ফাইল চিত্র
জঙ্গল ঘেঁষা নদীর ঠিক পাশে গাছের ডাল ও শুকনো পাতা দিয়ে ঢাকা জায়গাটি। শনিবার সকাল থেকে মাঝে মধ্যেই সেখানে ঘুরে যাচ্ছে বন দফতরের গাড়ি। স্বাভাবিকভাবেই তা কৌতূহল বাড়িয়েছিল মাত্র তিনশো মিটার দূরে থাকা বন বস্তির বাসিন্দাদের। বন দফতরের গাড়ি বেরিয়ে যেতেই ওই জায়গায় তাঁদের উকিঝুঁকি শুরু হয়ে যায়। তখনই নজরে আসে শুকনো পাতার আড়ালে রয়েছে একটি বন্যপ্রাণীর পায়ের ছাপ। উপরে ছেটানো সাদা রঙের গুঁড়ো।
দীর্ঘ ২৩ বছর পর গত শনিবার গভীর রাতে বক্সার জঙ্গলে প্রথম বাঘের ছবি ট্র্যাপ ক্যামেরায় ধরা পড়ে। তার পরে মেলে আরও স্পষ্ট ছবি। আর কোনও ছবি মিলেছে কিনা, জানায়নি বন দফতর। কিন্তু বনকর্তারা জানিয়েছেন, শনিবারের পর থেকে প্রায় রোজই বক্সার জঙ্গলের বিভিন্ন জায়গায় বাঘের পায়ের ছাপ মিলছে। ফলে এ দিন নদীর ধারে গাছের ডাল আর শুকনো পাতা দিয়ে ধাকা জায়গাটি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে— তবে কি এ বার বনবস্তির আশপাশ দিয়েও ঘুরছে বাঘটি?
স্থানীয় সূত্রের খবর, এ দিন বিকেলেই বন দফতরের আধিকারিকরা ওই বনবস্তির বাসিন্দাদের বাঘ নিয়ে সচেতন করেন। সেখানে বাসিন্দাদের কেউ কেউ পায়ের ছাপ নিয়ে প্রশ্নও তোলেন। বনবস্তির এক বাসিন্দার দাবি, সেই প্রশ্নের উত্তরে বন দফতরের আধিকারিকরা জানিয়েছেন, ওটা বাঘের পায়ের ছাপ হতেও পারে। যদিও রাজ্যের মুখ্য বনপাল (বন্যপ্রাণ) দেবল রায় এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তবে বক্সার এক শীর্ষ বনকর্তা জানান, পায়ের ছাপটি যথেষ্ট সন্দেহজনক। সে জন্য সেখান থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। কিন্তু তাঁর ব্যক্তিগতভাবে মনে হয়, ওটা বাঘের পায়ের ছাপ না-ও হতে পারে।
জাতীয় সড়ক থেকে তিনশো-চারশো মিটার দূরে আরেকটি বনবস্তির পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া একটি নদীর পাশেও বাঘের ছাপ পাওয়া গিয়েছে বলে দাবি সেখানকার বাসিন্দাদের একাংশের। ফলে ওই বনবস্তিতেও বাঘ নিয়ে আতঙ্ক ছড়িয়েছে।
বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, বক্সায় ১৫টি বনবস্তি রয়েছে। যার মধ্যে দুটো বনবস্তি তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। বাকিগুলিও তুলে দিতে চাইছেন বন দফতরের শীর্ষ পদাধিকারিকরা। কিন্তু কবে সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হবে, তা জানা নেই কারও। ফলে প্রশ্ন ওঠে, এর ফলে ভবিষ্যতে লালগড়ের মতো বক্সাতেও মানুষের সঙ্গে বাঘের সংঘাতের ঘটনা ঘটবে না তো? বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের ক্ষেত্র অধিকর্তা বুদ্ধরাজ সেওয়া অবশ্য জানান, বনবস্তির বাসিন্দাদের নিয়মিত বাঘ নিয়ে সচেতন করার কাজ চলছে। এলাকাগুলিতে কড়া নজরও রাখা হয়েছে।