৫০টি পরিবারের জন্য রয়েছে একটি মাত্র নলকূপ। সংস্কারের অভাবে তাতেও জল ওঠে নামমাত্র। পাড়ও বাধানো নেই নলকূপটির।
তাই চারিদিকে জমে রয়েছে নোংরা, দূষিত জল। বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় ওই নলকূপের দূষিত জল খেতেই বাধ্য হচ্ছেন বাসিন্দারা। বাসন ধোয়া, কাপড় কাচা, স্নান ইত্যাদি দৈনন্দিন প্রয়োজনেও বাসিন্দাদের ভরসা পুকুরের দূষিত জল। ফলে ঘরে ঘরে ডায়েরিয়ার প্রকোপ ছড়াচ্ছে মালদহের চাঁচল-২ ব্লকের মোহনপুরে।
গত তিন দিনে ওই এলাকায় ডায়েরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন অন্তত পঁচিশ জন বাসিন্দা। এঁদের মধ্যে কয়েকজনের চিকিত্সা চলছে স্থানীয় মালতীপুর হাসপাতালে। আবার বর্ষায় রাস্তা বেহাল। তাই হাসপাতালে নিয়ে আসার সমস্যায় বেশ কয়েকজন বাড়িতেই হাতুড়ে চিকিত্সককে দিয়ে চিকিত্সা করাচ্ছেন। কিন্তু সব জেনেও স্বাস্থ্য দফতরের কর্মীরা এলাকায় যাননি বলে অভিযোগ।
অভিযোগ, গত কয়েক বছর ধরে ওই এলাকার বাসিন্দারা দূষিত জল খেয়ে পেটের রোগে ভুগলেও পঞ্চায়েতের কোনও হেলদোল নেই। নতুন নলকূপ বসানোর পাশাপাশি বর্তমান নলকূপটির পাড় বাঁধানোর দাবিতে গত এক বছর ধরে পঞ্চায়েতের কাছে একাধিকবার আবেদন-নিবেদন জানিয়েছেন বাসিন্দারা। কিন্তু আশ্বাস ছাড়া কিছু জোটেনি। ব্লক সদর থেকে মাত্র ছ’কিলোমিটার দূরের ওই এলাকার বেহাল দশার কথা জেনেও কেন পঞ্চায়েত নির্বিকার তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। শুরু হয়েছে চাপানউতোরও। যদিও এলাকায় ডায়েরিয়ার প্রকোপ শুরু হওয়ায় বেগতিক দেখে এ দিন ওই নলকূপটি সংস্কারের কাজ শুরু করেছে প্রশাসন।
চাঁচল-২ ব্লকের বিডিও মুনমুন ঘোষ বলেন, ‘‘ওখানে পরিশ্রুত পানীয় জলের সমস্যা রয়েছে। আমরা এরমধ্যেই দু’টি পুকুর সংস্কারের কাজ করেছি। এছাড়া নলকূপগুলির পাড় বাঁধানোরও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সেই কাজ হয়ে যাবে। স্বাস্থ্য দফতরকেও এলাকায় যেতে বলা হয়েছে।’’
পঞ্চায়েত ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, আদিবাসী অধ্যুষিত মোহনপুর এলাকার ৫০টি পরিবারের প্রায় প্রত্যেকেই অভাবি। নলকূপ বসানোর সামর্থ তাদের নেই। পঞ্চায়েতের তরফে দীর্ঘদিন আগে যে নলকূপ বসানো হয়েছিল, গরমে জলস্তর নেমে গেলে ওই নলকূপে জল ওঠে না। তখন বাসিন্দাদের মাঠের শ্যালো বা পুকুর থেকে জল সংগ্রহ করতে হয়। এখন বৃষ্টি শুরু হওয়ার পর কোনও রকমে পানীয় জলের সমস্যা মিটছে। বাকি কাজে ভরসা পুকুরের জল। আর ওই দূষিত জল ব্যবহার করায় সারা বছর পেটের রোগে ভোগেন অধিকাংশ বাসিন্দা।
এলাকার বাসিন্দা মঙ্গল টুডু, চুনু টুডুরা বলেন, ‘‘গত দু’বছর ধরে পাড় বাঁধানো-সহ আরও কয়েকটি নলকূপের দাবিতে আন্দোলন করছি। কিন্তু প্রশাসন একে অন্যকে দেখিয়ে দায় এড়িয়ে গিয়েছে। ফলে আমাদের সমস্যা মেটেনি।’’ তাঁরা জানান, মালতীপুর হাসপাতালে কয়েকজনের চিকিত্সা চলছে। অনেকেই বাড়িতে প্রায় বিনা চিকিত্সায় পড়ে রয়েছেন। কিন্তু স্বাস্থ্যকর্মীদের দেখা মেলেনি।
তৃণমূল পরিচালিত চাঁচল-২ পঞ্চায়েত সমিতির ত্রাণ কর্মাধ্যক্ষ সুপর্ণা দাসের অভিযোগ, ‘‘ওই এলাকায় নলকূপ যে জরুরি তা জানি। আমরা পরিকল্পনাও নিয়েছি। কিন্তু তা বাস্তবায়িত করতে তো প্রশাসনকেই উদ্যোগ নিতে হবে।’’ আবার জেলা পরিষদের স্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ মানজারুল ইসলাম বলেন, ‘‘নলকূপের পাড় বাঁধানো বা নলকূপ বসানো, এগুলো তো পঞ্চায়েত সমিতিরই দেখার কথা।’’
মালদহের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক দিলীপ কুমার মণ্ডল বলেন, ‘‘স্বাস্থ্যকর্মীদের এলাকায় যেতে বলা হয়েছে। কিন্তু বাসিন্দারা যাতে পরিশ্রুত জল পান তা প্রশাসনকেই দেখতে হবে। তা না হলে বারে বারে সমস্যা দেখা দেবে।’’