সাবধানতা: ভয়টা ছিলই। তার উপর বৃহস্পতিবারই করোনাভাইরাসে দেশে প্রথম মৃত্যু হয়েছে। রায়গঞ্জের ফুটপাতেও বিকোচ্ছে মাস্ক। নিজস্ব চিত্র
প্রতিবন্ধী শিশুদের কী ভাবে শারীরিক ও মানসিক বিকাশ সম্ভব, সেই বিষয়ে যৌথভাবে আন্তর্জাতিক স্তরের সেমিনারের আয়োজন করেছিলেন রায়গঞ্জ মেডিক্যাল কলেজ ও রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ওই সেমিনারের সহযোগিতায় ছিল রায়গঞ্জের উকিলপাড়া এলাকার একটি বেসরকারি শিশুবিকাশ ও শিশুশিক্ষা কেন্দ্র। কিন্তু করোনাভাইরাস ছড়ানোর আশঙ্কায় সেই সেমিনার বাতিল করে দিলেন হাসপাতাল ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ঠিক ছিল, আগামী ২০ থেকে ২২ মার্চ হাসপাতালের লেকচার থিয়েটার হল ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সি মেমোরিয়াল হলে ওই সেমিনার হবে। এই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিতদের মধ্যে ছিলেন নেদারল্যান্ডসের কয়েক জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকও।
হাসপাতালের অধ্যক্ষ দিলীপ পাল ও বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দুর্লভ সরকারের বক্তব্য, সরকারি নির্দেশে করোনাভাইরাস ছড়ানোর আশঙ্কায় ওই সেমিনার বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। দুর্লভের দাবি, বুধবার কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক ও ইউজিসি থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে দু’টি পৃথক নির্দেশিকা পাঠানো হয়েছে। দু’টি নির্দেশিকাতেই করোনাভাইরাসের আশঙ্কায় আগামী ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনও রকম জমায়েত না করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেই নির্দেশের প্রেক্ষিতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে আন্তর্জাতিক স্তরের ওই সেমিনার বাতিল করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে সে কথা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
দিলীপের আরও দাবি, রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে বিশেষ কিছু সতর্কতামূলক পদক্ষেপ করার নির্দেশিকা পাঠিয়েছিল। সেই প্রেক্ষিতেও আপাতত ওই সেমিনার বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
রায়গঞ্জের উকিলপাড়া এলাকার ওই বেসরকারি শিশু বিকাশ ও শিশু শিক্ষা কেন্দ্র দীর্ঘদিন ধরে প্রতিবন্ধী শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের কাজ করে চলেছে। ওই কেন্দ্রের কর্ণধার নীলাঞ্জন মুখোপাধ্যায় রায়গঞ্জ মেডিক্যালে শিশুরোগ বিশেষঞ্জ চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত। তিনি মাসখানেক আগে হাসপাতাল ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে প্রতিবন্ধী শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের পদ্ধতি সম্পর্কে একটি আন্তর্জাতিক সেমিনার আয়োজন করার প্রস্তাব দেন। হাসপাতাল ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সেই প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে ওই সেমিনারের আয়োজন করেন। নীলাঞ্জনের দাবি, ২০ মার্চ হাসপাতালের লেকচার থিয়েটার হলে ও ২১ এবং ২২ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সি মেমোরিয়াল হলে দিনভর আন্তর্জাতিক স্তরের ওই সেমিনার আয়োজন করার দিনক্ষণ চূড়ান্ত করা হয়েছিল। ওই সেমিনারে উত্তর দিনাজপুর জেলার বিভিন্ন এলাকার প্রতিবন্ধী শিশুরা ছাড়াও তাঁদের অভিভাবকদের হাজির হওয়ার কথা ছিল। পাশাপাশি, সেমিনারে রায়গঞ্জ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের চিকিৎসকদের একাংশের পাশাপাশি দিল্লি, কলকাতা ও মুম্বইয়ের চিকিৎসকদের বক্তব্য পেশ করার কথা ছিল। সেমিনারে বিশেষ বক্তা হিসেবে বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডসের কয়েক জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের যোগ দেওয়ার কথা ছিল।
নীলঞ্জনের কথায়, বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে প্রতিবন্ধী শিশুদের কী ভাবে শারীরিক ও মানসিক বিকাশ সম্ভব, তা অনেকেই জানেন না। এই বিষয়ে জেলার চিকিৎসকদের একাংশ ও প্রতিবন্ধী শিশুদের পরিবারের লোকেদের সচেতন করতেই জেলায় এই প্রথম আন্তর্জাতিক স্তরের ওই সেমিনারের আয়োজন করা হয়েছিল। কিন্তু করোনাভাইরাসের আশঙ্কায় সরকারি নির্দেশে তা বাতিল হয়ে গিয়েছে। ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক।