একবেলা খাবার খেয়ে ফ্ল্যাটের নীচে ছোট্ট বাঙ্কারে গাদাগাদি করে থেকে দিনরাত শুধু বোমা-গুলি আর ক্ষেপণাস্ত্রের শব্দ শুনতে হয়েছে। আর কোনও রাতে অল্প সময়ের জন্য বাঙ্কারের বাইরে এলে দূরে শুধু বহুতল দাউ দাউ করে জ্বলতে দেখেছেন তিনি। অবশেষে যুদ্ধ বিধ্বস্ত ইউক্রেনের রাজধানী কিভ থেকে হাঙ্গেরি হয়ে বাড়ি ফিরেছেন তিনি।
মালদহের কালিয়াচকের বাড়িতে জীবন নিয়ে ফিরলেও রাশিয়ার হামলার শব্দের আতঙ্ক এখনও তাড়িয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছে কিভ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষের পড়ুয়া মহম্মদ আজিজ হোসেনকে। বাড়ি ফিরে আসায় তাঁকে স্বাগত জানাতে বেলুন লাগানো হয়েছিল। এমন অবস্থা যে, সেই বেলুন ফাটার শব্দ হলেও আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন আজিজ। তবে এখন তাঁর একটাই চিন্তা, যুদ্ধ কবে থামবে, আর তাঁদের মতো বাড়ি ফিরে আসা পড়ুয়াদের ভবিষ্যৎ কী হবে?
কালিয়াচক সদরেই বাড়ি আজিজের। বাবা আসরারুল হোসেন হার্ডওয়্যার ব্যবসায়ী। মা তারান্নুম খান গৃহবধূ। একমাত্র দিদির বিয়ে হয়ে গিয়েছে। ‘নিট’ পাস করে ২০১৯ সালে ডাক্তারি পড়তে ইউক্রেনের কিভ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন আজিজ। আজিজ জানিয়েছেন, ২৬ ফেব্রুয়ারি কলকাতা ফেরার টিকিট কাটা ছিল। তার আগেই ২৪ তারিখ থেকে কিভে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শুরু করে দেয় রাশিয়া। এই পরিস্থিতিতে ফ্ল্যাটের বাঙ্কার বা কখনও বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেলের বাঙ্কারে রাত কাটাতে হয় তাঁদের।
জীবন নিয়ে বাড়ি ফিরে আসতে দূতাবাসে যোগাযোগের পাশাপাশি নবান্নের হটলাইনেও যোগাযোগ করেন আজিজ। শেষ পর্যন্ত গত ২৮ তারিখ দেমিস্কা থেকে ৮ ঘণ্টার ট্রেন সফরে হাঙ্গেরি-ইউক্রেন সীমান্ত জাহোনিতে আসেন। সেখান থেকে ফের ট্রেনে হাঙ্গেরির রাজধানী বুদাপেস্ট। এরপর ভারতীয় দূতাবাসের সহযোগিতায় ৩ মার্চ ইস্তাবুল, দিল্লি হয়ে কলকাতায় পৌঁছান ৪ তারিখ। পরদিন মালদহ জেলা প্রশাসনের পাঠানো গাড়িতে করে রাতে বাড়ি ফেরেন।
আজিজ বলেন, ‘‘যুদ্ধের বিভীষিকাময় পরিস্থিতি থেকে সরকারের সহযোগিতায় জীবন নিয়ে বাড়ি ফিরে আসতে পেরেছি। কিন্তু মাঝপথে যে লেখাপড়া থমকে গেল তার কি হবে? কেন্দ্র ও রাজ্য দুই সরকারের কাছেই বিকল্প ব্যবস্থা করার দাবি জানাচ্ছি। তবে সেই ব্যবস্থা যেন ব্যয়বহুল না হয়। না হলে আমাদের মতো মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলেদের ডাক্তারি পড়া সম্ভব হবে না।’’