ভেঙে গিয়েছে ওই বাড়ির জানলা। নিজস্ব চিত্র
রবিবার শেষরাতের ঘুমই শেষঘুম হয়ে যেতে পারত সরকার পরিবারের তিন সদস্যের। কারণ, ভোর ৪টে নাগাদ তিনটি হাতির দল তাঁদের পাকা বাড়ির একটা অংশ গুড়িয়ে দেয়। সেই শব্দে শেষ মুহূর্তে ঘুম ভেঙে বাড়ির কাঠের ঘরে থাকা তিন সদস্য জানলা দিয়ে পালিয়ে প্রাণে বাঁচলেন।
তবে শেষ পর্যন্ত হাতির দলটি কাঠের ঘরের ক্ষতি করেনি। বরং, এলাকা ছাড়ার আগে বাড়ির উঠোনে থাকা গাছের পাকা আম-কাঁঠাল খেয়ে চলে যায়। রবিবার ভোরে জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যান লাগোয়া মাদারিহাটের মেঘনাথ সাহা নগরের ওই ঘটনার পরে সরকার বাড়ির তিন জন বলছেন, ‘‘জোর বাঁচা বেঁচে গিয়েছি।’’ দিন কয়েক আগেও একটি হাতি হানা দিয়েছিল এই এলাকাতেই। তার আগে পাশের গ্রামের একজনকে আছড়ে মেরে ফেলে। সে দিন হাতিকে জঙ্গলে ফেরাতে শূন্যে গুলিও ছুড়তে হয়েছিল বনকর্মীদের।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সুজিত সরকারদের বাড়িতে তিনটে টিনের চাল দেওয়া পাকা ঘর রয়েছে। একটা রান্নাঘর। বাকি দু’টি থাকার ঘর। এই তিনটে ঘরের মুখ পূর্ব দিকে। আর কাঠের ঘরটি দক্ষিণমুখো। হাতি তিনটি প্রথমে সরকার বাড়ির টিনের পাঁচিল ভাঙে। তার পরে রান্নাঘরের একটি জানলা ভাঙার পাশাপাশি উপরের দেওয়ালেরও খানিকটা অংশ ভেঙে দেয় হাতি তিনটি।
রান্নাঘরে সামান্য চাল ছিল। কিন্তু তা না খেয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে হাতির দলটি রান্নাঘরের ভিতর তছনছ করে। কাঠের ঘরে ছিলেন সুজিত সরকার, তাঁর মা ও মামা। সুজিত বলছেন, ‘‘হাতি তিনটির তাণ্ডবে স্বাভাবিক কারণেই আমরা প্রত্যকে আতঙ্কিত হয়ে পড়ি। প্রাণ বাঁচাতে কোনওমতে ঘরের পিছনের দিকের একটা জানলা দিয়ে লাফিয়ে পাশেই গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য সুজিত দাসের বাড়িতে আশ্রয় নিই।’’
এরপর পঞ্চায়েত সদস্য ও আশপাশের লোকজন বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়েন। হাতি তাড়াতে শুরু হয় পটকা ফাটানো। সুজিত বলেন, ‘‘হাতির দলটি কাঠের ঘরের কোনও ক্ষতি করেনি। তবে এলাকা ছাড়ার আগে উঠোনের গাছ থেকে আম-কাঁঠাল খেয়ে নেয়।’’ স্থানীয় এক বাসিন্দার কথায়, ‘‘হয়তো খাবারের খোঁজেই ওই বাড়িতে ঢুকেছি হাতির দলটি। কিন্তু রান্নাঘর ভেঙেও পরিমাণ মতো খাবার না মেলায় আম-কাঁঠাল খেয়ে নেয়।’’ স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য সুজিত দাস বলেন, ‘‘পটকার শব্দেই শেষ পর্যন্ত হাতির দলটি এলাকা ছাড়ে।’’ জলদাপাড়ার ডিএফও কুমার বিমল বলেন, ‘‘হাতির হানায় ওই বাড়ির কতটা ক্ষতি হয়েছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’