গোপালচন্দ্র কুণ্ডু। নিজস্ব চিত্র।
সত্তরের দশকে সেই হায়দরাবাদ থেকে প্রথম দোতলা বাস কোচবিহারে নিয়ে এসেছিলেন যে চালকেরা তিনি তাঁদের এক জন।
উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের দোতলা বাসের অন্যতম প্রথম চালক হিসেবে কোচবিহার থেকে সোনাপুর, বক্সিরহাট রুটে দাপিয়ে বাসও চালিয়েছেন। কয়েক বছর আগে চাকরি থেকে অবসর নিয়েছেন। কিন্তু দোতলা বাসের প্রতি টান এখনও সমান। মঙ্গলবার কোচবিহার সুনীতি রোড লাগোয়া নিগমের ডিপোয় এসে সেইসব দিনের স্মৃতি নিয়ে রীতিমতো নস্টালজিক হয়ে পড়লেন সেই গোপালচন্দ্র কুণ্ডু। দোতলা বাসের হারিয়ে যাওয়া সোনালি দিন ফিকে হওয়া নিয়ে আক্ষেপও ঝরল কথায়।
নিগম সূত্রেই জানা গিয়েছে, গোপালবাবুর বাড়ি মাথাভাঙা শহরে। এ দিন অবসরপ্রাপ্ত কর্মী সংগঠনের একটি কর্মসূচিতে যোগ দিতে আশি বছরের ওই প্রবীণ কোচবিহারে আসেন। সুনীতি রোড লাগোয়া নিগমের ডিপোয় থাকা বাসের ভেতরে ঘুরে দেখার ফাঁকে গোপালবাবু বলেন, “ ট্রেনে চেপে আমরা চারজন হায়দরাবাদে গিয়েছিলাম। সংস্থার জন্য কেনা দু’টি দোতলা বাস চালিয়ে কোচবিহার আনতে হবে। আমি ছাড়াও নরেশ বসু, সত্যপ্রসাদ শর্মা, অনু দাস চালক হিসেবে ছিলাম। তাঁদের মধ্যে অনুবাবু ও আমি এখনও বেঁচে রয়েছি। যতদূর মনে পড়ছে প্রায় এক সপ্তাহ লেগেছিল কোচবিহারে পৌঁছতে। পরে রুটে চালিয়েছিলাম।”
স্মৃতি হাতড়ে তুলে আনেন যাত্রাপথের নানা অভিজ্ঞতাও। কেমন ছিল দোতলা বাসের যাত্রী চাহিদা? গোপালবাবু বলেন, ‘‘প্রতি ট্রিপেই ভিড় উপচে পড়ত। লোকেরা অপেক্ষা করে থাকত। তবে এখন অবশ্য শুনছি ওই বাস নিয়মিত রাস্তায় নামছে না। ভাবলে তাই খারাপ লাগে। কিছু একটা করে দোতলা বাসের সেই সোনালি দিন ফেরানো যায় না?’’ নিগমের পরিচালন বোর্ডের সদস্য আবদুল জলিল আহমেদ বলেন, “এখন গতির যুগ। নিগমের অন্য বাসেই যাত্রীর ঝোঁক। তবু ঐতিহ্য রক্ষার চেষ্টা চালাচ্ছি।”
নিগম সূত্রের খবর, সত্তরের দশকে দু’টি বাস দিয়ে এনবিএসটিসিতে দোতলা বাসের যাত্রা শুরু। নব্বইয়ের দশক পর্যন্ত নিয়মিত চালানো হত। পুরোনো হয়ে যাওয়ায় সমস্যা হয়। গতি কম, তেল খরচ বেশি বলে যুগের সঙ্গে পাল্লাও দিতে পারছে না। গন্তব্যে পৌঁছতেও বেশি সময় লাগছে। তারপরেও কোচবিহার-আলিপুরদুয়ার রুটে এই বাস চালানোর চেষ্টা হয়েছিল। যাত্রীদের সাড়া মেলেনি। তবে যন্ত্রপাতি মেরামত করে বিশেষ দিনে তা চালানো হচ্ছে। নিগমের চেয়ারম্যান মিহির গোস্বামী বলেন, “নতুন দোতলা বাস কেনার চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু কোন নির্মাতা সংস্থা রাজি হয়নি। ঐতিহ্য ধরে রাখতে পুরানো বাসগুলিকেই মেরামত করে বিশেষ দিনে রাস্তায় নামানো হচ্ছে।”