দইও কবে কৌলীন্যের কদর পাবে, আশায় গঙ্গারামপুর

এ রাজ্য রসগোল্লার উপরে জিআই ট্যাগের অধিকার পাওয়ার পরে আশায় বুক বাঁধছেন গঙ্গারামপুরের দই প্রস্তুতকারীরাও। তাতে এখানকার দইয়ের কদর ও জনপ্রিয়তা আরও বাড়বে।

Advertisement

অনুপরতন মোহান্ত

বালুরঘাট শেষ আপডেট: ১৬ নভেম্বর ২০১৭ ০২:০২
Share:

অপেক্ষা: গঙ্গারামপুরের দইয়ের জন্যও জিআই ট্যাগ দাবি বাসিন্দাদের। নিজস্ব চিত্র

প্রাথমিকের শিশুপাঠ্যেই রয়েছে—‘দই খেয়ে নাও ভর্তি বাটি, হজম হবে পরিপাটি’। গরমের দিনে শেষ পাতে সেই দইয়ের স্বাদ পেতে চান না, এমন লোক খুব কমই আছেন। আর সেই দই যদি হয় গঙ্গারামপুরের। তা হলে তো, ষোলো আনার মধ্যে আঠারো আনা প্রাপ্তি। কেননা, স্বাদে ও গুণমানে দক্ষিণ দিনাজপুরের গঙ্গারামপুরের ‘খাসা দই’ অতুলনীয়। তাই শীতকালেও শেষ পাতে গঙ্গারামপুরের দই পড়লে অনেকেই আপত্তি করেন না।

Advertisement

এ রাজ্য রসগোল্লার উপরে জিআই ট্যাগের অধিকার পাওয়ার পরে আশায় বুক বাঁধছেন গঙ্গারামপুরের দই প্রস্তুতকারীরাও। তাতে এখানকার দইয়ের কদর ও জনপ্রিয়তা আরও বাড়বে। বালুরঘাটের সাংসদ অর্পিতা ঘোষও মনে করেন, গঙ্গারামপুরের দইয়ের জিআই ট্যাগের উদ্যোগ হলে দই শিল্প আরও বিস্তার লাভ করবে। গরুর দুধ বিক্রি থেকে দই তৈরি শিল্পেও কর্মসংস্থান বাড়বে। এই প্রসঙ্গে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী বাচ্চু হাঁসদা বলেন, ‘‘খুব শীঘ্রই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রতিটি বাড়ি পিছু একটি করে গরু বিতরণ প্রকল্প চালু করতে চলেছেন। এর মাধ্যমে পরিবারগুলি কিছুটা আর্থিক রোজগারের একটা সুযোগ পাবেন। দুধের বাজার ও জোগান বাড়বে। দই ও মিষ্টি তৈরি করে বাড়তি বাজারের সম্ভাবনার পাশাপাশি দামেও সামঞ্জস্য আসবে।’’

আরও পড়ুন: বাঙালির রসগোল্লা আবিষ্কার পর্তুগিজদের হাত ধরে? জেনে নিন

Advertisement

বিহার সহ পশ্চিমবঙ্গের কিছু এলাকায় মোষের দুধ দিয়ে দই তৈরির প্রচলন রয়েছে। তবে খাঁটি গরুর দুধের তৈরি দইয়ের সেই স্বাদ পেতে একটি বার গঙ্গারামপুরের নয়াবাজার এলাকায় ঢুঁ মারতেই হবে। কেন না ওটিই অন্যতম বড় দইয়ের বাজার। সেখানে নিতাই ঘোষ, নেপাল ঘোষ, ব্রজেন ঘোষেরা ঝাঁকা নিয়ে বসে দইয়ের পসরা সাজিয়ে তৈরি রয়েছেন। ঢিমে আঁচে খাঁটি গরুর দুধ জ্বাল দিয়ে তৈরি খাসা দই, ক্ষীর দই, সাদা মিষ্টি দই এবং টক দই—চার রকমের দইয়ের স্বাদ ও ঘ্রাণ ভিন্ন রসনার তৃপ্তি এনে দেয়। বালুরঘাটের তৈরি দইও স্বাদে অতুলনীয়, তবে অনেকটা সস্তা এ জেলার নয়াবাজার সহ গঙ্গারামপুরের দই। ফলে এর ব্যবসা উত্তরবঙ্গ জুড়ে ছড়িয়েছে।

অম্ল মধুর স্বাদের এক হাঁড়ি খাসা দই কিনে ৭ দিন রেখে খাওয়া যায়। বাড়িতে দই তৈরি করে সরাসরি নিজেরাই বাজারে ঝাঁকা পেতে বিক্রি করেন কারিগরেরা। নয়াবাজারের দোকানে ৭০-৮০ টাকা কেজি দরে দই বিক্রি হয়। বাপ-ঠাকুর্দার আমল থেকে বাজারে দইয়ের হাঁড়ি নিয়ে বসেন তাঁরা। গঙ্গারামপুর থেকে প্রতি রাতে বাসের মাথায় চেপে দইয়ের হাঁড়ি পাড়ি দেয় রায়গঞ্জ, শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়িতে। পাশাপাশি অনুষ্ঠান বাড়ির বায়নাও সামলান তাঁরা।

ভাল বাজারের অভাবে গঙ্গারামপুরের দইশিল্পের দৈন্যদশা রয়েই গিয়েছে। নিতাই, নেপালবাবুদের বক্তব্য, ‘‘স্বাদ ও গন্ধের বিচারে গঙ্গারামপুরের দই জিআই ট্যাগ পেলে মিষ্টির জগতে অন্য মাত্রা যোগ হবে। দেশ-বিদেশে কদর বাড়লে ব্যবসাও বৃদ্ধি পাবে।’’ রসগোল্লা তার কৌলীন্যের কদর পেয়েছে। দইয়ের ভাগ্যে সেই শিকে কবে ছেঁড়ে, সেই আশায় গঙ্গারামপুরের দই তৈরির সঙ্গে যুক্ত শতাধিক মানুষ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement