প্রতিবাদ: বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ পড়ুয়াদের। বুধবার। নিজস্ব চিত্র
জেএনইউয়ের ছায়া এবার উত্তরবঙ্গ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে।
বিজেপি সাংসদের সামনে সিএএ নিয়ে প্রতিবাদ জানানোয় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ঢুকে পড়ুয়াদের উপর হামলার অভিযোগ উঠল একদল বিজেপি কর্মী-সমর্থকের বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার বিকেলের ওই ঘটনার জেরে বুধবার উত্তাল হয়ে ওঠে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর। নিরাপত্তা ও অভিযুক্তদের গ্রেফতারের দাবিতে এ দিন পরীক্ষা বয়কট করেন ছাত্রছাত্রীরা। দিনভর ক্যাম্পাসের ভিতরে চলে অবস্থান বিক্ষোভ। যদিও বিজেপির দাবি, পরিকল্পিত ভাবে এমন আন্দোলন করে মিথ্যে অভিযোগ তোলা হচ্ছে।
পুণ্ডিবাড়িতে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে কৃষি মেলার উদ্বোধন ঘিরে ঘটনার সূত্রপাত। মঙ্গলবার বিকেলে মেলার উদ্বোধন করেন জলপাইগুড়ির বিজেপি সাংসদ জয়ন্ত রায়। ওই সময় সাংসদের সামনে সারা বাংলা তৃণমূল শিক্ষাকর্মী সমিতির সদস্যেরা বিক্ষোভ দেখানো শুরু করেন। তাঁদের অভিযোগ, মেলা কমিটিতে সমিতির কোনও প্রতিনিধি রাখা হয়নি। উদ্বোধনস্থলে ওই বিক্ষোভের জেরে মেলায় উত্তেজনা বাড়তে থাকে। এর কিছুক্ষণ পরেই সাংসদের উপস্থিতিতেই মেলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল ছাত্র ‘সাংসদ গো ব্যাক’ ধ্বনি দিতে শুরু করেন। তাঁরা এনআরসি এবং নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরুদ্ধেও স্লোগান দেন। অভিযোগ, বিক্ষোভ চলাকালীন আধঘণ্টার মধ্যে মেলা চত্বরে ঢুকে পড়ে হামলা চালান স্থানীয় একদল বিজেপি কর্মী-সমর্থক। মেলার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান গেট খোলা ছিল। সেই সুযোগে অনেকেই ভেতর ঢুকে যায়। ছাত্রছাত্রীদের অভিযোগ, স্থানীয় একজন বিজেপি নেতার নেতৃত্বে বেশ কয়েকজন মুখে কাপড় বেঁধে লাঠি নিয়ে ক্যাম্পাসে ঢুকে পড়ে। ছাত্রদের উপরে হামলা করে তারা। পাথর ও ঢিল ছোড়া হয় ছাত্রছাত্রীদের লক্ষ্য করে। ঢিলের আঘাতে প্রীতম বর্মণ নামে এক ছাত্রের বাঁহাতে চোট লাগে বলে অভিযোগ। আহত হয় আর এক ছাত্রও। প্রীতম বলেন, “বাইরে থেকে প্রচুর ঢিল ছুড়তে শুরু করে দুষ্কৃতীরা। বেশ কয়েকজন ভিতরে ঢুকে যায়। আমরা সবাই পিছনের দিকে চলে যাই। একটি ঢিল আমার হাতে এসে লাগে।” টিএমসিপির বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিটের নেতা কৌশিক নন্দী বলেন, “ক্যাম্পাসের ভিতরে সেই সময় অনেকেই ছিলেন। পুলিশও ছিল। তার পরেও হামলা হয়েছে। তাহলে নিরাপত্তা কোথায়?” বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার শুভেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “অভিযোগ খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
অভিযোগ, কৃষি মেলার আমন্ত্রণপত্রে উদ্বোধক হিসেবে বিজেপি সাংসদ জয়ন্ত রায়ের নাম ছিল না। সূত্রের খবর, এ দিন মেলায় ওই সাংসদকে উদ্বোধন করতে দেখে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন তৃণমূল শিক্ষাকর্মী সমিতির সদস্যেরা। তাঁদের অভিযোগ, সমিতির কোনও প্রতিনিধি কমিটিতে নেই। অথচ বিজেপি সাংসদকে আচমকা ডেকে আনা হল। সাংসদ এ দিন বলেন, “আমি আমন্ত্রিত হয়েই সেখানে গিয়েছিলাম। উপাচার্য়, জেলাশাসক সেখানে ছিলেন। তাঁদের উপস্থিতিতেই ফিতে কেটে মেলার ভিতরে যাই। সেই সময় আমাকে ঘিরে স্লোগান দেওয়া হয়।” তাঁর আরও অভিযোগ, তাঁর গাড়ি আটকানোর চেষ্টা হয়। সেই সময় স্থানীয় বাসিন্দারা কয়েকজন তাঁকে চিনতে পেরে তাঁর সঙ্গে কথা বলেন। হামলা হয়নি।
এ দিন ছাত্রছাত্রীদের পাশাপাশি তৃণমূল শিক্ষাকর্মী সমিতিও আন্দোলনে নামে। বিজেপি দাবি করেছে, পরিকল্পিত ভাবে আন্দোলন করে মিথ্যে অভিযোগ আনা হচ্ছে। সাংসদকে ঘিরে ধরেই হেনস্থার চেষ্টা হয়েছিল। এই ঘটনা নিয়ে প্রতিক্রিয়ার জন্য উপাচার্য চিরন্তন চট্টোপাধ্যায়কে ফোন কার হলেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, এ দিন আন্ডার গ্র্যাজুয়েট এবং টেকনোলজি বিভাগের পরীক্ষা ছিল। পরীক্ষা বয়কট করেন ছাত্রছাত্রীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার প্রদ্যুৎকুমার পাল বলেন, “পরীক্ষা হয়েছে। কেউ পরীক্ষায় বসেননি।”