ভোটে ভূতেদের দৌরাত্ম্য ঠেকাতে সতর্ক সব পক্ষই

আসন্ন বিধানসভা ভোটে ‘ভূত’-এর দৌরাত্ম্য কমানোর জন্য নির্বাচন কমিশনের কাছে চিঠি দিলেন কোচবিহারের বিজেপির জেলা নেতৃত্ব। অবশ্য ‘ভূত’ ধরতে তাই বাড়তি সতর্কতা নিচ্ছে জেলার বাম-কংগ্রেস-বিজেপি সব শিবিরই। কোচবিহারের প্রায় এক লক্ষ বাসিন্দা কাজের প্রয়োজনে ভিন রাজ্যে থাকেন। তাঁদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রশাসনের কাছে নেই।

Advertisement

অরিন্দম সাহা

কোচবিহার শেষ আপডেট: ১০ এপ্রিল ২০১৬ ০২:০৫
Share:

আসন্ন বিধানসভা ভোটে ‘ভূত’-এর দৌরাত্ম্য কমানোর জন্য নির্বাচন কমিশনের কাছে চিঠি দিলেন কোচবিহারের বিজেপির জেলা নেতৃত্ব। অবশ্য ‘ভূত’ ধরতে তাই বাড়তি সতর্কতা নিচ্ছে জেলার বাম-কংগ্রেস-বিজেপি সব শিবিরই। কোচবিহারের প্রায় এক লক্ষ বাসিন্দা কাজের প্রয়োজনে ভিন রাজ্যে থাকেন। তাঁদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রশাসনের কাছে নেই। অনেকে ভোট দিতে জেলায় আসতেও পারেন না। এ বারেও সেই সম্ভাবনা রয়েছে। তালিকায় নাম থাকার পরেও ভোটের দিন এলাকায় অনুপস্থিত থাকা ভোটারদের পরিচয়েই সুযোগ নিতে পারে ওই ‘ভূতেরা’ । বিজেপির জাতীয় পরিষদের সদস্য তথা প্রাক্তন জেলা সভাপতি নিত্যানন্দ মুন্সী বলেন, “শাসকদলের লোকেরা ভুতুড়ে ভোট দিতে চেষ্টা করেছেন এমন অভিযোগ নতুন নয়। এবারে ভিনরাজ্যে থাকা ভোটারদের মধ্যে গরহাজির থাকা ভোটারদের ভোটও সেভাবে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টার আশঙ্কা রয়েছে। ওই ব্যাপারে সতর্কতা নিতে ফ্যাক্সে জেলা নির্বাচন আধিকারিককে চিঠি দেওয়া হয়েছে। খোঁজখবর রাখা হচ্ছে।”

Advertisement

বিরোধীদের অভিযোগ, জঙ্গলমহলের নির্বাচনের পর উত্তরবঙ্গে ‘ভূত বাহিনীর’ ঢুকে পড়ার খবর নিয়ে উদ্বেগ ছিলই। ভিন্‌ রাজ্যে থাকা ডুয়ার্সের বন্ধ চা বাগান শ্রমিকদের হয়ে ওই ভূতেরা ভোট দিতে তৈরি হচ্ছেন বলেও আশঙ্কার প্রচার রয়েছে। সব মিলিয়েই কাজের খোঁজে ভিনরাজ্যে থাকা কোচবিহারের বাসিন্দাদের ভোটদান নিয়ে ভূতের থাবার আশঙ্কা বেড়েছে। শনিবার ওই আশঙ্কার কথা জানিয়ে জেলা নির্বাচন আধিকারিকের দ্বারস্থ হওয়ার কথাও জানিয়েছেন বিজেপি নেতারা। বাম ও কংগ্রেস নেতারাও ওই আশঙ্কার ব্যাপারে একসুরে সরব হয়েছেন। সিপিএমের তরফে ইতিমধ্যে ভিনরাজ্যে থাকা ভোটারদের এলাকাভিত্তিক তালিকা তৈরির জন্য কর্মীদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

সিপিএমের নাটাবাড়ি কেন্দ্রের প্রার্থী তমসের আলি বলেন, “ভূতের দৌরাত্ম্যের আশঙ্কা নিয়ে সতর্কতায় জোর দিতে হচ্ছে। কাজের খোঁজে ভিন্‌ রাজ্যে থাকা বাসিন্দাদের তালিকা তৈরির জন্য কর্মীদের বলা হয়েছে। তালিকা তৈরির পরে বিষয়টি আমরা নির্বাচন কমিশনেরও নজরে আনাব।” তুফানগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রের কংগ্রেস প্রার্থী শ্যামল চৌধুরী বলেন, “এলাকায় হাজির থাকা ভোটারদের অনেকের ভোট কেন্দ্রে গিয়ে ভোট হয়ে যাওয়ার অভিজ্ঞতার সাক্ষী হতে হয়েছে এমন নজির রয়েছে। ফলে বাইরে থাকা ভোটারদের নিয়ে আশঙ্কা তো থাকেই। সেজন্য প্রতিটি বুথে পোলিং এজেন্টদের হাতে আমরা এলাকায় গরহাজির ভোটারদের তালিকা দেব। প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেওয়া হচ্ছে।”

Advertisement

তৃণমূল কংগ্রেস অবশ্য বিরোধীদের ‘ভূত’ দৌরাত্ম্যের আশঙ্কাকে ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছে। তৃণমূল নেতাদের দাবি, নির্বাচনে কোচবিহারে বিরোধীরা এ বার পরাজয় নিশ্চিত বুঝে গিয়েছে। পরাজয় নিশ্চিত জেনেই ভূতের আতঙ্কের গল্প ফেঁদে করে মান বাঁচাতে চাইছেন তারা। তৃণমূলের কোচবিহার জেলা সভাপতি তথা নাটাবাড়ির তৃণমূল প্রার্থী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, “বাম জমানায় জেলার সাড়ে তিন লক্ষ বাসিন্দা কাজের খোঁজে বাইরে ছিলেন। সেই সুযোগে বামেরা ছাপ্পা, ভুতুড়ে ভোট দিতে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছিল। এখন বড় জোর ২৫ হাজার মানুষ বাইরে রয়েছেন। তাঁদেরও সবাই যাতে ভোটদিন এলাকায় এসে ভোট দেন সে নিয়ে প্রচার হচ্ছে। দলীয় ভাবেও সবাইকে ভোট দিতে আসবার জন্য বলছি। সবাই ভোট দিতে আসবেন বলে আশা করছি। হেরে যাবে বুঝে ভিত্তিহীন অপপ্রচার করছে বিরোধীরা।”

জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, সরকারিভাবে জেলার প্রায় এক লক্ষ বাসিন্দা কাজের জন্য ভিনরাজ্যে যাতায়াত করেন বলে তথ্য রয়েছে। শীতলখুচি, দিনহাটা, কোচবিহার সদর মহকুমায় ওই বাসিন্দাদের সংখ্যা বেশি। এ ছাড়াও তুফানগঞ্জ, মেখলিগঞ্জ, দিনহাটা, সিতাই, মাথাভাঙার বিস্তীর্ণ এলাকার বাসিন্দাদের একাংশ গুজরাট, রাজস্থান, হরিয়ানা, দিল্লি, উত্তরপ্রদেশের মত ভিনরাজ্যে ইটভাটা কিংবা কারখানা শ্রমিকের কাজ করেন। নদিয়াতেও তাঁতের কাজে বাসিন্দাদের অনেকে থাকেন। ভোট, উৎসবের মরসুমে বেশিরভাগ বাসিন্দা জেলায় ফেরেন। এ বার বাইরে থাকা ভোটারদের আনার ব্যাপারে চেষ্টা হচ্ছে। ওই ব্যাপারে সচেতনতা বাড়াতে প্রচার শুরু হয়েছে। কোচবিহারের জেলাশাসক পি উল্গানাথন বলেন, “আমরা চাইছি সব ভোটার ভোট দিতে আসুন। বাইরে থাকা ভোটারদের সবাই যাতে আসেন তা নিয়ে সচেতনতা বাড়ান হচ্ছে। ভোটার তালিকার নাম যাচাই, সচিত্র পরিচয়পত্র দেখা হবে। প্রিসাইডিং অফিসারদের প্রশিক্ষণে এ সব জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে। উদ্বেগের ব্যাপার। উদ্বেগের কোন ব্যাপার নেই। তাছাড়া অন্যের ভোট দেওয়া নিয়ে কোন সুনির্দিষ্ট অভিযোগ হলে অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement