ধান আনলেও বিক্রি হল না। বালুরঘাটে মঙ্গলবার। ছবি: অমিত মোহান্ত।
১২ ঘন্টা বন্ধ সফল করতে রাস্তায় নেমে বিজেপির কর্মী সমর্থকেরা বিক্ষোভ দেখানোয় চরম দুর্ভোগে পড়েন ধান চাষিরা। মঙ্গলবার সরকারি ধান ক্রয় শিবির বালুরঘাটের কিসানমান্ডিতে ধান নিয়ে এসেও বেচতে পারেননি তাঁরা। রাস্তায় বিজেপি কর্মীদের পিকেটিংয়ের জেরে গাড়ি ভাঙচুরের আশঙ্কা করে এ দিন মিল মালিকরা বালুরঘাটের কিসানমান্ডিমুখো হননি বলে অভিযোগ।
কৃষক বন্ধ হলেও এ দিন ধান কেনা হবে বলে বালুরঘাটের মান্ডি থেকে সোমবার চাষিদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ফলে প্রায় ২২ কিলোমিটার দূরের বালুরঘাটের অমৃতখণ্ড অঞ্চলের পণ্ডিতপুর এলাকা থেকে ছোট চাষি রনিত লাহা, উমরানি লাহা, শ্রীদাম লাহারা ১০ কুইন্ট্যাল করে ৪০ কুইন্ট্যাল ধান নিয়ে সকালে কিসানমান্ডিতে হাজির হন। শ্রীদামের কথায়, তাঁরা চারটি ভুটভুটি ৬০০ টাকা করে মোট ২৪০০ টাকায় ভাড়া করে ধান নিয়ে আসার পর জানতে পারেন, মিল মালিকরা আসেনি, ধান কেনা হবে না। উমারানি বলেন, "ফের গাড়ি ভাড়া করে ধান ফেরত নিয়ে যাওয়ার মত সামর্থ্য আমাদের নেই। আবার সারারাত কিসানমান্ডিতে ধানের বস্তা পাহারা দিতেও চরম দুর্ভোগ।" আতান্তরে পড়ে শেষ অবধি রনিতকে পাহারায় রেখে তারা বাড়ি চলে যান।
এ দিন রনিত বলেন, "একেই কুয়াশা ঘেরা ঠান্ডার রাত। কিসানমান্ডিতে থাকার ব্যবস্থা নেই। নেই খাবার জল। এইভাবে আমাদের কেন বিপদে ফেলা হল?" বুধবার আগেই তাঁদের ধান কেনা হবে আশ্বাস দিয়ে ক্ষোভ কমানোর চেষ্টা করেন কিসানমান্ডি কর্তৃপক্ষ। জেলা খাদ্য নিয়ামক জয়ন্ত রায় জানান, ধান কেনার সব ঠিক ছিল। এ দিন সকাল ১০টা নাগাদ মিল মালিকরা জানান রাস্তায় অবরোধ, বিক্ষোভ হচ্ছে। ফলে ট্রাক ভাঙচুরের আশঙ্কায় তারা কিসানমান্ডিতে আসেননি। ওই খবর পেয়ে অনেক চাষিকে ফোনে ধান নিয়ে আসতে বারণ করা হয় বলে জয়ন্ত দাবি করেন। বালুরঘাটের ঠাকুরপুরা অঞ্চলের চাষি বিনয় পালের অবশ্য অভিযোগ, কিসানমান্ডি কর্তৃপক্ষকে সকাল থেকে ফোন করলেও মোবাইল সুইচড অফ ছিল। ফলে তাঁরা ধান নিয়ে এসে চরম দুর্ভোগের মুখে পড়েন।
মঙ্গলবার বামেদের সেভাবে দেখা না গেলেও বন্ধ সফল করতে রাস্তায় নেমে গোলমাল করার অভিযোগ ওঠে বিজেপি নেতৃত্বের বিরুদ্ধে। বালুরঘাটের তহবাজারে আনাজ বিক্রেতাদের দোকান বন্ধ করতে বিজেপির জেলা সাধারণ সম্পাদক বাপি সরকার হুমকি দেন বলে অভিযোগ। ওই ভিডিও ভাইরাল হতেই শোরগোল পড়ে। এ দিন জোড়া বন্ধের জেরে অবশ্য জেলায় বেসরকারি বাস চলেনি। ব্যবসা ক্ষেত্রে আংশিক প্রভাব পড়ে। বিজেপির রাজ্য কমিটির সদস্য নীলাঞ্জন রায় দাবি করেন, দলের তরফে রাস্তায় কোনও পিকেটিং ছিল না। মিল মালিক এবং কিসানমান্ডিতে কর্মরত খাদ্য দফতরের একাংশ কর্মীর গাফিলতিতে ধানচাষিদের হয়রানির মুখে ফেলা হল বলে নীলাঞ্জনের অভিযোগ।