দায়িত্ব: বৌমা গিয়েছেন দুয়ারে সরকার কর্মসূচির লাইনে। নাতনি ঘুমিয়ে পড়েছে দিদার কোলে। ছবি: স্বরূপ সাহা।
কোলের শিশুটি কেঁদেই চলেছে। মা বেশ বুঝতে পারছিলেন, তার খিদে পেয়েছে। কিন্তু তাকে নিয়ে যে কোনও আড়ালে বসে স্তন্যপান করাবেন, তেমন আড়াল কোথায়?
দুয়ারে সরকার শিবিরে এসে জলঘর পঞ্চায়েতের বাসিন্দা রূপা গাছুয়া পড়েছিলেন এমন বিপদে। চারদিকে ভিড়, হইচইয়ের মধ্যে তিনি বুঝেই পাচ্ছিলেন না, কোথায় একটু আড়াল নিয়ে বসবেন বাচ্চাকে খাওয়াতে। এমন মহিলার সংখ্যা কম নয় দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার বিভিন্ন শিবিরে। রাজ্য সরকার থেকে বলা সত্ত্বেও কেন তাঁদের নিয়ে কোনও চিন্তাভাবনা নেই জেলা প্রশাসনের, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
দক্ষিণ দিনাজপুরের জেলাশাসক আয়েশা রানি বলেন, ‘‘শিবিরে অনেক ঘেরা জায়গা রয়েছে। তা ছাড়াও, স্কুলের একাধিক ঘর খুলে দেওয়া হচ্ছে। সেখানেই বাচ্চাদের খাইয়ে নিতে পারেন মায়েরা।’’ তবে এ দিন দু’টি শিবির ঘুরে এ রকম বিনা কাজে খুলে রাখা কোনও ঘর নজরে আসেনি।
বালুরঘাট ব্লকের জলঘর পঞ্চায়েতের চককাশি এসএস হাইস্কুলে এ দিন শিবির ছিল। রূপার মতো অনেক মা তাঁদের ছোট্ট শিশুদের নিয়ে হাজির হতে বাধ্য হয়েছিলেন সেই সব শিবিরে। আলাদা লাইন নেই। আলাদা ঘর নেই বাচ্চাদের স্তন্যপান করানোর। কোনও কোনও স্কুলের শিবিরে শৌচাগারে জলটুকুও পর্যন্ত ছিল না বলে অভিযোগ। রূপার কথায়, ‘‘বাচ্চার কাঁদা থামাতে হিমশিম খাচ্ছিলাম। একটা আলাদা ঘর থাকলে ভাল হত।’’ এ দিন শিবিরে লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্পে ফর্ম নিতে এসেছিলেন তিনি। ওই শিবিরে ছ’মাসের বাচ্চা নিয়ে হাজির হরিণকুড়ির বাসিন্দা সুকড়া ওরাওঁয়েরও একই দাবি ছিল। শিবিরে এ দিন অনেক মা-ই ছোট্ট বাচ্চা নিয়ে হাজির হন।
প্রায় একই রকম পরিস্থিতি ছিল বালুরঘাট পুরসভা এলাকায় জেএলপি বিদ্যাচক্রেও। বেলা সাড়ে ১২টা পর্যন্ত ওই স্কুলের শৌচাগারে জল না পেয়ে ক্ষুব্ধ মহিলারা। অনেকেই সেই অভিযোগ করেন। যদিও পরে বিকল্প ব্যবস্থা করার আশ্বাস দেন আয়োজকরা। সেখানই দেখা হল, শান্তকলোনির বাসিন্দা পিঙ্কি মহন্ত সাহার সঙ্গে। ছোট্ট বাচ্চা নিয়ে অনেকক্ষণ এসে লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘আলাদা একটা ঘর থাকলে তো ভালই হত। আমাদের মতো অনেকেই এই সমস্যায় পড়েন। উপায় কী!’’