সাক্ষাৎ: জলপাইগুড়ির পুলিশ সুপারের সঙ্গে দেখা করে দাবিপত্র দিলেন প্রাক্তন কেএলও জঙ্গিরা। নিজস্ব চিত্র।
সবে দিল্লির সঙ্গে আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছেন কেএলও প্রধান জীবন সিংহ। এর মধ্যে নতুন করে সক্রিয় হলেন প্রাক্তন কেএলও জঙ্গি ও লিঙ্কম্যানেরা। এ দিন এক দিকে কোচবিহারে তৃণমূল নেতা পার্থপ্রতিম রায়ের সঙ্গে দেখা করে স্বায়ত্তশাসনের দাবি তুললেন প্রাক্তন জঙ্গি ও লিঙ্কম্যানেরা। অন্য দিকে, জলপাইগুড়িতে কর্মসংস্থানের দাবি তুলে সরকারকে হুঁশিয়ারি দিয়ে পথে নামলেন আর এক দল প্রাক্তন জঙ্গি। তাঁদের বক্তব্য, চাকরি না পেলে পুরনো জঙ্গি জীবনে ফিরে যেতে হবে।
বিধানসভা ভোটে জেতার পরে সোমবার দ্বিতীয় বারের জন্য উত্তরবঙ্গ সফরে এলেন মুখ্যমন্ত্রী। এ বারে তিনি বৈঠক করবেন দুই দিনাজপুর ও মালদহ প্রশাসনকে নিয়ে। ঠিক সে দিনই প্রাক্তন কেএলও-রা নতুন দুই দাবি নিয়ে রাস্তায় নামলেন। এর আগের বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী বিশেষ করে কেএলও বিষয়ে নজর দিতে বলে গিয়েছিলেন পুলিশ-প্রশাসনকে। সে দিক থেকে দেখলে তাঁর সফরের প্রথম দিনই প্রাক্তন জঙ্গিদের তৎপরতা তাৎপর্যপূর্ণ। বিশেষ করে কিছু দিন আগে যেখানে দক্ষিণ দিনাজপুরে কেএলও-র এক জঙ্গি ধরা পড়েছিল। জীবনের ধর্মপুত্র দেবরাজ সিংহও দাবি করেছেন, উত্তরবঙ্গের আশি শতাংশ মানুষ এখনও তাঁর বাবার অনুগামী।
এ দিন কোচবিহারে তৃণমূল নেতা পার্থপ্রতিম রায়ের সঙ্গে দেখা করেন আত্মসমর্পণকারী কেএলও জঙ্গি ও লিঙ্কম্যানদের ‘ওয়েলফেয়ার সোসাইটি’-র সদস্যেরা। সংগঠনের পক্ষ থেকে, উত্তরবঙ্গের ছ’টি জেলা নিয়ে স্বায়ত্তশাসনের দাবি করা হয়। ওই ছ’টি জেলা এবং অসমের চারটি জেলা নিয়েই আলাদা রাজ্যের দাবি করে আসছে কেএলও। পার্থপ্রতিম অবশ্য সংগঠনের সদস্যদের ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়ন যজ্ঞে শামিল’ হওয়ার আবেদন জানান। পার্থপ্রতিম বলেন, “আত্মসমর্পণকারী কেএলও ও লিঙ্কম্যানদের চাকরির ব্যবস্থা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। রাজবংশী ভাষা অ্যাকাডেমি, রাজবংশী উন্নয়ন বোর্ড থেকে পুলিশে নারায়ণী ব্যাটেলিয়ন তৈরি করা হয়েছে। এখন তাই এমন (স্বায়ত্তশাসনের) দাবির যৌক্তিকতা নেই। তার পরেও তাঁরা মনে করলে মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি লিখতে পারেন।” সংগঠনের সভাপতি পুলস্থ্য বর্মণ বলেন, “অসমে আলোচনা প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আমরা চাই পশ্চিমবঙ্গেও তা হোক। মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েও আমরা ওই দাবি জানাব।” পঞ্চানন মোড় ও নিউ চ্যাংরাবান্ধায় আলাদা রাজ্যের দাবিতে ‘কেপিপি ইউনাইটেড’-এর পথ অবরোধও হয়।
এ দিনই জলপাইগুড়িতে একটি সমন্বয় মঞ্চ তৈরি করে প্রাক্তন কেএলও এবং লিঙ্কম্যানেরা দাবি করেছেন, তাঁরা মাসখানেক আগে ৪৪২ জনের একটি নামের তালিকা রাজ্য সরকারকে তুলে দিয়েছেন। সেই তালিকার সকলের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে বলে দাবি করা হয়েছে। তা না হলে এ দিন ফের জঙ্গি দলে ফিরে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তাঁরা। প্রাক্তন কেএলও সদস্য তথা মঞ্চের সম্পাদিকা জ্যোৎস্না রায়ের কথায়, “কাজ না পেলে আবার পুরনো পথে ফিরে যেতে পারেন আমাদের অনেকে।” যদিও জোৎস্না রায়েরা যাঁকে নেতা বলে মানেন, সেই জীবন সিংহ খোদ শান্তি আলোচনার জন্য মূল স্ত্রোতে ফিরতে চাইছেন। সে ক্ষেত্রে তাঁর নেতৃত্বে ফের আন্দোলনের হুমকিকে আদৌ গুরুত্ব দেওয়ার প্রয়োজন আছে কি না, সে প্রশ্ন উঠছে। জ্যোৎস্না এই প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে বলেছেন, “সংবাদমাধ্যম থেকে জানতে পেরেছি জীবন সিংহের সঙ্গে সরকারের আলোচনা হবে। তাঁর দাবি মানা হলে তিনি মূল স্রোতে ফিরবেন। সরকার যদি কোনও বিপ্লবীর সঙ্গে আলোচনায় বসে তাঁকে মূল স্রোতে ফেরাতে চায় তবে আমরা স্বাগত জানাই।” জীবনের সঙ্গে কি তাঁরা যোগাযোগ করবেন? জ্যোৎস্না জানান, সেটা এখনও ভাবেননি। তবে জীবন ডাকলে তাঁরা সেই ডাকে সাড়া দেবেন।
পুলিশ গোয়েন্দারা কেএলও-র এই তৎপরতা নিয়ে চিন্তিত। তাঁরা সব দিক খতিয়ে দেখতে শুরু করেছেন। জলপাইগুড়ির পুলিশ সুপার দেবর্ষি দত্তের বক্তব্য, “স্মারকলিপি পেয়েছি। যে তালিকা দেওয়া হয়েছে, সেটি খতিয়ে দেখতে হবে।” জেলা পুলিশ দাবি করেছে, এর মধ্যে জেলায় আড়াইশোরও বেশি প্রাক্তন কেএলও এবং লিঙ্কম্যানদের কর্মসংস্থান হয়েছে।