মালদহের ভুতনির চর। —নিজস্ব চিত্র।
মালদহে আরও ভয়াবহ হল ভাঙন ও বন্যা পরিস্থিতি। ফের ভাঙনের আশঙ্কা মালদহের মানিকচকে। জলে ভাসছে গ্রামের পর গ্রাম। রবিবারই উত্তরবঙ্গে যাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রবিবার দুপুরে কলকাতা থেকে বাগডোগরা বিমানবন্দর হয়ে শিলিগুড়ি যাওয়ার কথা তাঁর। প্রশাসনিক সূত্রে খবর, শিলিগুড়ি পৌঁছে উত্তরবঙ্গের পরিস্থিতি নিয়ে জেলা প্রশাসনের আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করবেন তিনি। এখন সে দিকেই তাকিয়ে বন্যাবিধ্বস্ত মালদহ।
স্থানীয় সূত্রে খবর, দেড় মাস ধরে গঙ্গার জলে প্লাবিত হয়ে রয়েছেন ভুতনির চরের তিনটি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রায় দেড় লক্ষেরও বেশি বাসিন্দা। এখনও পর্যন্ত সরকারি হিসাবে ন’জন জলে তলিয়ে গিয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে গঙ্গার জলস্তর আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই এই মর্মে সতর্কতা জারি করা হয়েছে সেচ দফতরের তরফে। সামাজিক মাধ্যমে এলাকাবাসীকে সতর্কবার্তা দিয়েছেন মানিকচকের বিধায়ক সাবিত্রী মিত্রও। জানিয়েছেন, পরিস্থিতি উদ্বেগজনক হতে চলেছে, তবু সজাগ রয়েছে প্রশাসন।
প্রসঙ্গত, বিহারে ভারী বৃষ্টির কারণে জল আরও বাড়তে চলেছে গঙ্গায়। গঙ্গার অববাহিকা দিয়ে ২৬ লক্ষ কিউসেক জল প্রবাহিত হবে বলে জানিয়েছে সেচ দফতর। ফলে গঙ্গা নদীর জলস্তর এক মিটারের বেশি বৃদ্ধি পেতে পারে। এই পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য এলাকাবাসীকে তৈরি থাকার বার্তা দেওয়া হয়েছে। গভীর রাতে পরিস্থিতির কথা জেনে প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রীও।
শনিবারই মানিকচকের ভুতনির চর এলাকায় বন্যাবিধ্বস্ত এলাকা পরিদর্শনে আসেন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। একটি ছোট নৌকা করে সরকারি ত্রাণও পৌঁছে দেন। কিন্তু তা বিলি করার আগেই লুট হয়ে যায়। এদিকে, কয়েক ঘণ্টা পরে সেই অঞ্চলেই নৌকাডুবির খবর মেলে। সরকারি সূত্রে খবর, পাঁচ জন ছিলেন ওই নৌকায়। তাঁদের মধ্যে অন্তত তিন জন তলিয়ে গিয়েছেন। নিখোঁজদের খোঁজে ইতিমধ্যে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর কর্মীরা শুরু করেছেন তল্লাশি অভিযান। প্রসঙ্গত, শুক্রবারও প্লাবিত ভুতনি চরে এক জন তলিয়ে যান। এখনও তাঁর খোঁজ মেলেনি।
শনিবার সকাল থেকেই প্রশাসনের পক্ষ থেকে এলাকা থেকে বাসিন্দাদের সরে যাওয়ার জন্য মাইকে প্রচার চালানো হচ্ছে। এলাকার বাসিন্দা শিবু মণ্ডল জানান, পরিস্থিতি ভাল নয়। একতলা বাড়ি জলের তলায় চলে গিয়েছে। শিবু জানাচ্ছেন, দু’দিন আগে পাট ছাড়াতে গিয়ে তলিয়ে গিয়েছেন তাঁর ভাই। ‘‘প্রশাসন ব্যবস্থা নিচ্ছে, তবে শুখা মরসুমে কাজ শুরু করলে পরিস্থিতি এমন হত না’’, আক্ষেপের সুর তাঁর গলায়। এলাকারই আর এক বাসিন্দা মনোজ মহালদার জানাচ্ছেন, প্রশাসন কোনও গাড়ির ব্যবস্থা করেনি। নিজেরাই এলাকা ছাড়ছেন তাঁরা। এলাকার বাসিন্দা মনোজ মণ্ডল, নকুল মণ্ডলদের আবার অভিযোগ, ত্রাণ পাচ্ছেন না তাঁরা। এমন পরিস্থিতির জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকে দায়ী করেছেন মালদহের তৃণমূল কংগ্রেসের চেয়ারম্যান তথা রতুয়ার বিধায়ক সমর মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘৫৬ বছর পর নেপাল-বিহার সীমান্তের কোশি ব্যারাজের সমস্ত গেট খুলে দেওয়া হয়েছে। এটা বিজেপির চক্রান্ত। এক দিকে দক্ষিণবঙ্গের ডিভিসি, অন্যদিকে উত্তরবঙ্গে বিভিন্ন ব্যারাজের গেট খুলে বাংলাকে ভাসিয়ে দেওয়ার চক্রান্ত চলছে। রাজ্যের মানবিক মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রচুর ত্রাণের ব্যবস্থা করেছেন। প্রতিটি বাড়িতে ত্রাণ দেওয়া হয়েছে। কাউকে বঞ্চিত করা হয়নি।’’ অবশ্য মালদা উত্তরের বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মুর পাল্টা জবাব, ‘‘এটা রাজনীতির বিষয় নয়। প্রকৃতির সঙ্গে লড়াইয়ে কেউ কখনও জিততে পারে না। তবু আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। সেক্ষেত্রে কেন্দ্র হোক বা রাজ্য, সকলকেই সতর্ক থাকতে হবে।’’