গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যাল
মাধ্যমিকের মাকর্শিটে নাম যাঁর তুফান শেখ, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ও আধার কার্ডে তা-ই তুফান বসাক। নামের মতোই বদলেছে ছবিও।
এক-দু’জন নয়, ‘স্বামী বিবেকানন্দ স্কলারশিপ’-এর জন্য এমনই শতাধিক আবেদনপত্র জমা পড়েছে গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে। এমন ঘটনায় হতবাক বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
তাঁদের অভিযোগ, ‘ভুয়ো ছাত্র’ সেজে স্কলারশিপের টাকা হাতানোর একটি চক্র সক্রিয় মালদহে। সরকারি নথি জাল করে অনলাইনে আবেদন করছে সেই চক্র-ই। গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, ইতিমধ্যেই এ নিয়ে কমিটি গঠন করে তদন্ত শুরু করা হয়েছে।
প্রশাসনিক সূত্রে খবর, স্নাতকোত্তরের পড়ুয়াদের জন্য রাজ্য সরকার চালু করেছে ‘স্বামী বিবেকানন্দ স্কলারশিপ’। ওই স্কলারশিপে উপভোক্তা দু’বছরে ৪৮ হাজার টাকা পাবেন। দুর্নীতি রুখতে এই স্কলারশিপের জন্য অনলাইনে আবেদনপত্র জমা থেকে অন্য তথ্য যাচাই প্রক্রিয়া চালু করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সে জন্য গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা অনলাইনে নির্দিষ্ট ওয়েবসাইটে আবেদন করতে পারেন। কর্তৃপক্ষ অনলাইনেই সে সব তথ্য যাচাই করে পাঠাবেন উচ্চশিক্ষা দফতরে। সেখান থেকেই উপভোক্তাদের অ্যাকাউন্টে বছরে ২৪ হাজার করে টাকা দেওয়া হবে। অনলাইনে আবেদনকারীদের তথ্য যাচাই করতে গিয়েই দুর্নীতির বিষয়টি নজরে আসে গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রথমেই নজরে পড়েছিল গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের মাকর্শিট। তাতে দেখা যায়, পুরনো পরীক্ষা নিয়ামকের স্বাক্ষর। ভাল ভাবে দেখতেই স্পষ্ট হয়, আবেদনকারী দেওয়া সমস্ত নথিই ভুয়ো।
গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন আধিকারিক রাজীব পতুণ্ডি বলেন, ‘‘মাকর্শিট দেখেই প্রথমে সন্দেহ হয়। পরে দেখা যায় মাধ্যমিকের মাকর্শিটের নাম, ছবির সঙ্গে আধার এবং ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের নাম, ছবির মিল নেই। বাবার নামও ভুল। শতাধিক আবেদনপত্রে এমনই গরমিল ধরা পড়ে।’’ এর পরেই বিষয়টি কর্তৃপক্ষের নজরে আনা হয়। তিনি বলেন, “আবেদনকারীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া বলে আবেদনপত্রে উল্লেখ করেছিলেন। সেই বিভাগগুলিতে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াই নন।” খবর প্রকাশ্যে আসতেই হইচই পড়েছে শিক্ষামহলে। গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ সমূহের পরিদর্শক অপূর্ব চক্রবতী বলেন, ‘‘স্কলারশিপের জন্য ভুয়ো আবেদন দাখিলের ঘটনায় একটি চক্র যুক্ত রয়েছে বলে প্রাথমিক ভাবে অনুমান করা হচ্ছে। বিষয়টি প্রশাসনের নজরে নিয়ে আসা হবে।’’
ঘটনার তদন্তের দাবিতে সরব ছাত্রছাত্রীরাও। তাঁদের দাবি, ভুয়ো আবেদনকারীরা কোনও ভাবে স্কলারশিপের সুবিধা পেয়ে গেলে সাধারণ পড়ুয়ারা বঞ্চিত হবেন। দ্রুত ওই চক্রের সদস্যদের হদিস করা উচিত কর্তৃপক্ষের। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে বলে জানিয়েছেন মালদহের জেলাশাসক রাজর্ষি মিত্র।