বটলিং প্ল্যান্ট থেকে সরবারহকারীর গুদামে পৌঁছনোর পথেই সিলিন্ডার থেকে চুরি হয়ে যাচ্ছে রান্নার গ্যাস। মঙ্গলবার গভীর রাতে শিলিগুড়ি লাগোয়া সুকনা এলাকায় অভিযান চালিয়ে এমনই তথ্য হাতে এসেছে বলে পুলিশের দাবি। ভর্তি সিলিন্ডারে পাইপ লাগিয়ে ফাঁকা সিলিন্ডারে গ্যাস ঢোকানো হচ্ছে খবর পেয়ে পুলিশ অভিযান চালায়। পুলিশের দাবি, অভিযানের আগেই গ্যাস ‘চুরি’র কাজ শেষ হয়ে গিয়েছিল। তবে ট্রাকে তল্লাশি চালিয়ে বেশির ভাগ সিলিন্ডার সিল খোলা অবস্থায় দেখে, পুলিশ ট্রাকটি আটক করে। ট্রাক চালককেও আটক করা হয়েছে।
ঘটনাটি যাচাইয়ের জন্য ইন্ডিয়ান অয়েল কর্তৃপক্ষকে জানায় পুলিশ। বুধবার দুপুরে ইন্ডিয়ান অয়েল কর্তৃপক্ষের তরফে সিলিন্ডারগুলি পরীক্ষা করে জানানো হয়েছে, ৫টি সিলিন্ডার থেকে গ্যাস চুরির প্রমাণ মিলেছে। এরপরেই পুলিশের তরফে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মামলা দায়ের করে সুরেন রাই নামে ট্রাক চালককে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। ধৃতের বাড়ি সুকনা এলাকাতেই। উদ্ধার হয়েছে প্লাস্টিকের সিলও। যাতে ইন্ডিয়ান অয়েল কতৃর্পক্ষ এবং রানীনগর প্ল্যান্টের ছাপ মারা রয়েছে।
প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশের দাবি, ট্রাক থেকে সিলিন্ডার নামিয়ে গ্যাস চুরির পিছনে একটি বড় চক্র রয়েছে। জলপাইগুড়ির রানীনগর প্ল্যান্ট থেকে দার্জিলিংগামী সিলিন্ডার বোঝাই বেশ কিছু ট্রাক রাতের বেলায় সুকনায় দাঁড়িয়ে থাকে। পুলিশের দাবি, সে কারণেই সুকনাকে কেন্দ্র করে এই চুরি চক্রটি সক্রিয় হয়েছে।
দার্জিলিঙের পুলিশ সুপার অখিলেশ চর্তুবেদী বলেন, ‘‘গোপন সূত্রে খবর পেয়ে অভিযান চালানো হয়। একজন গ্রেফতার হয়েছে। তবে ঘটনার সঙ্গে আরও অনেকে জড়িত রয়েছে। তদন্ত চলছে।’’
ভর্তি সিলিন্ডারের সিল খুলে পাইপ লাগিয়ে কিছু পরিমাণ গ্যাস বের করে ফের নতুন একটি সিল লাগিয়ে দেওয়ার জন্য একাধিক ব্যক্তির প্রয়োজন। পাইপ এবং যন্ত্রও প্রয়োজন। ধৃতকে জেরা করে সে সবের সূত্র মিলবে বলে পুলিশ দাবি করেছে। পুলিশ জানিয়েছে, রাতের বেলায় সাধারণত পাহাড়ি রাস্তায় সিলিন্ডার বোঝাই ট্রাক চলাচল করে না। সুকনা পৌঁছতে সন্ধ্যে হয়ে গেলে সেখানেই রাতে ট্রাকগুলি দাঁড়িয়ে থাকে। মঙ্গলবার সন্ধ্যার পরও সুকনার পেট্রোল পাম্প লাগোয়া ফাঁকা জায়গায় সিলিন্ডার বোঝাই ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। রাতের বেলায় সেই ট্রাকটিকে পাশের একটি শালবাগানে দেখেই, পুলিশ অভিযান চালায়। পুলিশের দাবি, জেরায় ধৃত ট্রাক চালক গ্যাস চুরির কথা স্বীকার করেছে। যদিও, ওই পরিবহণ সংস্থার কর্ণধার আনমোল প্রধান এ দিন দাবি করেছেন, ‘‘কোনও কারণে ভুল বোঝাবোঝির কারণে ঘটনাটি ঘটেছে। ট্রাক চালকের বাড়ি সুকনাতেই। ওঁর বাড়ির সিলিন্ডার শেষ হয়ে যাওয়ায়, একটি সিলিন্ডার ট্রাক থেকে নামাচ্ছিল। তাই হয়ত পুলিশ গ্রেফতার করেছে।’’
কী ভাবে গ্যাস চুরি চলছিল?
প্রথমে ভর্তি সিলিন্ডারের সিল খুলে রেগুলেটার এবং লাগানো হয়। পাইপের অন্যপ্রান্তে একটি পিন লাগানো থাকে। ফাঁকা সিলিন্ডারের মুখের ভিতরে পিন ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। এই পদ্ধতিতে রেগুলেটরের চাবি ঘুরিয়ে দিলেই গ্যাস বেরিয়ে ফাঁকা সিলিন্ডারে ঢুকতে শুরু করে। তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে একটি ১৪ কেজির সিলিন্ডার থেকে বড়জোর ২ কেজি গ্যাস বের করা হয়। এতে সিলিন্ডার থেকে যে গ্যাস চুরি হয়েছে তা সহজে বোঝা সম্ভব নয় বলে দাবি। এক একটি ট্রাকে দেড়শ থেকে ১৭০টি সিলিন্ডার বোঝাই করে গুদামে পৌঁছে দেওয়া হয়। গুদামে সিলিন্ডারগুলির ফের ওজন করা হয়। দেড়শটির মধ্যে ৫-৬টি সিলিন্ডারের ওজন এক-দেড় কেজি ওজন কম থাকলে তা নিয়ে সরবারহকারীরা খুব একটা মাথা ঘামান না বলে জানা গিয়েছে। সেই সুযোগেই দিনেরপর দিন এ ভাবে মাঝপথে গ্যাস চুরি চলছিল বলে অভিযোগ।
এলপিজি গ্যাস সরবারহকারী সংস্থাগুলির সংগঠন জানিয়েছে, জলপাইগুড়ির রানীনগরের বটলিং প্লান্ট থেকেই মালদহ ছাড়া উত্তরবঙ্গের বাকি জেলাগুলিতে গ্যাস সিলিন্ডার সরবারহ হয়। সংগঠনের সম্পাদক কৌশিক সরকার বলেন, ‘‘মাঝেমধ্যেই আমাদের বিভিন্ন সরবারহকারীরা কিছি সিলিন্ডারের ওজন কম বলে অভিযোগ করছিলেন। আমরা কর্তৃপক্ষকে তা জানাতামও। তাতে কোনও ফল মেলেনি। এ দিন শুনলাম পুলিশ গ্যাস চুরি ধরেছে। এমন আরও অভিযান হলে ভাল হয়।’’