অন্ত্যেষ্টি: নিজের বাড়ির পিছনে এখানেই সৎকার করা হল মৃত যুবকের দেহ। নিজস্ব চিত্র
টানা চব্বিশ ঘণ্টা টানাপড়েনের পরেও কোভিড হাসপাতালে মৃত যুবকের দেহ দাহ করতে পারলেন না তাঁর পরিজনেরা। শেষ পর্যন্ত মঙ্গলবার বিকেলে বাড়ির পিছনে মাটির নীচে পুঁতে ফেলা হল তাঁর দেহ।
অভিযোগ, সেই সময়ও প্রতিবেশীদের কাউকেই কাছে পেলেন না মৃত যুবকের বাড়ির লোকেরা। সবাই দাঁড়িয়ে থাকলেন বাড়ি থেকে অনেকটা দূরে।সূত্রের খবর, আলিপুরদুয়ার-২ ব্লকের চাপড়েরপাড়-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের বাসিন্দা ওই যুবক গত ১৮ জুন দিল্লি থেকে ফেরেন। কিছু উপসর্গ থাকায় তাঁকে তপসিখাতার হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। স্বাস্থ্য কর্তারা জানান, যুবকের দু’বার করোনা পরীক্ষার ফল নেগেটিভ আসে। বরং ওই যুবক যক্ষ্মায় আক্রান্ত বলে তাঁরা জানতে পারেন। যদিও তাঁর বাড়ির লোকেদের দাবি, করোনার প্রথম পরীক্ষার ফল পজ়িটিভ ছিল। এ দিকে সোমবার সন্ধ্যায় কোভিড হাসপাতালেই তাঁর মৃত্যু হয়।
অভিযোগ, তার পরেই শুরু হয় মৃতদেহ সৎকার নিয়ে টানাপড়েন।যুবকের ভাইদের অভিযোগ, দেহ নিয়ে তাঁরা প্রথমে নিউ আলিপুরদুয়ার শ্মশানে যান। কিন্তু সেখানে বাধা পান। এরপর চেকোর কাছে একটি নদীর ধারে তাঁরা দেহ সৎকার করতে চান। সেই মতো শববাহী গাড়িও সেখানে যায়। কিন্তু দেহ দাহ করার জন্য কাউকে পাননি। এই অবস্থায় মাঝরাতে জোর বৃষ্টি নামলে তাঁরা লোক জোগাড় করতে স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্যের বাড়িতে ছুটে যান। কিন্তু ততক্ষণে শববাহী গাড়ির চালক দেহ নিয়ে মর্গে চলে যান। অগত্যা দুই ভাই বাড়ি চলে যান।
মঙ্গলবার সকাল হতে না হতেই শুরু হয় ফের টানাপড়েন।
যুবকের এক ভাইয়ের অভিযোগ, ‘‘আমরা অন্তত তিন জায়গায় দেহ দাহ করার কথা ভাবি। কিন্তু সব জায়গাতেই আমাদের না বলে দেওয়া হয়। শেষ পর্যন্ত বাড়ির পিছনের জমিতে ভাইকে সমাধিস্থ করা হয়।’’ কিন্তু মর্গ থেকে দেহ বাড়ি নিয়ে যাওয়ার সময় বাধার মুখে পড়তে হতে পারে বলে যুবকের আত্মীয়েরা ভয় পান। ফলে দেহ মর্গেই পড়ে থাকে।
এই খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে তৃণমূলের জেলা সভাপতি মৃদুল গোস্বামী ও দলের নেতারা ছুটে যান। সবাইকে বোঝানোর পরে শেষ পর্যন্ত মর্গ থেকে দুই ভাই ওই যুবকের দেহ বাড়িতে নিয়ে আসেন।
আলিপুরদুয়ারের উপ মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সুবর্ণ গোস্বামী মঙ্গলবার বলেন, ‘‘মৃত্যুর পরেই আমরা দেহ বাড়ির লোকেদের হাতে তুলে দিই। তার পরের ঘটনা জানি না।’’
স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য রবীন্দ্র দাস এ দিন বলেন, ‘‘শ্মশানে দেহ দাহ করার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু কেউ রাজি হননি।’’ আলিপুরদুয়ারের পুলিশ সুপার অমিতাভ মাইতি বলেন, ‘‘শুরু থেকেই মৃতের পরিবারকে সব রকমের সহযোগিতার আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল।’’ এ দিকে ঘটনায় রাজনীতির রংও লেগেছে।
স্থানীয় তৃণমূলের অভিযোগ, বিজেপির নেতাদের উস্কানিতেই মর্গ থেকে ওই যুবকের দেহ নিয়ে যেতে এ দিন দেরি করছিলেন মৃতের বাড়ির লোকেরা। বিজেপির আবার পাল্টা দাবি, তৃণমূলের বাধাতেই দেহ সৎকারে বাধা পেতে হয়েছে মৃতের পরিজনদের।