মৃত: বিমল রাভা। ফাইল চিত্র
বনকর্মীদের ছোড়া গুলিতে জলদাপাড়ার জঙ্গলে বনবস্তির বাসিন্দা এক যুবকের মৃত্যু হল। রবিবার রাতের এই ঘটনায় সোমবার উত্তেজনা ছড়াল জঙ্গল লাগোয়া মেন্দাবাড়ি মন্থরাম এলাকায়। এ দিন সকালে মন্থরাম বিট অফিসে ভাঙচুর চালায় উত্তেজিত এলাকাবাসী। ঘটনার জেরে এক বনকর্মীকে ‘ক্লোজ’ করেছে বন দফতর।
বন দফতর সূত্রের খবর, মৃতের নাম বিমল রাভা (৩৩)। বাড়ি উত্তর মেন্দাবাড়ির খড়িয়া বনবস্তিতে। পরিবার জানিয়েছে, প্রায় তিন-চার বছর থেকে তিনি মানসিক অসুস্থতায় ভুগছেন। তিনি রবিবার সন্ধ্যায় একটি গরু খুঁজতে জঙ্গলের ভিতরে ঢোকেন। বিমলের ছেলে সুমিতের অভিযোগ, ‘‘আমরা রাতে একটা অনুষ্ঠান বাড়িতে গিয়েছিলাম। বাড়ি ফিরে দেখি, বাবা ফেরেনি। সকালে খবর পাই, বাবাকে বনকর্মীরা গুলি করে মেরে ফেলেছে।’’
স্থানীয় সূত্রের খবর, এ দিন সকালে এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই এলাকার মানুষজন ক্ষোভে ফেটে পড়েন। অনেকেই মন্থরাম বিটের সামনে জড়ো হন। বিট অফিসে শুরু হয় ভাঙচুর। ভাঙচুর করা হয় বন দফতরের একটি গাড়িও। এরপর এলাকার বাসিন্দারা জড়ো হন কোদালবস্তি রেঞ্জে। গোলমালের আশঙ্কায় তার আগেই অবশ্য সেখানে কালচিনি থেকে বিশাল পুলিশবাহিনী পৌঁছে যায়। তার মধ্যেই শুরু হয় বিক্ষোভ। শামিল হন স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের পাশাপাশি উত্তরবঙ্গ বন জন শ্রমজীবী মঞ্চের নেতৃত্বও। স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করেন, রাস্তা ভুলে জঙ্গলে আটকে থাকা বিমল যখন বাড়ির কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিলেন, তখন বনকর্মীরা তাঁকে গুলি করেন।
তবে বনকর্তারা এ দিন সকাল থেকেই দাবি করেন, রবিবার মাঝরাতে জঙ্গলে রুটিন টহলদারিতে বেরিয়েছিলেন কোদাল বস্তি রেঞ্জের চার-পাঁচজন বনকর্মী। টহলদারির সময় বড়ডাবরি-৮ কম্পার্টমেন্টে গাছ পড়ার শব্দ পান তাঁরা। সেদিকে এগিয়ে যেতেই দেখতে পান অন্তত কুড়ি-পঁচিশজন কাঠ পাচারকারী তাঁদের ঘিরে ফেলেছে। জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানের ডিএফও কুমার বিমল বলেন, ‘‘কাঠ পাচারকারীরাই প্রথমে বনকর্মীদের উপর আক্রমণ করে। অন্ধকারে আত্মরক্ষার তাগিদে শূন্যে এক রাউন্ড গুলি চালান বনকর্মীরা।’’ বন দফতর সূত্রের খবর, এরপর কাঠ পাচারকারীরা সেখান থেকে পালিয়ে যায়। কিছুক্ষণ পর সেখানে তল্লাশি চালাতে গিয়ে তাঁরা দেখতে পান, গুলিবিদ্ধ অবস্থায় বিমল সেখানে পড়ে রয়েছেন। এরপর তাঁকে নিয়ে আলিপুরদুয়ার জেলা হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রওনা হন বনকর্মীরা। কিন্তু রাস্তাতেই তাঁর মৃত্যু হয়।
পরে এ দিন রাতের দিকে বন দফতরেরই একটি সূত্রের খবর, মৃত বিমলের কপাল ও বুকের ডান দিকে দুটি গুলির ক্ষত ছিল। যদিও ময়না তদন্তের রিপোর্ট হাতে না আসা পর্যন্ত এ বিষয়ে কিছু বলতে নারাজ বনকর্তারা। তবে বনকর্তাদের কারও কারও দাবি, বিমল ছররা গুলিতেই মারা গিয়েছেন।
এই ঘটনায় উত্তরবঙ্গের মুখ্য বনপাল (বন্যপ্রাণ) উজ্জ্বল ঘোষের নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি গড়ে সাতদিনের মধ্যে রাজ্যের প্রধান মুখ্য বনপালকে রিপোর্ট দিতে নির্দেশ দিয়েছেন বনমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। এ দিন আলিপুরদুয়ারেই ছিলেন রাজীব। তিনি বলেন, ‘‘এই ঘটনায় যে বনকর্মীর নাম উঠে আসছে, তাকে ক্লোজ করা হয়েছে।’’