হাতির তান্ডব। — ফাইল চিত্র।
হাতির বিচরণভূমি বর্তমান স্থলজ স্তন্যপায়ীদের মধ্যে সব থেকে বেশি। হাতিকে জৈবিক বাধ্যবাধকতার জন্য প্রতিদিন ২৫ কিলোমিটার হাঁটতে হয়। হাতি যেহেতু দিনে প্রায় ৩০০ কেজি সবুজ ঘাস খায় আর ২০০ লিটার জল পান করে, তাই খাদ্য ও জলের জন্য তাকে লম্বালম্বি হাঁটতে হয়। এই জন্য হাতির প্রয়োজন বড় বন। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের বনের অবস্থা কী?
পশ্চিমবঙ্গের বনভূমির মোট আয়তন ১১,৭৪০ বর্গ কিলোমিটার। রাজ্যের ভূখণ্ডের ১৩.৩৮%। তবে বনভূমির বাইরে সবুজের আচ্ছাদন (এক হেক্টরের বেশি আয়তন) এবং বৃক্ষ আচ্ছাদন (এক হেক্টরের কম আয়তন) মিলেমিশে শতাংশ হল ২১.৩৯। অর্থাৎ, বনভূমির বাইরেও ৮.০১ % সবুজ আচ্ছাদন আছে। এই সবুজ আচ্ছাদনও রয়েছে ছড়িয়ে- ছিটিয়ে। বনভূমির এমন বিন্যাসে ২০০১ সালে উত্তরবঙ্গে ছিল ২৯২টি হাতি। সেখানে বর্তমানে হয়েছে ৫২৯টি। সঙ্গে যুক্ত হয়েছে রাজ্যের পশ্চিমাংশে আরও ১১৮টি হাতি। হাতির সংখ্যা যেমন বেড়েছে, সঙ্গে বেড়েছে মানুষের সংখ্যাও।
বিশেষজ্ঞেরা বলেন, বন্যপ্রাণীদের সঙ্গে মানুষের সাক্ষাৎ যত কম হবে, বন্য প্রাণীরা তত শান্ত থাকবে। কিন্তু হাতির সঙ্গে তা এখনও সম্ভব হচ্ছে না। খণ্ডিত বনাঞ্চলের এক খণ্ড থেকে অন্য খণ্ডে যাওয়ার পথে দিনে-রাতে বহু মানুষের সঙ্গে সাক্ষাৎ হচ্ছে। বনেও তারা শান্তিতে থাকতে পারছে না। কারণ, গ্রামীণ বাংলার৮৬% মানুষ বনজ জ্বালানি কাঠের উপরে নির্ভরশীল।
হাতিদের আবার স্মরণ শক্তি প্রখর এবং ওরা আত্মমর্যাদাপূর্ণ। প্রতিটি শারীরিক ও মানসিক ঘাত-প্রতিঘাতের ঘটনা মনে রাখে হাতি। নিজের অভিজ্ঞতায় জানি কিছু ঘটনা। যেমন এক ব্যক্তি রাতে কাঠেরদোতালা থেকে হাতির গায়ে প্রস্রাব করতেন। সেই ব্যক্তিকে এক দিন একা পেয়ে হাতি এমন ভাবে পিষে মারে যে তা ভাবতেও খারাপ লাগে। আবার এটাও দেখা গিয়েছে যে রাতে হাতি ঘর থেকে শিশুকে বার করে গাছের তলায় রেখে, ডুলির ধান খেয়ে চলেগিয়েছে নীরবে।
মোদ্দা কথা, গ্রাম বাংলার মানুষের জীবনের গুরুত্ব দিতে হলে হাতি ও মানুষের মধ্যে দেখা-সাক্ষাৎ কমাতে হবে। আর সেটা করতে হলে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাপ সামলাতে রাস্তা ও উড়ালপুল যেমন তৈরি হচ্ছে ঠিক তেমনি হাতিদের জন্য বহু আলোচিত হাতি-করিডরের আইনি স্বীকৃতি দিয়ে তার রূপায়ণ করতে হবে। তা ছাড়াও হাতিরা যে ৫০-৬০ প্রজাতির ঘাস, লতা ও মাঝারি উচ্চতার গাছ খায়, বাড়াতে হবে তার পরিমাণ। তবেই হাতি ওমানুষের জীবনের প্রতি যথাযথ সম্মান দেখানো হবে।
লেখক অবসরপ্রাপ্ত বনাধিকারিক পশ্চিমবঙ্গ বনসেবা