উৎস নেপাল ও কোচবিহার।
ফের ভূমিকম্প। কেঁপে উঠল শিলিগুড়ি ও জলপাইগুড়ি-সহ উত্তরবঙ্গের একটা বড় অংশ। রবিবার ছুটির সকালে বাজারে, চায়ের দোকানের আড্ডার মাঝেই মৃদু দুলুনি টের পায় দুই শহর। কম্পন টের পেয়েই অনেকে আতঙ্কগ্রস্ত অবস্থায় বাড়ি থেকে রাস্তায় বেরিয়ে পড়েন। আবহাওয়া দফতর সূত্রের খবর, রিখ্টার স্কেলে কম্পনের তীব্রতা ছিল ৫.৫। বিহার সংলগ্ন নেপালের ধারান থেকে ৭০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে এটির উৎসস্থল ছিল। শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ি ছাড়াও কোচবিহারে একটি মৃদু কম্পন হয় পরে। এর উৎসকেন্দ্র ছিল কোচবিহারই। তীব্রতা ছিল ২.৮। তবে এ দিনের কোনও কম্পনেই কোনও ক্ষয়ক্ষতির খবর মেলেনি। ছোট-বড় মিলিয়ে এ বছর অন্তত পাঁচটি ভূমিকম্প উত্তরবঙ্গে হয়ে গেল। একদিকে কম্পন, অন্যদিকে বৃষ্টি। দুইয়ে মিলে রবিবার খানিকটা আতঙ্কে ও অস্বস্তিতেই কাটাল উত্তরবঙ্গ।
আবহাওয়া দফতর সূত্রের খবর, পুরো উত্তরবঙ্গই সিসমিক জ়োন-ফোর বা কম্পনের অতি সংবেদনশীল জায়গায় দাড়িয়ে। গত বছরেও একাধিক কম্পনে চিন্তা বেড়েছিল দুই শহরের পুরনো বাড়িগুলি নিয়ে। কারণ, তার কয়েক বছর আগেই শিলিগুড়িতে বড় কম্পনে একাধিক বাড়িতে ফাটল দেখা দেয়। কিছুদিন আগে কম্পনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল তিস্তার উপর সেবক সেতুও। শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ি দু’টি শহরই বাড়ছে। তাল মিলিয়ে বাড়ছে বহুতল। তার মধ্যে বারবার কম্পন চিন্তা বাড়িয়েছে।
শিলিগুড়িতে প্রবল বৃষ্টিও হয়েছে এ দিন। নিম্নচাপ অক্ষরেখা ফের অবস্থান বদল করেছে বলে আগামী আরও দুদিন ভারী বৃষ্টি চলবে বলেই ইঙ্গিত দেন আবহাওয়াবিদরা। হাকিমপাড়ার বৃদ্ধা সবিতা সাহার দাবি, কম্পনের পর আবার কম্পন হয়। কিন্তু বৃষ্টির মধ্যে কম্পন হলে কী ভাবে বাইরে আশ্রয় নেওয়া যাবে, তা ভেবে অনেকেই আতঙ্কিত হয়ে পড়েন।
এ দিন কোচবিহারের কিছু এলাকাতেও বেলা সাড়ে ১০টা নাগাদ কম্পন অনুভূত হয়। যদিও তার তীব্রতা রি্খটার স্কেলে ২.৮ ছিল বলে জানায় আবহাওয়া দফতর। জানা গিয়েছে, এটির উৎসস্থল ছিল কোচবিহারই। শহর জুড়ে বহুতলের সংখ্যা বেড়ে যাওয়া নিয়ে বাসিন্দাদের একাংশের ওই উদ্বেগ। বহুতল নির্মাণে বিধি ভাঙা হচ্ছে বলে দাবি বিরোধীদের। কোচবিহার দক্ষিণ কেন্দ্রের বিজেপি বিধায়ক নিখিলরঞ্জন দে বলেন, “এক সময় রাজবাড়ির বেশি উচ্চতার বেশি উঁচু বাড়ি না করার রেওয়াজ ছিল। তাছাড়া ভূমিকম্প-প্রবণ এলাকা বলে তিনতলার বেশি উঁচু বাড়ি হত না। সে সব পাট অনেক আগেই চুকেছে। অনেক বহুতলের ক্ষেত্রে নিয়ম মানা হয়নি। ফলে উদ্বেগ তো আছেই।” কোচবিহার পুরসভার চেয়ারম্যান, তৃণমূল নেতা রবীন্দ্রনাথ ঘোষ অবশ্য বলেন, “নতুন বোর্ড চার মাস হল দায়িত্ব নিয়েছে। বহুতল-সহ সমস্ত নির্মাণের অনুমতির ক্ষেত্রেই সব নথি যাচাই হচ্ছে। বহুতলের নকশা অনুমোদনে মাটি পরীক্ষার রিপোর্ট লাগছে। নির্দিষ্ট উচ্চতার বেশি বহুতলে অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না।’’ তাঁর দাবি, সব অনলাইনে হচ্ছে বলে বিশেষজ্ঞরাও সব কিছু দেখতে পাচ্ছেন।