Erosion

Erosion: ‘হাতে গড়া বাড়ি নিজেই ভাঙছি’

চারিদিকে ভাঙা বাড়ির ধ্বংসস্তূপের ছবি।  সব হারিয়ে যন্ত্রণা চাপা শূন্য চোখে সে দিকে চেয়ে রয়েছেন কেউ কেউ।

Advertisement

জয়ন্ত সেন 

বীরনগর  শেষ আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৬:২৩
Share:

সম্বল: ভাঙনের আতঙ্কে পাকা ঘর ভাঙা চলছে মালদহের বীরনগরের রবিদাস পাড়ায়। মঙ্গলবার। নিজস্ব চিত্র।

কোথাও বড় বড় হাতুড়ি ও শাবল দিয়ে পাকা বাড়ির ইটের দেওয়াল ভাঙা হচ্ছে। সেই ইট ট্রাক্টরের ট্রলিতে তুলে কেউ রাখছেন বেশ কিছুটা দূরে রাস্তার পাশে অথবা কোনও আত্মীয়ের বাড়ির ফাঁকা জায়গায়। আবার কোথাও জেসিবি দিয়ে ভাঙা হচ্ছে পাকা বাড়ি। গঙ্গা ভাঙনের আতঙ্কে এ ভাবেই একের পর-এক ঘরবাড়ি ভেঙে নেওয়ার হিড়িক এখন বীরনগর ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের মুকুন্দটোলা, রবিদাস পাড়া ও সরকারটোলায়। মঙ্গলবার, দিনভর এই গ্রামগুলিতে শুধুই বাড়ি ভাঙার শব্দ। আর চারিদিকে ভাঙা বাড়ির ধ্বংসস্তূপের ছবি। সব হারিয়ে যন্ত্রণা চাপা শূন্য চোখে সে দিকে চেয়ে রয়েছেন কেউ কেউ।

Advertisement

রবিবার সকাল ছ’টা থেকে বিধ্বংসী ভাঙন শুরু হয় কালিয়াচক ৩ ব্লকের বীরনগর ১ পঞ্চায়েতের সরকারটোলা ও রবিদাস পাড়ায়। মার্জিনাল বাঁধের একাংশ ভেঙে গঙ্গা একের পর-এক গ্রাস করতে থাকে পাকা ঘরবাড়ি। পরে ভাঙন শুরু হয় মুকুন্দটোলা গ্রামেও। সে দিন প্রায় ১০ ঘণ্টার ভাঙনে তিনটে গ্রামের অন্তত ২৫০ পরিবারের ঘরবাড়ি গঙ্গা গ্রাস করে। আর গঙ্গার এই আগ্রাসী রূপে আতঙ্কিত হয়ে নদী পাড় সংলগ্ন ওই তিনটি গ্রামের শতাধিক পরিবার নিজেরাই তাঁদের পাকা ঘরবাড়ি ভেঙে নিতে শুরু করেন।

সোমবারের পাশাপাশি এ দিনও প্রচুর পরিবার তাঁদের ঘরবাড়ি ভেঙে নেন। এ দিন মুকুন্দটোলায় গিয়ে দেখা গেল অন্তত ৫০ থেকে ৬০টি পরিবার তাঁদের পাকা ঘর ভাঙতে ব্যস্ত। প্রায় সকলেরই বাড়ির সামনের রাস্তায় দাঁড়িয়ে একটি করে ট্রাক্টর। বড় বড় হাতুড়ি দিয়ে নিজেরাই নিজেদের বাড়ির দেওয়াল ভাঙছেন আর সেই ইট তুলে দিচ্ছেন ট্রাক্টরের ট্রলিতে।

Advertisement

এক বাসিন্দা মিঠুন মণ্ডল বলেন, ‘‘বাড়ি না ভেঙে আর তো উপায় নেই। যে ভাবে গঙ্গা এগিয়ে আসছে তাতে যদি নিজেই বাড়ি না ভেঙে নিই, তবে পুরোটাই গঙ্গা গ্রাস করে নেবে। তখন কিছুই আর রক্ষা করা যাবে না। তাই একপ্রকার বাধ্য হয়ে মাথাগোঁজার আস্তানা ভেঙে ফেলতে হচ্ছে। এ যে কত বেদনার, কী করে বোঝাব!’’

আর এক দুর্গত দীনবন্ধু ঘোষ বলেন, ‘‘বাড়ি না ভাঙলে গঙ্গা গিলে নেবে। তাই নিজের হাতে তৈরি বাড়ি নেজেই ভাঙছি। আমার আর কোনও জমি নেই। অন্যের জমিতে ভাঙা ইটগুলি রাখছি। আর পরিবার নিয়ে আশ্রয় নিয়েছি চামাগ্রাম স্কুলে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement