পাঁচ বছরের ভাইকে নিয়ে রোজগারে পঞ্চম শ্রেণির আকাশ। পিছনের গাড়িতে সপ্তম শ্রেণির ছাত্র সাদিকুল। নিজস্ব চিত্র।
বুধবার দুপুর একটা। গোলাপগঞ্জ বাজার সংলগ্ন চরিঅনন্তপুর মার্কেটের রাস্তার পাশে চড়া রোদে সাইকেল-ভ্যানে করে আইসক্রিম নিয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে জয়, সাদিকুল, আকাশরা। এরা পঞ্চম থেকে সপ্তম শ্রেণির ছাত্র। স্কুল ও মাদ্রাসা দুই এখন বন্ধ। এই শিশু-কিশোরদের কারও বাবা দিনমজুরের কাজে ভিন রাজ্যে। আবার কারও বাবা ফেরি করেন। আর তাঁদের মায়েরা বিড়ি বাঁধেন। তবুও সংসারে অভাব। আর তাই, সংসারে কিছুটা আর্থিক সাহায্য করতে ২৫ শতাংশ কমিশনে গ্রামে ঘুরে ঘুরে আইসক্রিম বিক্রি করছে আকাশরা বলে দাবি। সারাদিন ঘুরে মেরে কেটে তাঁদের আয় হচ্ছে ১২০ থেকে ১৩০ টাকা। তা নিয়েই রোজ সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরছে এই শিশু-কিশোরেরা।
গোলাপগঞ্জ হাই স্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র জয় প্রামাণিক। বয়স বারোর জয়ের বাড়ি চরিঅনন্তপুরের কামারপাড়ায়। বাবা পবন ভিন রাজ্যে কাজে গেছেন। মা বাসন্তী বিড়ি বাঁধেন। তাঁরা তিন ভাই। সেই বড়। জয় বলে, "বাবা-মায়ের রোজগারে সংসার চলে না। স্কুল এখন বন্ধ তাই পরিবারের পাশে দাঁড়াতে আমি কয়েক মাস ধরে আইসক্রিম বিক্রি করছি। এলাকার এক ব্যাবসায়ী আমাকে সাইকেল-ভ্যান দিয়েছেন। প্রতিদিন কয়েকশো টাকার আইসক্রিম ভরে দেন। আমি গোলাপগঞ্জ বাজার থেকে শুরু করে চরিঅনন্তপুরের বিভিন্ন গ্রামে গ্রামে ঘুরে এই আইসক্রিম বিক্রি করি। ১০০ টাকার আইসক্রিম বিক্রি করলে কমিশন বাবদ পাই ২৫ টাকা। প্রতিদিন ১২০ থেকে ১৩০ টাকা কমিশন পাই।"
একইভাবে এলাকায় ঘুরে ঘুরে আইসক্রিম বিক্রি করে গোলাপগঞ্জ খড়িবোনা গ্রামের ১৩ বছরের কিশোর, সপ্তম শ্রেণির সাদিকুল হক।। সাদিকুল বলে, "সংসারে সাহায্য করতেই আমি কমিশনে আইসক্রিম বিক্রি করছি। মাদ্রাসা খোলা থাকলে এই কাজ করতে পারতাম না।" চরিঅনন্তপুর হাটখোলার পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র আকাশ সাহা এ দিন পাঁচ বছরের ভাই প্রকাশকে সাইকেল-ভ্যানে চাপিয়ে আইসক্রিম বিক্রি করছিল। তারও একই জবাব। গোলাপগঞ্জের পঞ্চায়েত সদস্য হারাধন রজক বলেন, "করোনা পরিস্থিতিতে এলাকার অনেক পরিবারেরই আর্থিক অবস্থা শোচনীয়। সে কারণেই এমন ছোট ছোট ছেলেরা রোজগারে পথে নেমেছে। প্রশাসনের বিষয়টি দেখা উচিত।"