অবাধ: মাল নদীর তীরে জঞ্জালের পাহাড়। বুধবার। ছবি: দীপঙ্কর ঘটক
বিসর্জনের ঘাটের ডান দিকে ২০০ মিটার জুড়ে জমে আবর্জনা। উচ্চতায় ৩০-৪০ ফুট। মাঝেমধ্যে আগুন জ্বালিয়ে স্তূপের উচ্চতা কমানো হয়। ওই পর্যন্তই। দশমীর রাতে মাল নদীতে বিসর্জনে বিপর্যয় ডেকে আনা হড়পা বানের পিছনে এই আবর্জনার স্তূপের কোনও ভূমিকা রয়েছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে ইতিমধ্যে। কিন্তু নদীতে বর্জ্য ফেলা থামায়নি পুরসভা। কবে তা থামানো সম্ভব হবে, সে প্রশ্নের জবাবও মেলেনি।
১৫ ওয়ার্ডের মালবাজার পুরসভার বাড়ি-বাড়ি থেকে বাঁশি বাজিয়ে আবর্জনা পুরকর্মীরা নিয়ে যান। প্রাথমিক ভাবে ওয়ার্ডের ভ্যাটগুলোতে তা জমে। এর পরে, ট্রাক্টরে করে সেই আবর্জনার স্তূপ সরাসরি মাল নদীতে পৌঁছে যায়। ১৯৮৯-তে স্থাপিত এই পুরসভার প্রথম দিন থেকে এমনই দস্তুর।
বর্জ্য জমে নদীর বয়ে যাওয়ার এলাকা সংকীর্ণ হচ্ছে। তার উপরে, যেহেতু এই নদী থেকে বালি-পাথর তোলা হয় সে ক্ষেত্রে নদীখাতের চেহারাও বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়াচ্ছে দিনে দিনে। মালবাজারের পরিবেশপ্রেমী স্বরূপ মিত্র সাম্প্রতিক বিপর্যয়ের অনেক আগে থেকে এই সমস্যা নিয়ে সরব। বুধবার তিনি বলেন, ‘‘নদীতে মাঝেমধ্যে হড়পা বান এলে নদীর গতিপথ এলোমেলো হয়। কিন্তু নদীর চর সক্রিয় ভাবে তা ঠিক করতে সাহায্য করে। শহরের আবর্জনার স্তূপ নদীর চরের সে চরিত্র নষ্ট করে ফেলছে।’’ পরিবেশবিদ সুভাষ দত্ত বলেন, ‘‘আমি কিছু বছর আগে মাল নদীর ঘাটে গিয়ে আবর্জনা ফেলার বহর দেখে এসেছি। এটা সভ্য সমাজে চলতে পারে না।’’
মালবাজার পুরসভায় ফের ক্ষমতায় এসেছে তৃণমূল। শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের দিন পুরপ্রধান স্বপন সাহা সরকারি নথি দেখিয়ে, সোনগাছি চা বাগান লাগোয়া এলাকায় ‘ডাম্পিং গ্রাউন্ড’-এর জন্য সবুজ সঙ্কেত মিলেছে বলে দাবি করেন। কিন্তু সে জমির দখল এখনও পায়নি পুরসভা। কেন? পুরপ্রধান বলেন, ‘‘আমরা নিরুপায়। জমি পেলেও, সেখানে বর্জ্য ফেলায় চা বাগান এলাকার বাসিন্দাদের বাধা দূর হচ্ছে না।’’
‘ডাম্পিং গ্রাউন্ড’-এর জমি দখলে নেওয়ার ব্যাপারে কি পুরসভাকে সাহায্য করতে পারে না স্থানীয় প্রশাসন?
মাল নদীর তীরে আবর্জনার স্তূপের বিষয় নিয়ে মহকুমাশাসক (মালবাজার) পীযূষ ভগবান রাও সালুঙ্কের বক্তব্য, ‘‘কেন ওই জমি দখলে নেওয়া যাচ্ছে না, সে বিষয়টি পুর-বোর্ডেরই দেখা উচিত।’’