সরকারি কোয়ার্টারে বসে টাকা নিয়ে রোগী দেখেন চিকিৎসক! নতুন বছরে ‘ফি’ বেড়েছে দ্বিগুণ। —নিজস্ব চিত্র।
প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের আউটডোর পরিষেবা বন্ধ করে দিয়ে টাকার বিনিময়ে রোগী দেখেন সরকারি চিকিৎসক। কোয়ার্টারে বসে দিনের পর দিন টাকার বিনিময়ে চিকিৎসা পরিষেবা দিচ্ছেন তিনি। আগে তাঁর ‘ভিজ়িট’ ছিল ১০০ টাকা। এখন রোগী দেখতে ২০০ টাকা করে নিচ্ছেন তিনি। এমনই চাঞ্চল্যকর অভিযোগ উঠল উত্তর দিনাজপুরের করণদিঘি ব্লকের রসাখোয়া প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সরকারি চিকিৎসকের বিরুদ্ধে। সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরাতেও সেই ছবিও ধরা পড়ল। ধরা পড়ে কাঁচুমাচু মুখ চিকিৎসক স্বীকারও করে নিয়েছেন যে, সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক হয়ে টাকার বিনিময়ে রোগী দেখছেন। এই অভিযোগ পেয়ে অন্তর্তদন্ত করার কথা জানিয়েছে জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক।
রসাখোয়া স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসক বেঞ্জামিন মার্ডি এবং মঞ্জুপর আলম। বেশ কিছু দিন ধরেই স্থানীয়রা অভিযোগ করছিলেন স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সীমানার মধ্যে সরকারি কোয়ার্টারে টাকার বিনিময়ে ‘চেম্বার’ করছেন তাঁরা। চিকিৎসা করিয়ে বার হওয়া রোগী এবং রোগীর আত্মীয়দের অভিযোগ চমকে দেওয়ার মতো। তাঁদের দাবি, ওই স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ২ জন চিকিৎসক আছেন। তা সত্ত্বেও হাসপাতালের বহির্বিভাগে চিকিৎসা করাতে এলে কোনও চিকিৎসককে পাওয়া যায় না। তাঁরা আরও জানান, গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ‘ফি’ ছিল ১০০ টাকা। এখনও সেটা হয়েছে ২০০ টাকা।
আব্দুল রফিক নামের এক রোগীর আত্মীয় বলেন, ‘‘গত বৃহস্পতিবার ছোট ভাইপোকে ডাক্তার দেখাতে এসেছিলাম। সকাল ১০টায় এসে বসে আছি। কিন্তু জরুরি বিভাগ, আউটডোরে কোনও চিকিৎসক ছিলেন না। আমাদের বলা হল, ২০০ টাকা দিয়ে পাশের কোয়ার্টারে গিয়ে রোগী দেখাতে।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘আমি আজও (শুক্রবারও) ডাক্তারবাবুর কাছে এসেছিলাম। তবে আজ তিনি টাকা নেননি।’’ ছেলেকে ডাক্তার দেখিয়ে বেরনোর পর মিষ্টু মজুমদার নামে এক মহিলার অভিযোগ, ‘‘আমি ডিসেম্বর মাস থেকে ডাক্তারবাবুকে দেখাচ্ছি। তাই আমাকে ১০০ টাকা ‘ভিজ়িট’ দিতে হয়েছে। তবে আজ আমার ছেলের জন্য ‘ভিজ়িট’ ছিল ২০০ টাকা।’’
অভিযোগের সত্যাসত্য খতিয়ে দেখতে সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধি নিজেও ২০০ টাকা দিয়ে নাম লেখান। তাঁর কাছ থেকে চিকিৎসক মঞ্জুর আলমের এক প্রতিনিধি টাকা নেন। পরে ক্যামেরা দেখে ওই টাকা ফেরত দেন। ক্যামেরার সামনেই ভুল স্বীকারও করেন ওই চিকিৎসরক। অন্য দিকে, ওই সময় বেঞ্জামিন মার্ডি নামে অপর চিকিৎসকের ওই সময় আউটডোরে থাকার কথা থাকলেও তাঁকে দেখতে পাওয়া যায়নি।
পুরো বিবরণ শুনে জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক পূরণকুমার শর্মা বলেন, ‘‘এই অভিযোগ কানে এসেছে। এটা অনৈতিক কাজ। অভিযোগ খতিয়ে দেখে ৭ দিনের মধ্যে ওই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’’