প্রচারে ইশা খান। —নিজস্ব চিত্র।
নাম ঘোষণা করতেই জ্যেঠুর বিরুদ্ধে প্রচারে নেমে পড়লেন মালদহের কালিয়াচকের সুজাপুর বিধানসভা কেন্দ্রের কংগ্রেস প্রার্থী ইশা খান চৌধুরী। বুধবার সকাল থেকেই সুজাপুর বিধানসভা কেন্দ্রে ভোট প্রচার করলেন তিনি। একই সঙ্গে কংগ্রেসের প্রার্থী হিসেবে ভাইপোর নাম ঘোষণা হতেই প্রচারে আরও জোর দিলেন ওই কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী তথা কোতুয়ালি পরিবারের অন্যতম সদস্য আবু নাসের খান চৌধুরীও (লেবু)।
কোতুয়ালি পরিবারের এই দুই সদস্যই ভোটের ময়দানে ব্যক্তিগত কুৎসা করতে নারাজ। একে অপরের দলের বিরুদ্ধেই সুর চড়িয়ে ভোট ভিক্ষা করছেন তাঁরা।
ইশা খান চৌধুরী বলেন, ‘‘সুজাপুরের মানুষ আমাদের পরিবার থেকে কংগ্রেসের প্রার্থী চাইছিলেন। আর হাইকমান্ডও আমাকে এই আসন থেকে টিকিট দিয়েছে। এই আসনে আমাদের লড়াই কোন ব্যক্তির সঙ্গে নয়। আমরা এখানে শাসক দল তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়াই করছি।’’ তাঁর কথায়, তিনি তৃণমূলের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়ছেন। প্রচারে সেই বিষয়গুলিই মানুষের সামনে তুলে ধরা হচ্ছে।
ভাইপো ইশার প্রশংসা করেছেন আবু নাসের খান চৌধুরীও। তিনি বলেন, ‘‘ইশা বিধায়ক হিসেবে বৈষ্ণবনগরে ভাল কাজ করেছে। তবে কংগ্রেসে থেকে মানুষের জন্য কোন কাজ করা যাবে না। আমি দল ছেড়ে মাত্র কয়েক মাসের মধ্যে যা কাজ করেছি, তা কংগ্রেসে থেকে করতে পারেনি। সেই বিষয়গুলি প্রচারে মানুষের সামনে তুলে ধরছি।’’
লেবু বাবু মাস ছয়েক আগে দলবদল করে যোগ দিয়েছেন তৃণমূলে। প্রার্থী হওয়ার আগে থেকেই তিনি দলীয় নেতা কর্মীদের নিয়ে একাধিক বার বৈঠক করেছেন। প্রায়ই ছুটে গিয়েছেন সুজাপুরে। তবে ওই কেন্দ্রে পরিবারের আরেক সদস্য ইশা খান চৌধুরীকে কংগ্রেসকে প্রার্থী করায় প্রচারে আরও জোর দিয়েছেন দুই বারের বিধায়ক আবু নাসের বাবু। তিনি সুজাপুর বিধানসভা কেন্দ্রে ছয়টি বুথে কর্মীদের নিয়ে বৈঠক করেন। একই সঙ্গে বামনগ্রাম, মোসিনপুর সহ বিভিন্ন এলাকায় বাড়ি বাড়ি ভোট প্রার্থনাও করেন তিনি। অপর দিকে, বৈষ্ণবনগরের বিদায়ী বিধায়ক ইশা খান চৌধুরী দলীয় কর্মীদের নিয়ে সুজাপুর বিধানসভা কেন্দ্রে পাঁচটি গ্রামে গিয়ে বুথ স্তরের কর্মীদের নিয়ে বৈঠক করেন। সেই সঙ্গে ওই কেন্দ্রগুলিতে পায়ে হেঁটে ভোটারদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়েছেন তিনি। ফলে গনির গড়ে তাঁরই পরিবারের সদস্যদের লড়াই এখন থেকেই জমে উঠেছে। কোতুয়ালি পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, সুজাপুর বিধানসভা কেন্দ্রে ১৯৫২ সাল থেকে ১৯৭৭ পর্যন্ত বিধায়ক ছিলেন বর্ষিয়ান কংগ্রেস নেতা প্রয়াত গনিখান চৌধুরী। ১৯৭৭ সালের পর তিনি সাংসদ হয়েছিলেন। গনিখানের পর ওই কেন্দ্রের বিধায়ক ছিলেন তাঁরই বোন রুবি নূর। রুবি নূরের মৃত্যুর পর ওই কেন্দ্রে মাস তিনেকের জন্য বিধায়ক হন মৌসম নূর। তিনি সাংসদ হওয়ার পর সুজাপুর কেন্দ্রের বিধায়ক হন আবু নাসের খান চৌধুরী। তিনি ওই কেন্দ্রের দুই বারের কংগ্রেস বিধায়ক ছিলেন। ফলে ১৯৫২ সাল থেকে ২০১১ বিধানসভা নির্বাচন পর্যন্ত ওই কেন্দ্রের বিধায়ক হয়ে আসছেন কোতুয়ালি পরিবারের সদস্যেরাই। এবারও তাঁর ব্যতিক্রম হয়নি। রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য, দুই প্রার্থীর মধ্যে শেষ হাসি যেই হাসুক না কেন দখলে থাকবে সেই কৌতুয়ালি পরিবারই।