উত্তরবঙ্গে হাতি করিডর: ১৫টি। শেষ সমীক্ষা: ২০০৩-০৪ সালে।
উত্তরবঙ্গে হাতিদের যাতায়াতের পথগুলি কী অবস্থায় রয়েছে, দেখে গেলেন আর্ন্তজাতিক পরিবেশ সংস্থার তিন বিজ্ঞানী। বেশ কয়েক দিন ধরে বন দফতরের আধিকারিকদের সঙ্গে নিয়ে হাতি করিডরগুলি দেখেছেন ‘আইইউসিএন’-এর (ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজ়ারভেশন অফ নেচার) প্রতিনিধিরা। সপ্তাহখানেক আগে, জলপাইগুড়ি-সহ উত্তরবঙ্গের হাতি করিডর পরিদর্শনের পর্ব শেষ হয়েছে।
উত্তরবঙ্গে হাতি করিডর শেষ চিহ্নিত হয়েছিল ২০০৩-০৪ সালে। প্রায় দু’দশক পরে, সেগুলি চরিত্র এবং আকৃতি, দুই-ই বদলেছে। বেশ কিছু পুরনো পথে হাতিরা যাতায়াত বন্ধ করে দিয়েছে। আবার চলাচলের জন্য কয়েকটি নতুন রাস্তাও খুঁজে বের করেছে তারা। ভারতে হাতি করিডরের সমীক্ষা করে ‘ওয়াইল্ড লাইফ ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়া’ তথা ‘ডব্লিউটিআই’। তারা বর্তমান হাতি করিডরের পরিবর্তন সংক্রান্ত কয়েকটি প্রস্তাব আর্ন্তজাতিক সংস্থাটিকে পাঠায়। তা খতিয়ে দেখতে বিজ্ঞানীরা এসেছিলেন বলে খবর।
জলপাইগুড়ি বন্যপ্রাণী বিভাগের বনাধিকারিক দ্বিজপ্রতিম সেন বলেন, “বিশেষজ্ঞদের একটি দল হাতি করিডরগুলি দেখতে এসেছিলেন। আমরা তাঁদের করিডর দেখিয়েছি। হাতিরা কোন পথে বর্তমানে চলাচল করছে, সেগুলি আমরাও নিয়মিত পর্যবেক্ষণ চালাই।”
‘আইইউসিএন’ সংস্থাটি সারা বিশ্বে পরিবেশ রক্ষার কাজ করে। হাতি চলাচলের করিডর থেকে বন্যপ্রাণীদের চলাচলের গতিবিধি সংক্রান্ত যে কোনও পরিবর্তন হলে, কিছু ক্ষেত্রে এই সংস্থার সুপারিশ বা অনুমোদনও প্রয়োজন। উত্তরবঙ্গের হাতি করিডরগুলির আর্ন্তজাতিক যোগ রয়েছে। ভুটান এবং নেপাল থেকে নিয়মিতউত্তরবঙ্গের জঙ্গলে হাতি ঢোকে এবং উত্তরবঙ্গ থেকে দুই প্রতিবেশী রাষ্ট্রে হাতির দল যায়। এ দিকে, পুরনো হাতি করিডরের অনেকগুলিই দখল হয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ। চলাচলের রাস্তায় বাধা পেয়ে অনেক সময় হাতিরা লোকালয়ে ঢুকে পড়েছে বলে দাবি বন দফতর সূত্রের। এমনকি সূত্রটির অভিযোগ, হাতি করিডরের উপরে যথেচ্ছ নির্মাণও হয়ে চলছে। সেগুলি নিয়ে সম্প্রতি ‘ডব্লিউটিআই’-এর তরফে সমীক্ষা হয়েছিল। রিপোর্টও বেশ কিছু প্রস্তাব দিয়ে ‘আইইউসিএন’-কে পাঠানো হয়। ‘ডব্লিউটিআই’-এর তরফে অন্যতম সমীক্ষাকারী শ্যামাপ্রসাদ পান্ডে বলেন, “আমাদের তরফে নতুনতিনটি করিডর চিহ্নিত করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। পুরোনো একটি করিডর এখন হাতিরা ব্যবহার করে না বলেও রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে। সে রিপোর্ট পেয়েই আর্ন্তজাতিক সংস্থার তিন বিজ্ঞানী প্রতিনিধি এসেছিলেন।”
জঙ্গলে হাতির খাবারের ভান্ডার কতটা অবশিষ্ট রয়েছে, তা নিয়েও সমীক্ষা করছে রাজ্যের বন দফতর। গত ফেব্রুয়ারি মাসে হাতির হানায় মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর মৃত্যু এবং সেবকের কাছে গুলিবিদ্ধ হাতির দেহ উদ্ধারের পরে, নড়েচড়ে বসেছে সব পক্ষই। দীর্ঘদিন পরে উত্তরবঙ্গের চিহ্নিত পুরনো হাতি করিডরে রদবদল হতে চলেছে।