নাগরা কাটার ময়নাখোলা গ্রামে ঘুমপাড়ানি গুলিতে কাবু ভালুকটি। নিজস্ব চিত্র।
নিরিবিলি পাহাড়ি জঙ্গলে মৌচাক থেকে মধু, পোকা, কচি ঘাস খেয়ে দিব্যি এত বছর কেটেছে। হঠাৎ সদলবদল সমতলে নামছে কেন ভালুকের দল? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই আপাতত ব্যস্ত বন দফতর এবং পরিবেশপ্রেমীরা।
বন দফতরের সূত্রের দাবি, গত ১৫ দিনে অন্তত ১২টি ভালুকের দেখা মিলেছে ডুয়ার্স এবং কালিম্পঙের তুলনামূলক সমতল এলাকায়। যে এলাকাগুলিতে দীর্ঘদিন ভালুকের দেখা মেলেনি। এই দলে দেখা মিলেছে ভালুক শাবকেরও। এর থেকেই মনে করা হচ্ছে, ভালুকের একটি বড় দল নেমে এসেছে। এবং তাতেই প্রশ্ন উঠেছে, তবে কি ভালুকের নিরাপদ আবাসে অবাঞ্ছিত কোনও আনাগোনা বা সক্রিয়তা শুরু হয়েছে? পা পড়েছে মানুষের, যার জেরে নিজেদের আবাসস্থল ছেড়ে নেমে আসছে ভালুকের দল?
চর্চায় রয়েছে নানা সম্ভাবনা। প্রথমত, গরুবাথান থেকে সিকিমে যাওয়ার প্রশস্ত রাস্তা তৈরি করছে সেনাবাহিনী। সেই রাস্তা নেওড়া উপত্যকার জঙ্গলের কিছুটা দূর দিয়ে যাচ্ছে। এই নির্মাণের প্রভাব জঙ্গলে পড়তে পারে বলে দাবি করা হচ্ছে। নেওড়া ভ্যালি এবং ভুটানের জঙ্গল থেকেই ভালুকগুলি নেমে এসেছে বলে বন দফতরের অনুমান। সম্প্রতি চিন সীমান্তে উত্তেজনা তৈরি হওয়ার পরে সামরিক দৃষ্টিতে কালিম্পং-সহ নেওড়া ভ্যালি জঙ্গল এলাকা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। সেখানে কোনও সক্রিয়তা কি ভালুকদের ঘরকন্নায় কোনও সমস্যা তৈরি করছে? নেওড়া ভ্যালির জঙ্গলে বনবস্তি বা জনবসতি তেমন নেই। সেখানে কি কোনও নতুন করে কেউ বা কারা আশ্রয় নিয়েছে বা অস্থায়ী আবাস তৈরি করেছে, সে প্রশ্নও উঠেছে। পাহাড়ি ভালুকের ক্রমাগত নীচে নেমে আসতে থাকায় এমন সম্ভবনাও খতিয়ে দেখছে পুলিশ এবং এসএসবি।
উল্টো দিকে ভুটানের জঙ্গলেও গাছ কেটে রাস্তা তৈরি হওয়ার একটি সম্ভাবনাও তৈরি হয়েছে। সূত্রের খবর, ভুটানের জঙ্গলের পাশে রাস্তার সংস্কার এবং সম্প্রসারণ হচ্ছে। তার জেরে গাছ কাটা হয়ে থাকতে পারে। তাতেই ভয় পেয়ে ভালুকের দল ডুয়ার্সে নেমে আসতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। পরিবেশপ্রেমী সংগঠনের কর্তা অনিমেষ বসু বলেন, “নেওড়া ভ্যালির দিকে তেমন কোনও নির্মাণ বা নতুন বসতি গড়ার খবর নেই। ভুটানে হয়তো কিছু হতে পারে। সে কারণেই ভালুকগুলি হয়তো ভয় পেয়ে নেমে আসছে। এখন আমাদের প্রধান কাজ নেমে আসা ভালুকগুলিকে নিরাপদে আশ্রয়ে পাঠানো।” বন্যপ্রাণী নিয়ে কাজ করা রাজা রাউতের কথায়, “সাধারণত খুব শীতে কিছুটা নীচে নেমে আসে ভালুকরা। কিন্তু এত শীত এখনও পড়েনি। তা ছাড়া ডুয়ার্সের চা বাগানের মতো এত নিচু এলাকায় ভালুক সম্প্রতি আসেনি। কাজেই এটা খুবই গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত।”
বন দফতর প্রাথমিক ভাবে দাবি করছে ভালুকের সংখ্যা বেড়েছে বলেই তারা সমতলে নেমে আসছে। রাজ্যের বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, “বুনোদের সংখ্যা বাড়লে জঙ্গল ছেড়ে চলে আসে। সংশ্লিষ্ট এলাকার বাসিন্দাদের সচেতন করা হচ্ছে।“ পরিবেশপ্রেমীদের দাবি, একদিনে হঠাৎ করে ভালুকের সংখ্যা বেড়ে যেতে পারে না। তাহলে হঠাৎ করে এখনই কেন নেমে আসছে ভালুকের দল? এক বনকর্তার মন্তব্য, “বিশদে খোঁজখবর শুরু হয়েছে।”