ডেঙ্গি কমেছে— এই দাবি তুলে রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর ও শিলিগুড়ি পুরসভার সাফল্যের দাবি চলছেই। কিন্তু জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা রোজই বাড়ছে। শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতাল এবং উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ মিলিয়ে রোজ গড়ে ২০০ জন জ্বরের রোগী ভর্তি হচ্ছেন। পরিস্থিতি এমনই যে, শয্যার অভাবে এখন করিডরের মেঝেতে পড়ে রয়েছেন অনেকে। এ দিন উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল পরিদর্শনে আসেন হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান গৌতম দেব। তিনি নিজের চোখেই দেখে যান, বাস্তব পরিস্থিতি কী।
হাসপাতাল সূত্রের খবর, ৫৯৯ শয্যার হাসপাতালে এখন মোটামুটি ১২০০ রোগী রয়েছেন। ফলে সনিসুর আলি, খোকন দাসদের ঠাঁই রয়েছে করিডরের শয্যাতেই। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, সেখানে এখন ৪ জন ডেঙ্গি আক্রান্ত রোগী রয়েছে। তার মধ্যে ৩ জনই শিশু-কিশোর। অন্য জন আইসিইউতে ভর্তি। তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক। চিকিৎসকদের একাংশের মতে, রিপোর্টে অনেক ক্ষেত্রে ধরা পড়তে দেরি হলেও না-পড়লেও রোগীদের ডেঙ্গি হতেই পারে। ইতিমধ্যেই ডেঙ্গি এবং ওই রোগের উপসর্গ নিয়ে শিলিগুড়িতে অন্তত ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, তাদের মধ্যে ৪ জনের রক্তে ম্যাক এলাইজা পরীক্ষায় ডেঙ্গির জীবাণু মিলেছে। বাকিদের ভাইরাল জ্বরে এবং অন্যান্য উপসর্গে মৃত্যু বলে দাবি স্বাস্থ্য দফতরের।
পর্যটনমন্ত্রী বলেন, ‘‘ডেঙ্গি কমছে কি না, এখনই বোঝা যাচ্ছে না। অনেক ক্ষেত্রে জ্বর নিয়ে রোগীরা আসছেন। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালের উপর রোগীর চাপ রয়েছে।’’ একই সঙ্গে তাঁর দাবি, ‘‘তবে পার্শ্ববর্তী রাজ্য এবং দেশ থেকেও রোগীরা চিকিৎসা করাতে আসেন এখানে। কাউকে ফিরিয়ে দেওয়া যায় না।’’ বিষয়টি সামনে রেখে তিনি শয্যা বাড়ানোর প্রসঙ্গও তুলেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘শয্যার সংখ্যা অন্তত হাজার হলে সমস্যা কিছুটা মিটবে। সে ব্যাপারে স্বাস্থ্য দফতরের সঙ্গে কথা বলব।’’
সম্প্রতি স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিকর্তা দেবাশিস ভট্টাচার্য হাসপাতাল পরিদর্শনে এসেছিলেন। শয্যা সঙ্কট নিয়ে তিনিও একমত। এমনকী, শয্যা বৃদ্ধির বিষয়ে যে সব সমস্ত নথিপত্র পাঠানো জরুরি, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে তা পাঠাতেও বলেছেন। তবে ফিভার ওয়ার্ডে জ্বরের রোগীর সংখ্যা কম। সেখানে বেশ কিছু শয্যা ফাঁকাও পড়ে রয়েছে। অথচ করিডরের রোগীদের একাংশকে কেন সেখানে জায়গা দেওয়া হচ্ছে না, তা নিয়ে চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্য কর্মীদের একাংশও প্রশ্ন তুলেছেন।
শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতাল থেকে জ্বরে আক্রান্ত অনেক রোগীকে রেফার করা হচ্ছে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে। তাতেও বাড়তি চাপ পড়েছে। বিশেষ করে ডেঙ্গি বা জ্বরের যে সমস্ত রোগীর প্লেটলেট কমছে, তাদের মেডিক্যালে রেফার করা হচ্ছে। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে গিয়েও প্লেটলেট পেতে সমস্যার কথা কথা জানিয়েছেন কয়েকটি রোগীর পরিবার। রক্তদাতা না দিলে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্ক থেকে প্লেটলেট মিলছে না বলে অভিযোগ। যদিও মন্ত্রীর দাবি, প্লেটলেট পর্যাপ্তই রয়েছে।