গুড় তৈরির জন্য জাল দেওয়া হচ্ছে আখের রস। — নিজস্ব চিত্র
যদি পুরনো নোটে দাম নিতে রাজি থাকেন, তা হলে পুরো দরই মিলবে। একশো টাকায় নিতে গেলে, দরও পড়ে যাবে।
বৃহস্পতিবার মালদহের সাপ্তাহিক সামসি হাটে ১০ কুইন্ট্যাল গুড় বিক্রি করতে গিয়ে রতুয়ার ব্যবসায়ী নুরুল হক এই শর্তের মুখে পড়লেন। আমবাগানের ধাঁচে আখের জমি লিজে নিয়ে গুড় তৈরি করে বিক্রি করেন তিনি। গত কয়েক দিন ধরে লাগাতার বাড়তি শ্রমিক দিয়ে আখ পিষে গুড় তৈরি করেছেন। ওই গুড় বেচে শ্রমিকদের মজুরির পাশাপাশি জমি মালিককেও লিজের টাকার কিছুটা দেওয়ার কথা। কিন্তু হাটে পাইকারি ব্যবসায়ীদের দরদাম শুনে চোখ কপালে ওই ব্যবসায়ীর।
তাঁকে বলা হল, পুরনো পাঁচশো বা এক হাজার টাকার নোট নিলে দাম মিলবে কুইন্ট্যাল প্রতি চার হাজার টাকা। আর একশো টাকায় নিলে মিলবে তিন হাজার টাকা। শেষে ক্ষতির মুখে পড়তে হবে জেনেও কুইন্ট্যাল প্রতি তিন হাজার টাকা দামেই রাজি হলেন তিনি। কিন্তু টাকার অভাবে পুরো গুড়ও বিক্রি হল না। তাতেও অর্ধেক গুড় ফের ফেরত নিয়ে ফিরলেন বাড়িতে। শুধু নুরুল হক নন। ভরা মরসুমে লাভের গুড়ে নোটের আকাল এ ভাবে থাবা বসানোয় মাথায় হাত পড়েছে চাঁচল মহকুমার আখ চাষি থেকে শুরু ব্যবসায়ীদের।
নুরুল বলেন, ‘‘জমি লিজে চাষ করার পর গুড়ি বিক্রি করেই জমি মালিককে টাকা মিটিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু পুরনো টাকা নিয়ে কী করব। ওই টাকা শ্রমিকরা তো বটেই, জমি মালিকও নেবেন না।’’ তাঁর কথায়, ‘‘যা অবস্থা এ বার পথে বসতে হবে।’’
চাঁচল মহকুমায় সব থেকে বেশি আখ চাষ হয় রতুয়ায়। এ ছাড়া মানিকচক, কালিয়াচকেও আখের চাষ হয়। বিঘা প্রতি ১০ হাজার টাকা খরচ করে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা পাওয়া যায়। লাভজনক হওয়ায় হরিশ্চন্দ্রপুর ও চাঁচলের বিস্তীর্ণ এলাকাতেও আখের চাষ শুরু হয়েছে। আমবাগানের মতোই আখের ব্যবসা হয়। চাষি আখ চাষ করার পর তা ব্যবসায়ীরা লিজে নিয়ে নেন। মহকুমার বিভিন্ন এলাকায় গড়ে উঠেছে গুড় তৈরির কারখানা। মালদহের বিভিন্ন প্রান্তে ওই গুড় বিক্রি করা হয়। কিন্তু এবার ব্যবসায়ীরাই যে ক্ষতির মুখে পড়েছেন, তাই নয়। টাকার আকালে জমি লিজের টাকা ফেরত না পেয়ে অন্য চাষও করতে পারছেন না জমি মালিকরা। রতুয়ার বাহিরকাপের চাষি হাসেন আলি বলেন, ‘‘আখের জমি লিজ দিয়ে পাওয়া টাকায় বাকি জমিতে গম, ভুট্টা চাষ করি। লিজের টাকা না পেয়ে চাষ শুরুই
করতে পারিনি।’’