ডেঙ্গিতে প্রিয়জনকে শুধু হারাইনি, ওই রোগ আমার সুখের সংসারটা ভেঙে দিয়ে গেল। আমি তো আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছি। অসুস্থ স্বামীকে নার্সিংহোম, হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে গিয়ে যে অভিজ্ঞতা হয়েছে, তাতে শহরের চিকিৎসা ব্যবস্থার উপরে আস্থাটাই চলে গিয়েছে। যে চিকিৎসককে ভগবান মনে করে অসুস্থ প্রিয়জনদের চিকিৎসার ভার দিই আমরা, তাঁরা কতটা দায়সারা কাজ করেন, চোখের সামনে তা দেখে কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না।
জ্বরে আক্রান্ত স্বামীকে নবমীর দিন রাত দেড়টার সময় তিলক রোডের একটি নার্সিংহোমে নিয়ে যাই। তারা দরজাই খোলেনি। বাধ্য হয়ে হাসপাতালে নিয়ে যাই। জ্বরের সঙ্গে তখন ওর শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। চিকিৎসক ইসিজি, রক্তচাপ পরীক্ষা করে জানালেন, সব ঠিক আছে। বললেন, ও একটু গ্যাস হয়েছে। ও তখন দরদর করে ঘামছে। পরদিন ভোরে যখন রক্তে শর্করা এবং রক্তচাপ অস্বাভাবিক কমে যায়, তখন চিকিৎসক বলেন উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে নিয়ে যেতে। এটা কি হাসপাতালের চিকিৎসা পরিষেবা? আমরা সেবক রোডের একটি নার্সিংহোমে নিয়ে যাই ভোর ৬টা নাগাদ। যে চিকিৎসকের অধীনে ভর্তি করানো হয়, তিনি নেই। কিছুক্ষণ পরেই জানানো হয়, অবস্থা আশঙ্কাজনক। আইসিইউ-তে স্থানান্তরিত করা হয়। বেলা ১১টা নাগাদ যখন চিকিৎসক আসেন, তখন আর কিছু করার নেই।
এনএসওয়ান পরীক্ষায় ওর রক্তে ডেঙ্গির জীবাণু মিলেছে। মুখে চিকিৎসক বলছেন, ডেঙ্গি হয়েছে। মৃত্যুর কারণে আবার তিনি তা লেখেননি। কেন লেখেননি, জানা নেই। রোগী এবং তার পরিবারকে ধোঁয়াশায় রাখতে চাইছেন কেন? কেন সঠিক চিকিৎসা পরিষেবাটুকুও তারা পাবে না?
শহরে গত কয়েক বছর ধরে ডেঙ্গি হচ্ছে। অথচ প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিতে পুরসভা, প্রশাসন কারও হেলদোল নেই। পত্রপত্রিকায় দেখছি, রোগ নিয়ে নেতাদের তরজা চলছে। কিন্তু কাজের কাজ নেই। বাপনের মৃত্যুর পর দেখলাম, ওয়ার্ডে ডেঙ্গি প্রতিরোধের কাজ জোর কদমে শুরু হল। একটা জীবন গেলে তবে দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের টনক নড়বে? এ কোন শহরে রয়েছি?
(মৃত বাপন দের স্ত্রী)