প্রতীকী ছবি।
হরলিক্সের জারে চিনি রাখাটা এক সময় মধ্যবিত্ত বাঙালি হেঁসেলের চেনা ছবি ছিল। প্লাস্টিকের রকমারি দ্রব্যের আমদানিতে খানিকটা হলেও সেই ছবির বদল ঘটেছে। হেঁসেলে ঢুকে পড়েছে ছোট, বড় নানা মাপের প্লাস্টিকের শৌখিন জার, কৌটো। নিত্য ব্যবহারের তালিকা থেকে চাইলেও আর সেগুলিকে সহজে বাদ দেওয়া যাচ্ছিল না। তবে ক্রেতার ভাঁড়ারে মা ভবানী দশা হওয়ায় ‘শৌখিনতায়’ কাঁটছাট শুরু হয়েছে। উত্তরবঙ্গের বণিক সংগঠন নর্থবেঙ্গল ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের সাম্প্রতিক সমীক্ষায় তেমন তথ্যই উঠে এসেছে। শেষ ৬ মাসে কার্যত অর্ধেকে নেমে গিয়েছে কাপড় কাচার সাবানের মত নিত্য ব্যবহার্য দ্রব্যের বিক্রি ও উৎপাদন।
কাপড় কাঁচা সাবান, গুড়ো সাবান ও প্লাস্টিকজাত বিভিন্ন প্রকার দ্রব্য তৈরির জন্য উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় ৬৬ টি কারখানা আছে। শেষ ছয় মাসে সেই দ্রব্যগুলির কোনওটির উৎপাদন ও বিক্রি কমেছে ৪০ শতাংশ, কোনওটির ২৮ শতাংশ। শেষ দুই মাসে বিক্রির রেখাচিত্র দ্রুত নামছে বলেই জানিয়েছেন ব্যবসায়ীদের একটা অংশ। ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে জানা গিয়েছে, উত্তরবঙ্গে কাপড় কাচার সাবানের কারখানা আছে ১৮ টি। সব ক’টি কারখানা মিলিয়ে মাসিক গড় বিক্রি ছিল ২৭ কোটি টাকা। সেই বিক্রি কমে দাঁড়িয়েছে ১৭ কোটিতে। একটি সাবান কারখানার মালিক বলেন, ‘‘শুরুতে আমরা ভেবেছিলাম কাপড় কাচা সাবানের বদলে ক্রেতারা হয়ত গুড়ো সাবানের দিকে ঝুঁকছে। পরে সমীক্ষা করে জানা গেল সেই ধারণা ভুল। ক্রেতারা ব্যবহার কমিয়ে দেওয়াতেই বিক্রি কমছে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘গ্রামাঞ্চলের একটা অংশের মানুষ এখনও কাপড় কাচা সাবানকেই গায়ে মাখার সাবান হিসাবে ব্যবহার করে। সেই অংশের ক্রেতারাও মুখ ফিরিয়ে নিতে শুরু করেছে।’’ একটি গুঁড়ো সাবান কারখানার ম্যানেজার বলেন, ‘‘ক্রেতারা শুধু পরিমাণে কম কিনছেন তাই নয়, দামেও কম চাইছেন। আর সেই চাহিদা মেনে দ্রব্য উৎপাদন করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে আমাদের।’’
কেন কমছে বিক্রি?
বাজার যে রকম
• কাপড় কাচা সাবান: উত্তরবঙ্গে ১৮টি কারখানা। উৎপাদন ও বিক্রি কমেছে ৪০%
• গুঁড়ো সাবান: ১০টি কারখানা। উৎপাদন, বিক্রি কমেছে ৩০%
• প্লাস্টিকজাত দ্রব্য (জলের ট্যাঙ্ক, জলের পাইপ প্রভৃতি): ২১টি কারখানা। উৎপাদন ও বিক্রি কমেছে ৪০%
• প্লাস্টিকজাত দ্রব্য (প্লাস্টিকের কৌটো, জার, বোতল প্রভৃতি): ১৭টি কারখানা। উৎপাদন, বিক্রি কমেছে ২৮%
(সব হিসেব গত ছ’মাসের। তথ্য সূত্র: নর্থবেঙ্গল ইন্ডাস্ট্রিজ় অ্যাসোসিয়েশন)
প্লাস্টিকজাত দ্রব্য প্রস্তুতকারক একটি নামী সংস্থার এক পদস্থ আধিকারিক জানিয়েছেন, একটি অভিজ্ঞ সংস্থাকে দিয়ে মাসখানেক আগে তাঁরা বাজার সমীক্ষা করিয়েছিল। তাতে দেখা গিয়েছে গড় কাজের দিনের সংখ্যা কমে যাওয়ায় আয় কমেছে মধ্যবিত্ত সম্প্রদায়ের। যে নির্মাণ শ্রমিকটি আগে মাসে গড়ে ২০ দিন কাজ করত সে এখন গড়ে ১৫ দিন কাজ করছে। ইনসেনটিভ বা যেমন কাজ তেমন আয় এই চুক্তিতে যারা কাজ করেন তাদের আয়ও উল্লেখযোগ্য ভাবে কমেছে। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই তাঁদের ক্রয় ক্ষমতাও কমেছে। ওই আধিকারিক বলেন, ‘‘খুব প্রয়োজন না হলে কেউ নতুন করে জিনিস কিনতে চাইছেন না। ‘চালিয়ে নেওয়া’ মানসিকতা ক্রমেই বাড়ছে। বিজ্ঞাপনেও আগের মতো আর আকৃষ্ট করা যাচ্ছে না ক্রেতাদের।’’ নর্থবেঙ্গল ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক সুরজিৎ পাল বলেন, ‘‘বিক্রি ও উৎপাদন কমে যাওয়ায় উত্তরবঙ্গের কারখানাগুলিতে এরপর স্বাভাবিকভাবেই শ্রমিক ছাঁটাই শুরু হবে। তখন পরিস্থিতি আরও জটিল হবে।’’