জখম নাজের আলি। —নিজস্ব চিত্র
প্রকাশ্যে মদ খাওয়ার প্রতিবাদ করায় মালদহে ফের আক্রান্ত প্রতিবাদী। এ বারে এক প্রাক্তন সেনাকর্মীকে মারধরের অভিযোগ উঠল গ্রামেরই চার মদ্যপ যুবকের বিরুদ্ধে।
শনিবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে ইংরেজবাজারের মিল্কির শেখপাড়া গ্রামে। ঘটনাকে কেন্দ্র করে গ্রাম জুড়ে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। এই ঘটনায় আহত ওই সেনাকর্মী আহত অবস্থায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন মিল্কি গ্রামীণ হাসপাতালে। রবিবার সকালে ইংরেজবাজার থানায় চার যুবকের নামে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। তবে এখনও কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। এ ছাড়া বেআইনি মদের বিরুদ্ধে পুলিশি অভিযান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন গ্রামবাসীরা। তাঁদের অভিযোগ, গ্রামের রাস্তার উপরে প্রকাশ্যেই চলছে মদ্যপান। পুলিশ প্রশাসনকে জানিয়েও কোন কাজ হচ্ছে না। যার জন্য আক্রান্ত হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। পুলিশ জানিয়েছে, আহত প্রাক্তন সেনাকর্মীর নাম নাজের আলি। তিনি ওই গ্রামেরই বাসিন্দা। বছর দুয়েক আগে সেনাবাহিনী থেকে অবসর নিয়েছেন। এখন তিনি বাড়িতেই থাকেন। মালদহের পুলিশ সুপার প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘রাতেই ঘটনাস্থলে পুলিশ গিয়েছিল। অভিযোগের ভিত্তিতে নির্দিষ্ট ধারায় মামলা রুজু হয়েছে। অভিযুক্তরা ফেরার। তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।’’
মাস ছয়েক আগে ইংরেজবাজারের কাজিগ্রামে মদ খাওয়ার প্রতিবাদ করায় এক যুবককে মারধরের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় নাম জড়ায় স্থানীয় যুবকদের বিরুদ্ধে। এ বার ফের একই ঘটনার পূনরাবৃত্তি ঘটল একই থানা এলাকার মিল্কি গ্রাম পঞ্চায়েতের শেখপাড়া গ্রামে। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ইংরেজবাজার থানার মিল্কি গ্রামপঞ্চায়েতের কালিন্দ্রী নদীর ধারে শেখপাড়া গ্রামে বসবাস করেন অবসর প্রাপ্ত সেনা কর্মী নাজের আলি। বছর দুয়েক আগেই অসু্স্থার কারণে সেনাবাহিনী থেকে অবসর নিয়েছেন তিনি। অবসর নেওয়ার পর তিনি বাড়ির জমি জায়গা দেখাশোনার কাজ করেন। তাঁর চার ছেলে মেয়ে রয়েছে। প্রত্যেকেই মিল্কি হাই স্কুলে পড়াশোনা করে। খুবই সাধারণ পরিবার বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি।
এ দিন রাত দশটা নাগাদ মিল্কি স্ট্যান্ড থেকে সাইকেল নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন নাজের আলি। অভিযোগ, রোজকার মতো গ্রামেরই একটি রাস্তার ধারে মদের আসর বসায় চার যুবক। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই চার যুবকের মধ্যে এক জন কংগ্রেস কর্মী হিসেবে এলাকায় পরিচিত। রাস্তার ধারেই মদের আসর বসিয়ে চলছে নানা অসাভ্য ভাষায় গালিগালাজ। বাড়ি ফেরার পথে এলাকার যুবকদের এমন অবস্থা দেখে প্রতিবাদ করেন নাজের। প্রতিবাদ করতেই সেই যুবকের নেতৃত্বে চার যুবকই চড়াও হয় তাঁর উপরে। তাঁকে মদের বোতল দিয়েও মারধর করা হয়।
চিৎকার শুনে পড়শিরা ছুটে গেলে পালিয়ে যায় ওই চার যুবক। পরে স্থানীয় বাসিন্দারা তাঁকে উদ্ধার করে ভর্তি করেন মিল্কি গ্রামীণ হাসপাতালে। এখনও তিনি শরীরে যন্ত্রণা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শেখপাড়া গ্রামের রাস্তাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারন কালিন্দ্রী নদীর ওপারে সাতটি গ্রাম রয়েছে। সেই গ্রামের বাসিন্দারা বাঁশের মাচা পেরিয়ে এই রাস্তা দিয়েই যাতায়াত করেন।
রাস্তার ধারে নিয়মিত বেশ কয়েকজন যুবকের প্রকাশ্যে মদ্যপানে ক্ষুব্ধ গ্রামবাসীরা। আক্রান্ত নাজের আলি বলেন, ‘‘আমার বাড়ি থেকে ১০০ মিটার দূরেই এই মদের আসর বসে। এমন ঘটনা রোজকার হয়ে উঠেছিল। রাস্তা দিয়েই রাতে যাতায়াত করতে আমাদেরই ভয় হয়। ফলে মেয়েদের কাছে একাই যাতায়াত করা খুবই আতঙ্কের। তাই এ দিন আমি তাঁদের নিষেধ করতে গেলে ওই যুবক ও তার সঙ্গীরা আমাকে মারধর শুরু করে দেয়। আমার শরীরে মদের বোতল ফাটানো হয়। স্থানীয় বাসিন্দা ছুটে আসলে আমি প্রাণে বেঁচে যাই।’’ ইংরেজবাজার থানায় তাঁরা অভিযোগ জানিয়েছেন।
মিল্কি পঞ্চায়েতের উপপ্রধান তৃণমূলের নিজাম আলি বলেন, ‘‘বেআইনি মদের রমরমা কারবার হয়ে উঠেছে এই এলাকা। পুলিশকে আমরা একাধিকবার জানিয়েছি। তাতেও কোনও কাজ হয়নি। পুলিশের নজরদারির অভাবেই প্রকাশ্যে মদ খাওয়ার সাহস পাচ্ছে দুষ্কৃতীরা। পুলিশকে দ্রুত অপরাধীদের গ্রেফতার করতে বলা হয়েছে। পুলিশ দ্রুত কোনও পদক্ষেপ না করলে আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দ্বারস্থ হব। যদিও পুলিশ সুপার প্রসূনবাবু বলেন, ‘‘বেআইনি মদের বিরুদ্ধে আমাদের সারা বছরই অভিযান চলে। প্রয়োজনে অভিযান আরও বাড়ানো হবে।’’