প্রতীকী ছবি।
একাদশ শ্রেণির এক ছাত্রীকে ভুল বুঝিয়ে বিয়ে করেছিল এক যুবক। সে যুবকের সঙ্গে এক দিন বাড়ি থেকে পালিয়ে যায় মেয়েটি। এর পরে, তার ঠাঁই হয়েছিল রাজস্থানের জয়পুরে। যখন ওই ছাত্রী বুঝতে পারে, পাচার চক্রের খপ্পরে পড়েছে সে, ততদিনে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। পুলিশ অবশ্য মোবাইল ট্র্যাক করতে করতে এক সময়ে ওই মেয়েটির কাছে পৌঁছয়। তাকে উদ্ধার করে ফিরিয়ে দেয় বাড়িতে। তবে ওই ছাত্রী ফিরলেও অনেক নিখোঁজ মেয়ের এখনও হদিস মেলেনি। অভিযোগ, কাউকে ভুল বুঝিয়ে বিয়ে করে, কাউকে কাজের টোপ দিয়ে ভিন্-রাজ্যে নিয়ে গিয়ে পাচার করে দেওয়ার একটি চক্র ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছে কোচবিহারে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গত এক বছরে কোচবিহার থেকে প্রায় ২৫০ জন মেয়ে নিখোঁজ হয়েছে। অনেককেই উদ্ধার করা হয়েছে। কোচবিহারের পুলিশ সুপার সুমিত কুমার বলেন, ‘‘সর্বত্র নজর রয়েছে। নির্দিষ্ট অভিযোগ হলেই, ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’’
কোচবিহার বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া জেলা। এক সময়ে এই জেলার গ্রামীণ এলাকায় শিশু ও নারীদের পাচারের একটি চক্র সক্রিয় ছিল। ধারাবাহিক ভাবে তা নিয়ে সচেতনতা শিবির এবং আইনি পদক্ষেপের জেরে, অনেকটাই কমে আসে পাচার। কিন্তু নতুন করে ফের ওই পাচার চক্র সক্রিয় হয়ে ওঠার চেষ্টা করছে বলে খবর। পর পর কয়েকটি ঘটনায় পুলিশের সন্দেহ আরও বেড়েছে।
পুলিশ সূত্রেই জানা গিয়েছে, মোবাইলের মাধ্যমে হরিয়ানার এক যুবক কোচবিহারের এক তরুণীর সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলে। পরে সে যুবক কোচবিহারে পৌঁছে ওই তরুণীকে বিয়ে করে হরিয়ানায় রওনা হয়। পরিবারের সদস্যেরাও ভেবেছিলেন, ওই যুবক আর্থিক ভাবে শক্তিশালী। তাই আপত্তি করেননি। পরে, পুলিশের সন্দেহ হওয়ায় ঘটনার তদন্ত শুরু হয়। ওই তরুণীকে উদ্ধার করা হয়। আবার এ ভাবেই ভিন্ রাজ্যে কর্মরত এক যুবক প্রতিবেশী তরুণীকে বিয়ে করে বাইরে নিয়ে যান। অনেকদিন ধরে তাঁদের খোঁজ নেই। চাইল্ড প্রোটেকশন অফিসার স্নেহাশিস চৌধুরী বলেন, ‘‘এমন বেশ কিছু ঘটনা আমাদের নজরে রয়েছে। এ বিষয়ে মেয়েদের আরও শিক্ষিত করা প্রয়োজন। সে চেষ্টাতেই নেমেছি।’’
ন্যাশনাল ফ্যামিলি হেল্থ সার্ভে (২০১৯-২১) অনুযায়ী, কোচবিহারে ২৬.৭ শতাংশের মতো মেয়ে দশ বছর বা তার বেশি সময় পড়াশোনা করছে। বাকিরা আগেই স্কুলছুট হয়ে পড়ছে। আবার ওই সমীক্ষা অনুযায়ী, জেলায় নাবালিকা বিয়ের হার ৪৬ শতাংশের উপরে। অনেকেই মনে করেন, জেলার একটি বড় অংশের বাসিন্দা অর্থনৈতিক ভাবে দুর্বল। তাঁদের একটি অংশ ভিন্-রাজ্যে পরিযায়ী শ্রমিক হিসাবে কাজ করেন। শিক্ষা ও আর্থিক দুর্বলতা পাচারের মতো অপরাধের হার বাড়িয়ে দেয়।
একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সম্পাদক মইনুল হক বলেন, ‘‘বর্তমানে নারীশিক্ষার হার অনেকটা বেড়েছে। কিন্তু এ ধরনের অপরাধেরবিষয়েও নারীদের শিক্ষিত করা প্রয়োজন।’’ জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘এখন মাধ্যমিক পরীক্ষায় ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের সংখ্যা বেশি থাকে। পরের দিকে কিছু স্কুলছুট হলেও, পরিস্থিতি পাল্টাতে শুরু করেছে।’’