শুক্রবার সন্ধ্যায় বৃষ্টি শিলিগুড়িতে। —নিজস্ব চিত্র।
দমকা হাওয়া আর শিলাবৃষ্টিতে ভেস্তে গেল শুক্রবারের সান্ধ্য প্রচার। এ দিন বিকেল থেকেই শিলিগুড়ির আকাশে কালো মেঘের আনাগোনা শুরু হয়। সন্ধ্যায় শুরু হয় শিলাবৃষ্টি, সঙ্গে ঝোড়ো হাওয়া।
কলকাতায় ভোটের প্রচার শেষ হয়ে যাওয়ায়, এখন জেলাগুলিতে নজর সব দলের জাতীয় ও রাজ্য স্তরের নেতা-নেত্রীদের। এ দিন থেকেই শহরে প্রচার শুরু করেছেন দার্জিলিঙের বিজেপি সাংসদ সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়া, কংগ্রেস সাংসদ মৌসম বেনজির নূর এবং প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা বিজেপির জাতীয় মুখপাত্র শাহনওয়াজ হোসেন। শিলিগুড়িতে এ দিন সভা ছিল তৃণমূল শ্রমিক সংগঠনের রাজ্য সভানেত্রী দোলা সেনেরও। মৌসম ছাড়া বাকি তিনজনকেই ঝড়-বৃষ্টির মুখে পড়তে হয়। এ ছাড়াও সব ওয়ার্ডেই বিভিন্ন দলের পথসভা, মিছিল, বাড়ি বাড়ি প্রচার বিঘ্নিত হয়েছে দুর্যোগে। তবুও গত দু’দিনের চড়া রোদ-গরমের পর বৃষ্টি কিছুটা হলেও স্বস্তি দিয়েছে বলে মনে করছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা কর্মীরা। কারণ গত দু’দিনের চড়া গরমে প্রচার চালাতে সমস্যায় পড়তে হয়েছিল তাঁদের।
কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, এমনিতেই উত্তরবঙ্গের আকাশে কয়েকদিন ধরে একটি নিম্নচাপ অক্ষরেখা অবস্থান করছে। বায়ুস্তরের উপরিভাগে অবস্থান করা এই নিম্নচাপের টানেই বঙ্গোপসাগর থেকে জলীয় বাষ্প উত্তরবঙ্গের দিকে ছুটে আসতে শুরু করে। সেই সঙ্গেই গত দু’দিন তাপমাত্রা বেশি থাকায় বায়ুস্তরে অস্থিরতা তৈরি হয়েছিল। সব মিলিয়ে সন্ধ্যাতে ঝড় শিলাবৃষ্টি শুরু হয়। এ দিন যখন বৃষ্টি শুরু হয়েছে, সে সময়ে হাসমিচক লাগোয়া এলাকায় সভা সেরে শিলিগুড়ির ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের মাতঙ্গিনি কলোনির পথ সভায় বক্তব্য রাখছিলেন দোলা সেন। বৃষ্টির সঙ্গে ঝোড়ো হাওয়া শুরু হওয়ায় দোলাদেবী বক্তব্য সংক্ষিপ্ত করে ফেলেন। তারপরে অন্য বক্তাদের বলার কথা থাকলেও, সভা ভেস্তে যায়। বিকেল থেকে প্রথমে খালপাড়া, রামঘাট এলাকায় পথসভা করে শহরের ৯ নম্বর ওয়ার্ডে পথসভা করতে পৌঁছন বিজেপির জাতীয় মুখপাত্র শাহনওয়াজ হোসেন। ঝোড়ো হাওয়া শুরু হওয়ায় সে সভাও তড়িঘড়ি সেরে ফেলা হয়। ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডে বিজেপি সাংসদ অহলুওয়ালিয়ার সভা মাঝপথেই ভেস্তে যায়। শহরের ৪৪ এবং ৪৫ নম্বর ওয়ার্ডেও সভা করার কথা ছিল সাংসদের। বৃষ্টি চলতে থাকায় সে সভা দু’টিও বাতিল হয়ে যায়। ৬ নম্বর ওয়ার্ডে বাড়ি বাড়ি প্রচার ছিল উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী তথা জেলা তৃণমূল সভাপতি গৌতম দেবের। বৃষ্টিতে আটকা পড়ে সেখানে প্রচারে যেতে পারেননি মন্ত্রী। তবে গৌতমবাবু বলেন, ‘‘বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ঘরেই কর্মিসভা অথবা প্রশ্নোত্তর পর্ব হচ্ছে। এ দিনও হয়েছে। বৃষ্টিতে কোনও সমস্যা হয়নি।’’
এ দিন সন্ধ্যা সাতটা থেকেই ঝোড়ো হাওয়া শুরু হয়। কিছু পরে শুরু হয় শিলাবৃষ্টি। বৃষ্টি চলতে থাকায় পথসভা গুলি ভেস্তে যায়। বৃষ্টির আগে সভা সেরে মৌসম ফিরে গেলেও, কংগ্রেসের বেশ কয়েকটি সভাও ভণ্ডুল হয়ে যায়।
কংগ্রেসের শিলিগুড়ি সমতলের সভাপতি শঙ্কর মালাকার বলেন, ‘‘বৃষ্টিতে ১ নম্বর ওয়ার্ডের একচি সভা বাতিল করে দিতে বাধ্য হয়েছি। ৯ নম্বর ওয়ার্ডেও সভা ছিল। আরও বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডে প্রচার চলছিল, সবই কমবেশি বিঘ্নিত হয়েছে।’’ সিপিএমের দার্জিলিং জেলা সম্পাদক জীবেশ সরকার বলেন, ‘’সূর্য সেন কলোনিতে যখন সভা করছিলাম, তখনই হুড়মুড়িয়ে বৃষ্টি নামে। বাধ্য হয়ে সভা থামিয়ে দিতে হয়। তারপরে দু’টো সভা ছিল সেগুলিও ব্যহত হয়।’’
কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতরের সিকিমের আধিকারিক গোপীনাথ রাহা বলেন, ‘‘ঝড়-বৃষ্টির পুর্বাভাস কলকাতা অফিস থেকে আগেভাগেই দেওয়া হয়েছিল। নিম্নচাপ অক্ষরেখা অবস্থান করতে থাকলে, এই পরিস্থিতি চলবে।’’ চড়া গরমে প্রচারের দুর্ভোগ থেকে রেহাই পেলেও, প্রচারের শেষ প্রহরে প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হওয়ারই প্রার্থনা করছে সব দলের নেতা-কর্মীরা। তাঁদের বক্তব্য, বৃষ্টি হলে প্রচার করাই সম্ভব হবে না। ভোটের সময়ে ভোটপ্রার্থীদের কাছে পৌঁছতেই হবে। তাই চড়া গরমেও আপত্তি নেই।