BTech Cha Wala

‘বি.‌টেক চাওয়ালা’! টিনের শেডে জ্বলজ্বল করছে দোকানের নাম, রুজির খোঁজে দুই ইঞ্জিনিয়ার

উত্তর ২৪ পরগনার হাবড়া স্টেশনের ‘এমএ ইংলিশ চায়েওয়ালি’, পূর্ব বর্ধমানের মন্তেশ্বরের ‘এমএ চাওয়ালার’ পরে, এ বার ‘বি.‌টেক চাওয়ালা’ দোকানের মালিক মালদহের আলমগীর খান ও রাহুল আলি।

Advertisement

অভিজিৎ সাহা

ইংরেজবাজার শেষ আপডেট: ০৩ জানুয়ারি ২০২৩ ০৬:৫০
Share:

ইংরেজবাজার শহরের স্টেশন রোডে কানি মোড়ে ভাড়া নিয়ে দোকান খুলেছেন তাঁরা। দোকান আর তার দুই মালিকের চা বিক্রির ছবি এখন সমাজ মাধ্যমে ছড়িয়েছে। নিজস্ব চিত্র।

একের পরে এক নামী-দামি রেস্তরাঁ, কাপড়ের দোকান। তার মাঝে ইটের গাঁথনির উপরে টিনের শেডে জ্বলজ্বল করছে ‘বি.‌টেক চাওয়ালা’। রবিবার রাতে, ইংরেজি নতুন বছরের প্রথম দিন ওই নামে চায়ের দোকান খুললেন মালদহের দুই ইঞ্জিনিয়ার। ইংরেজবাজার শহরের স্টেশন রোডে কানি মোড়ে ভাড়া নিয়ে দোকান খুলেছেন তাঁরা। দোকান আর তার দুই মালিকের চা বিক্রির ছবি এখন সমাজ মাধ্যমে ছড়িয়েছে।

Advertisement

উত্তর ২৪ পরগনার হাবড়া স্টেশনের ‘এমএ ইংলিশ চায়েওয়ালি’, পূর্ব বর্ধমানের মন্তেশ্বরের ‘এমএ চাওয়ালার’ পরে, এ বার ‘বি.‌টেক চাওয়ালা’ দোকানের মালিক মালদহের আলমগীর খান ও রাহুল আলি। আলমগীর কালিয়াচকের থানা রোড ও রাহুল ইংরেজবাজার শহরের রেল কলোনির বাসিন্দা। দু’জনেই মালদহে গনি খানের নামাঙ্কিত কারিগরি কলেজের ছাত্র ছিলেন। আলমগীর ২০১৭ সালে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে সার্টিফিকেট ও ডিপ্লোমা কোর্স করেন। ওই বছরই কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে সার্টিফিকেট ও ডিপ্লোমা কোর্স করেন রাহুল। তিনি আর পড়াশোনা না করলেও, আলমগীর কলকাতার একটি বেসরকারি কারিগরি কলেজ (স্বামী বিবেকানন্দ ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনলজি) থেকে ২০২১ সালে বি টেক পাশ করেন। তাঁর বাবা শাহেনশা খান ঢালাই মেশিন (ছাদ ঢালাইয়ের কাজে ব্যবহৃত) ভাড়া দিয়ে পাঁচ ছেলেমেয়েকে নিয়ে সংসার চালাচ্ছেন। আলমগীর তাঁর বড় ছেলে। রাহুলের বাবা মনসুর আলি পেশায় ট্যাক্সি চালক।

দোকানের এমন নাম কেন? আলমগীর বলেন, ‘‘গুজরাতের একটি সংস্থায় কলেজের ক্যাম্পাস-ইন্টারভিউয়ের মাধ্যমে চাকরি মিলেছিল। তবে ১৫ হাজার টাকার বেশি সংস্থা দিতে রাজি হয়নি। এখন ২৭ বছর বয়স হয়ে গিয়েছে। চাকরির আশায় বসে থাকলে, বয়স থেমে থাকছে না। কিছু করার জন্য চায়ের দোকান খুলেছি।’’ রাহুল বলেন, ‘‘চায়ের দোকানে বসে প্রচুর সময় কাটিয়েছি। ভাল চা বিক্রি করলে মানুষ এমনিই আসবেন। সে জন্যই চায়ের দোকান দেওয়া। কোনও কাজই যে ছোট না, তা বোঝাতেই দোকানের নাম বি. টেক চাওয়ালা।’’

Advertisement

আলমগীরের বাবা শাহেনশা বলেন, ‘‘ছেলেকে অনেক টাকা খরচ করে পড়াশোনা করিয়েছি। ছেলে এখন চায়ের দোকান খোলায় অনেকের কথা শুনতে হবে ঠিকই। তবে বাড়িতে বসে থাকার থেকে চায়ের দোকান করা অনেক ভাল।’’ দোকানের উদ্বোধন করেন স্থানীয় ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূলের কাউন্সিলর গৌতম দাস। তিনি বলেন, ‘‘চায়ের দোকানের পাশাপাশি, আলমগীর ও রাহুল চাকরি পরীক্ষার প্রস্তুতিও নিচ্ছেন। ওঁদের উদ্যোগকে প্রশংসা করতে হয়।’’

মালদহ পলিটেকনিক কলেজের অধ্যক্ষ স্নেহাশিস গুহ বলেন, ‘‘ভিন্-রাজ্যেও ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের পড়ুয়াদের চাহিদা মতো বেতন মিলছে না। এ রাজ্যেও তাঁরা তেমন সুযোগ পাচ্ছেন না। দুঃখ হয়। আশা করছি, আগামী দিনে ছবি বদলাবে। চায়ের দোকান দেওয়া ছাত্রদের জন্য শুভ কামনা রইল।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement