কোচবিহার হাসপাতালে আগুন

হাসপাতাল সূত্রের দাবি, এ দিন অগ্নিকাণ্ডে কেউ জখম হননি। প্রশাসন জানিয়েছে, ঘটনার তদন্তে ১১ সদস্যের কমিটি করা হয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কোচবিহার শেষ আপডেট: ৩০ অগস্ট ২০১৯ ০৪:০৭
Share:

কোচবিহার হাসপাতালে আগুন। ফাইল চিত্র।

কেউ মা হয়েছেন চব্বিশ ঘণ্টাও হয়নি। কেউ আবার মাত্র দিন কয়েক আগে। বৃহস্পতিবার সকালে কোচবিহার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মাদার অ্যান্ড চাইল্ড হাব-এ (মাতৃমা) আচমকা কালো ধোঁয়া দেখে প্রথমেই তাঁরা বুকে জড়িয়ে ধরেন তাঁদের সদ্যোজাত সন্তানদের। কারও সন্তানকে ওই ভবনেরই নবজাতকের চিকিৎসার বিশেষ বিভাগে (এসএনসিইউ) রাখা হয়েছিল। সেই ভবনেরই একাংশে ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ায় আতঙ্ক ছড়ায়। সন্তান কেমন রয়েছে, সেই খোঁজে আকুল হয়ে ওঠেন অনেকে। সন্তানদের সঙ্গে সদ্য মা হওয়া সেই তরুণীদের নামিয়ে আনা হয় দোতলা, তিন তলার ওয়ার্ড থেকে। কয়েক জন বাসিন্দার কথায়, ওই ঘটনায় কিছু ক্ষণের জন্য কলকাতার আমরি কাণ্ডের মতো আতঙ্ক ছড়ায়।

Advertisement

হাসপাতাল সূত্রের দাবি, এ দিন অগ্নিকাণ্ডে কেউ জখম হননি। প্রশাসন জানিয়েছে, ঘটনার তদন্তে ১১ সদস্যের কমিটি করা হয়েছে। হাসপাতাল সূত্রের খবর, এ দিন মাতৃমা ভবনের দোতলায় বিদ্যুতের প্যানেল রয়েছে যে ঘরে, সেখানে কিছু যন্ত্রাংশে আগুন লাগে। পোড়া গন্ধ, ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ে অন্য ঘরেও। ঘরের বেশ কিছু সামগ্রী পুড়ে যায়।

ছড়িয়ে পড়ে ধোঁয়া। তাতে আতঙ্কিত রোগী ও পরিজনদের চিৎকার, কান্নাকাটি, হইচই শুরু হয়ে যায়। ভবনের দোতলা, তিন তলার ঘর থেকে সিঁড়ি ভেঙে রোগীদের বাইরে নামিয়ে আনা হয়।

Advertisement

রোগীর পরিজনরা তো বটেই ওই কাজে সাহায্য করেন চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীরাও। এলাকার বাসিন্দাদের অনেকেও উদ্ধার কাজে পাশে দাঁড়ান। তড়িঘড়ি ঘটনাস্থলে ছুটে যান জেলাশাসক সহ পুলিশ ও প্রশাসনের পদস্থ কর্তারা।

রোগীদের বাইরে বেরোতে সুবিধের জন্য খুলে দেওয়া হয় হাবের পিছন দিকের একটি দরজা। প্রায় আধ ঘণ্টার চেষ্টায় কোচবিহার দমকল কেন্দ্রের দু’টি ইঞ্জিন গিয়ে আগুন নেভায়। দমকল কর্তাদের প্রাথমিক অনুমান, বিদ্যুতের শর্ট সার্কিট থেকে আগুন লাগে।

চিকিৎসাধীন সকলেই অবশ্য হাসপাতালের অন্য ঘরে রাখার ব্যবস্থা করা হয়। কোচবিহারের জেলাশাসক কৌশিক সাহা বলেন, “অতিরিক্ত জেলাশাসক জ্যোতির্ময় তাঁতির নেতৃত্বে তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। ১৫ দিনের মধ্যে ওই ব্যাপারে কমিটি রিপোর্ট দেবে।” কোচবিহার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের এমএসভিপি রাজীব প্রসাদ বলেন, “কেউ আহত হননি। হাবের প্যানেল রুমে আগুন লেগেছিল। পূর্ত ও বিদ্যুৎ দফতরের সবুজ সঙ্কেত পেয়ে সবাইকে সন্ধেয় ওই ভবনেই ফের রাখার ব্যবস্থা হয়েছে।”

হাসপাতাল সূত্রে খবর, চলতি বছরেই মাতৃমা চালু হয়। এ দিন ১১১ জন সদ্যোজাত, শতাধিক মহিলা ভর্তি ছিলেন। ঘটনার জেরে আতঙ্কের রেশ কাটছে না তাদের অনেকের। গোপালপুরের বুলবুলি রায় বলেন, “বুধবার ছেলের মা হয়েছি। এই অবস্থার মধ্যেও ধোঁয়া দেখে ভয়ে পরিজনদের সঙ্গে বাচ্চাকে নিয়ে তিনতলা থেকে রাস্তায় নেমে আসি। ভাবলেই শিউরে উঠছি।” মাথাভাঙার আমিনা বিবি বলেন, ‘‘সবটাই যেন দুঃস্বপ্নের মতো। ছ’দিনের বাচ্চাকে নিয়ে কোনও মতে বাইরে বেরিয়েছি।” তবে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের তৎপরতারও প্রশংসা হয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement