মৃত হাতিটিকে ঘিরে স্থানীয়রা। —নিজস্ব চিত্র।
বিদ্যুৎপৃষ্ট হয়ে ফের ডুয়ার্সে হাতির মৃত্যু। শুক্রবার ভোরে হলদিবাড়ি চা-বাগানে বিদ্যুৎপৃষ্ট হয়ে হাতিটির মৃত্যু হয়। ডুয়ার্সের হলদিবাড়ি চা বাগানের ৩ নম্বর লাইনে হাতিটিকে মৃত অবস্থায় দেখতে পান চা শ্রমিকরা। মৃত হাতিটি পূর্ণবয়স্ক স্ত্রী হাতি বলে জানিয়েছেন বন দফতরের আধিকারিকরা। এই নিয়ে গত তিন মাসে বিদ্যুৎপৃষ্ট ডুয়ার্সে হয়ে ৭টি হাতির মৃত্যু হল বলে বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে।
হাতির মৃত্যুর খবর পেয়ে এ দিন ঘটনাস্থলে হাজির হন জলপাইগুড়ির অনরারি ওয়াইল্ড লাইফের ওয়ার্ডেন সীমা চৌধুরী, বিন্নাগুড়ি ওয়াইল্ড লাইফ স্কোয়াডের রেঞ্জার শুভাশিস রায় এবং মোরাঘাট রেঞ্জ অফিসার রাজকুমার পাল। ঘটনাস্থলে পৌঁছান ডিএফও (বন্যপ্রাণী বিভাগ) নিশা গোস্বামী, ডিএফও (বনবিভাগ) মৃদুল কুমার-সহ বন দপ্তরের আধিকারিকরাও। বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন রাজ্যের মন্ত্রী এবং উচ্চপদস্থ আধিকারিকরাও।
বিদ্যুৎপৃষ্ট হয়ে হাতির মৃত্যু নিয়ে য়েক মাস আগেই রাজ্যের মুখ্য বনপাল এবং বিদ্যুৎ দপ্তরের মধ্যে কলকাতায় বৈঠক হয়। তার পরেও হাতির মৃত্যু আটকানো যায়নি। বরং উত্তরবঙ্গে বিদ্যুৎপিষ্ট হয়ে একের পর এক হাতিমৃত্যুর ঘটনায সামনে এসেছে। ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক এক্সপ্লোরার অ্যান্ড ফাউন্ডার একজিকিউটিভ ডিরেক্টর ভয়েস ফর এশিয়ান এলিফ্যান্ট সোসাইটি-র কর্নধার সঙ্গীতা আইয়ার। ফোনে তিনি জানান, গত ১৪ অগস্ট রাজ্যের মুখ্য বনপাল ভি কে যাদবকে ইমেলে হাতির মৃত্যুর ঘটনায় আইনত ব্যবস্থা নেওয়ার র্আজি জানানো হয়। ৭ অক্টোবর তার জবাব আসে। তাতে বলা হয়, জলপাইগুড়ি জেলা বন আধিকারিকদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা হয়েছে। বৈঠক হয়েছে বিদ্যুৎ দফতরের সঙ্গেও। এই ধরনের ঘটনা যাতে না ঘটে তার জন্য সবরকমের চেষ্টা চালানো হচ্ছে।
তার পরেও এ দিনের হাতিমৃত্যুর ঘটনায় বন দফতর, বিদ্যুৎ দফতর এবং চা বাগান কর্তৃপক্ষের ভূমিকা নিয়ে ফের এক বার প্রশ্ন তুলে দিল। স্থানীয়রা অভিযোগ করছেন, সচেতনতা বাড়াতে এত প্রচার চালানো হচ্ছে, দফায় দফায় বৈঠক করছেন সরকারি আধিকারিকরা, তা সত্ত্বেও এই ধরনের ঘটনা রোখা যাচ্ছে না কেন।
সীমা চৌধুরীর বক্তব্য, ‘‘গত তিন মাসে এই নিয়ে বিদ্যুৎপৃষ্ট হয়ে ডুয়ার্সে ৭টি হাতির মৃত্যু হল। চা বাগান কর্তৃপক্ষের গাফিলতির জেরেই এই ঘটনা ঘটে চলেছে। বনমন্ত্রীকে গোটা ঘটনা জানানো হয়েছে। দেখেই বোঝা যাচ্ছে, বিদ্যুৎপৃষ্ট হয়েই মৃত্যু হয়েছে হাতিটির। কারণ বিদ্যুতের তার হাতির উপরেই ঝুলে ছিল।’’
শুভাশীষ রায় বলেন, ‘‘চা বাগানের গাফিলতির কারণেই হাতিটির মৃত্যু হয়েছে। হাতির করিডরে এভাবে বিদ্যুতের তার ঝুলে রয়েছে অথচ বাগানের নজরে পড়ল না? বাগানের কোনও শ্রমিকেরও তো মৃত্যু হতে পারত!’’
বাগানের মধ্যে বিদ্যুতের তার ঝুলন্ত অবস্থায় রয়েছে, অথচ তা বাগান কর্তৃপক্ষের নজরে পড়ল না, তা নিয়ে স্থানীয়রাও প্রশ্ন তুলছেন। বানারহাটের স্টেশনমাস্টার শুভম দুপ্পা বলেন, ‘‘বাগানের ভিতরের বৈদ্যুতিক সংযোগ বাগানের নিজস্ব। আমরা তদন্ত করে দেখছি। উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের সাথে কথা বলে,পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে’’
নিশা গোস্বামী বলেন, ‘‘বিদ্যুৎপৃষ্ট হয়েই মৃত্যু হয়েছে হাতিটির। বন্যপ্রাণ আইন অনুযায়ী বন দফতরের তরফে মামলা করা হবে। পরবর্তী কালে এই ধরনের ঘটনা না যাতে ঘটে, তা দেখা হবে। কাদের গাফিলতিতে হাতির মৃত্যু, তা তদন্ত করলে বোঝা যাবে।’’