—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
নির্দিষ্ট শিক্ষাগত যোগ্যতা সঙ্গে মানানসই লোকের সংখ্যা কম হওয়ায় পর্যটন শিল্পে পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থাগুলিকে নথিভুক্ত করানো নিয়ে সমস্যায় পড়েছিল রাজ্য পর্যটন দফতর। করোনার পরে তৈরি সরকারি নীতিতে গত দু’বছরে খুবই কম সাড়া পেয়েছে তারা। তা নিয়ে রাজ্যের বিভিন্ন স্তরে আলোচনাও হয়। শেষে, গত ৭ নভেম্বর রাজ্যের পর্যটন শিল্পের পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থাগুলির নথিভুক্তিকরণের নিয়ম রাজ্য জুড়ে পাল্টানো হয়েছে। দফতরের সচিব নন্দিনী চক্রবর্তী একটি নির্দেশিকা জারি করে শিক্ষাগত যোগ্যতা কমানোর কথা জানিয়ে দিয়েছেন। রাজ্যের প্রত্যেক জেলাশাসককে সরকারি নির্দেশ পাঠানো হয়েছে।
রাজ্য পর্যটন দফতরের এক সচিবের কথায়, ‘‘বিভিন্ন দিক ভেবেই নিয়ম-নীতি তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু গত দু’বছরে তাতে সমস্যাই বেশি দেখা গিয়েছে। মানদণ্ড মেনে বহু সংস্থাই এগিয়ে আসছন না। এতে সরকারের উদ্দেশ্য ব্যাহত হতে বসেছিল। তাই একাধিক বৈঠকের পরে, সে নীতিরৃ বদল করা হল।’’
সরকারি সূত্রের খবর, ট্র্যাভেল এজেন্ট, টুর অপারেটর, পরিবহণ ব্যবসায়ী, অ্যাডভেঞ্চার টুর অপারেটর-সহ বিভিন্ন ধরনের পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থাকে করোনার পরে পর্যটন দফতর সরকারি স্বীকৃতি দিতে নথিভুক্তিকরণের প্রক্রিয়া চালু করে। এতে দেশ-বিদেশের পর্যটকদের জন্য গুণমান, পরিষেবা ভাল হবে বলেই ধরে নেওয়া হয়। পর্যটকেরাও সরকারি স্বীকৃত সংস্থার মাধ্যমে পরিষেবা বেশি নিলে, ব্যবসাও বাড়বে বলে ধরা হয়। প্রতারণা বা টাকা নিয়ে ভুল বা কম পরিষেবা দেওয়ার মতো ঝামেলা কমবে বলে মনে করা হয়েছিল।
২০২১ সালে সরকার নতুন নিয়ম চালু করে। তা নিয়ে জেলায়-জেলায় বৈঠকও হয়। বলা হয়, ১০ কোটি টাকার বাৎসরিক আয়ের নীচের সংস্থাগুলিকে নথিভুক্ত করতে দু’জন উচ্চ মাধ্যমিক পাশ কর্মী এবং এঁদের এক জনের টুরিজ়ম ম্যানেজমেন্টের ডিপ্লোমা বা ডিগ্রি থাকাটা বাধ্যতামূলক। ১০ কোটি টাকার বাৎসরিক আয়ের সংস্থার চার জন দ্বাদশ শ্রেণি উত্তীর্ণ কর্মী থাকতে হবে। এঁদের দু’জনের টুরিজ়ম ম্যানেজমেন্টের ডিপ্লোমা বা ডিগ্রি থাকতে হবে। তরুণ-তরুণীরা ট্র্যাভেল বা টুরিজ়ম নিয়ে পড়াশোনার পরে এতে বেশি চাকরি পাবেন ধরে নিয়েই এই নিয়ম তৈরি হয়। কিন্তু গত দু’বছরে যোগ্যতা মিলিয়ে আবেদন করেছে মাত্র ৭২টি সংস্থা। আর সরকারি নথিভুক্তিকরণ প্রক্রিয়া মেনে স্বীকৃতি পেয়েছে ৫৮টি সংস্থা। অথচ, পর্যটন দফতরের অফিসারদের হিসাবে সংখ্যাটা কম করে তিন হাজার হওয়া উচিত ছিল।
নতুন নিয়মে দ্বাদশ শ্রেণির অবধি পড়াশোনার যোগ্যতা রেখেই নথিভুক্তিকরণ করাতে বলা হয়েছে। এর বাইরে, পর্যটন দফতর একটি প্রশিক্ষণের বন্দোবস্ত করবে। প্রত্যেক জেলার জন্য সরকারি প্রশিক্ষক থাকবেন। প্রশিক্ষণ শেষে শংসাপত্র দেওয়া হবে। এ সব থাকলেই পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থাটি সরকারি নথিভুক্তিকরণ ও স্বীকৃতির নিয়মের মধ্যে চলে আসতে পারবে।
পর্যটন ব্যবসায়ীরা জানান, বেশির ভাগ সংস্থার মালিক বা কর্মীরা পর্যটন সম্পর্কিত শিক্ষাগত যোগ্যতার থেকে অভিজ্ঞতার নিরিখেই কাজ করেন। বড় বড় হোটেল, রিসর্ট, সংস্থায় ম্যানেজমেন্ট পাশ করা ছেলেমেয়েরা চাকরি করেন। এতেই শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে সমস্যা বাড়ছিল।