ঝলসে গেলেন ঘুমের মধ্যেই

পুড়ে মৃত ১

যে ঝুপড়িতে এ দিন ভোর সাড়ে তিনটের সময়ে আগুন লাগে, সেটি ইংরেজবাজার শহরের ১২ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর বালুচর এলাকার মহানন্দা নদী সংলগ্ন জোড়া ট্যাঙ্কি এলাকায়।

Advertisement

অভিজিৎ সাহা 

ইংরেজবাজার শেষ আপডেট: ২৮ নভেম্বর ২০১৯ ০৩:০৯
Share:

লেলিহান: আগুনে জ্বলছে ঘরবাড়ি। ইংরেজবাজার শহরের জোড়া ট্যাঙ্কি এলাকায়। নিজস্ব চিত্র

বুধবার ভোর রাতে অগ্নিকাণ্ডের জেরে ঘুমন্ত অবস্থাতেই দ্বগ্ধ হয়ে মৃত্যু হল এক মহিলার। এই ঘটনায় ভস্মীভূত হয়ে গিয়েছে দশটি ঝুপড়ি বাড়ি। ঘটনাটি ঘটেছে মালদহের ইংরেজবাজার শহরের উত্তর বালুচরের জোড়া ট্যাঙ্কি এলাকায়। সরু গলির মধ্যে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় এলাকায় ঢুকতে পারেনি দমকলের ইঞ্জিন। স্থানীয় বাসিন্দাদের সহযোগিতায় মহানন্দা নদী থেকে জেনেরেটারের সাহায্য জল তুলে আগুন নেভান দমকল কর্মীরা। তাতে অনেকটা সময় লেগে যায়। স্থানীয়দের অভিযোগ, এর ফলে যেমন আরও প্রাণহানির আশঙ্কা ছিল, তেমনই পুড়ে খাক হয়ে গিয়েছে দশটি বাড়ির আসবাবপত্র, টাকাপয়সা, জামা-কাপড়— সব কিছু। বইপত্র, অ্যাডমিট কার্ড পুড়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছে দুই মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়িয়েছেন স্থানীয় কাউন্সিলর প্রসেনজিৎ দাস।

Advertisement

যে ঝুপড়িতে এ দিন ভোর সাড়ে তিনটের সময়ে আগুন লাগে, সেটি ইংরেজবাজার শহরের ১২ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর বালুচর এলাকার মহানন্দা নদী সংলগ্ন জোড়া ট্যাঙ্কি এলাকায়। প্রাথমিক ভাবে দমকলের অনুমান, শর্ট সার্কিট থেকে আগুন লাগে। পুলিশ জানিয়েছে, এই অগ্নিকাণ্ডে মৃতের নাম শেফালি বড়ুয়া (৫৫)। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শেফালিদের বাড়িতেই প্রথমে আগুন লাগে। সেই অভিঘাতে বাড়ির গ্যাস সিলিন্ডার ফেটে যায়। ঘরেই ঘুমিয়েছিলেন শেফালি। তিনি কিছু বোঝার আগেই আগুন তাঁকে গ্রাস করে, দাবি স্থানীয়দের। আশপাশের ঘরগুলি বাঁশ, চাটাইয়ে তৈরি হওয়ায় আগুন মুহূর্তের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। অনেক চেষ্টার পরে স্থানীয়রা শেফালিকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।

শেফালির স্বামী প্রভাত আগেই মারা গিয়েছেন। শেফালির চার ছেলেমেয়ে। তাঁরা সকলেই বিবাহিত। তিন মেয়ের মধ্যে দু’জন শেফালির বাড়িতেই থাকতেন। ছেলে কৃষ্ণ শ্বশুরবাড়ি বীরভূমে ঘুরতে গিয়েছেন। মহানন্দার জল বেড়ে যাওয়ায় ভিটে ছেড়ে বাঁধে আশ্রয় নিয়েছিলেন শেফালিরা। জল কমে যাওয়ায় ফের মহানন্দার পাড়েই ঘর বেঁধেছেন। তবে এখনও সেই বাড়িতে আসেননি তাঁর দুই মেয়ে। ফলে এ দিন বাড়িতে একাই ছিলেন শেফালি। তিনি অসুস্থ ছিলেন বলে দাবি পরিবারের লোকেদের। যার জন্য অগ্নিকাণ্ডের সময় উঠে বার হয়ে আসতে পারেননি। মৃতার মেয়ে বন্দনা সরকার, সীতা গুপ্তরা বলেন, “মা অসুস্থ বলে বাড়িতেই থাকতাম। বাড়ি ডুবে যাওয়ায় বাঁধের ধারে রয়েছি। ঘরবাড়ি মেরামত করে সপ্তাহখানেকের মধ্যে বাড়িতে যাওয়ার কথা ছিল।” তাঁদের আক্ষেপ, বাড়িতে থাকলে মাকে এ ভাবে মরতে হত না, ঠিক বার করে আনতেন তাঁরা। মালদহের পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া বলেন, “দেহটি ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। অগ্নিকাণ্ডের কারণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”

Advertisement

ঘণ্টাখানেকের চেষ্টায় এ দিন আগুন আয়ত্তে আসে। কিন্তু ততক্ষণে সোনিয়া মণ্ডল, দীপা বড়ালদের যা ক্ষতি হওয়ার হয়ে গিয়েছে। তারা এ বার মাধ্যমিক দেবে। তারা বলে, “আগুনের আঁচে ঘুম ভাঙে। তড়িঘড়ি ঘর থেকে বার হয়ে আসি। বইপত্র, অ্যাডমিট কার্ড— সব পুড়ে গিয়েছে। পরনের কাপড় ছাড়া কিছুই নেই।” মুরগি ব্যবসায়ী শিবু মণ্ডল বলেন, “ বাড়িতে দশটি মুরগি ছিল। একটিকেও বাঁচাতে পারিনি।” কাউন্সিলর প্রসেনজিৎ দাস বলেন, “সবার খাওয়া-পরার ব্যবস্থা করা হয়েছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement