বাংলো ছাড়াও সুনতালেখোলার বেসরকারি রিসর্ট বা হোম স্টে গুলিতেও মুখ্যমন্ত্রীর সফরের একদিন আগে থেকেই পুলিশ-প্রশাসন ঘর বুক করে নিয়েছে। স্থানীয় হোমস্টের মালিক সন্তোষ ভুজেল, আরবি গুরুঙ্গ, দীপক রাহারা জানান পুলিশ আধিকারিকেরা থাকবেন বলে বেসরকারি সব ঘরই চার দিনের জন্যে বুক করে রাখা হয়েছে। রবিবার তাই অনেক পর্যটকই ঘর না পেয়ে ফিরে গিয়েছেন। ডুয়ার্স সফরে মুখ্যমন্ত্রী একাধিকবার এলেও সুনতালেখোলাতে মুখ্যমন্ত্রী আগে কখনও আসেননি। মুখ্যমন্ত্রী আসছেন জেনেই সুনতালেখোলাকে সাজিয়ে তুলতে দ্রুত উদ্যোগী হয় প্রশাসন। সুনতালেখোলা ঝোরার ওপর ঝুলন্ত সেতু সংস্কার করে রঙ করা হয়েছে। সামসিং থেকে সুনতালেখোলা ৫ কিমি রাস্তায় গর্তের ওপর পিচের প্রলেপ যেমন পড়েছে তেমনই মোবাইলের নেটওয়ার্কের সমস্যা কাটাতে বেসরকারি মোবাইল নেটওয়ার্ক সংস্থার টাওয়ারও বসিয়ে দেওয়া হয়েছে সুনতালেখোলায়।
সোমবার সন্ধ্যায় সুনতালেখোলার কটেজে চলে আসার পর মঙ্গলবার সুনতালেখোলাতেই মুখ্যমন্ত্রীর সারাদিন কাটানোর কথা। আগামী বুধবারে সুনতালেখোলা থেকে আলিপুরদুয়ার জেলার বীরপাড়া লাগোয়া এথেলবাড়িতে গিয়ে একটি সরকারি অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন মুখ্যমন্ত্রী।