প্রশান্ত কিশোর
একের পর এক রিপোর্ট জমা করেছে টিম পিকে। এখনও মাঠে নেমে তাঁরা নানা রিপোর্ট সংগ্রহ করছেন। তাতে দুর্নীতি থেকে কাটমানি, নানা বিষয় উঠে আসছে। দলীয় সূত্রে বলা হচ্ছে, দলে ফের জোয়ার আনতে গেলে কী ভাবে এগোতে হবে— সে কথাই জানাচ্ছে টিম পিকে। তাতে কি কিছু পাল্টাচ্ছে? কোচবিহারে বর্তমানে এমন প্রশ্নেই সরগরম হয়ে উঠতে শুরু করেছে। টিম পিকে’র সদস্যদের কেউই অবশ্য তা নিয়ে প্রকাশ্যে কিছু বলতে চান না। একই অবস্থান তৃণমূলের কোচবিহার জেলার শীর্ষ নেতাদের। তৃণমূলের কোচবিহারের জেলার সভাপতি বিনয়কৃষ্ণ বর্মণ বলেন, “দলের সংগঠন আগের থেকে অনেক শক্তিশালী হয়েছে। আর দল কী সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, তা সাধারণ মানুষ দেখতেই পাচ্ছেন। অন্যায়ের সঙ্গে কোনও আপস করবে না দল।”
জেলার নেতাদের অনেকেই দাবি করেন, টিম পিকে’র পরামর্শেই কোচবিহারে দলের খোলনলচে বদলের পথে হাঁটছেন রাজ্য নেতৃত্ব। সে জন্যই ব্লক কমিটি ভেঙে বিধানসভা ভিত্তিক কমিটি তৈরি করা হয়। নতুন করে ব্লক কমিটি তৈরি করার সময়েও নতুন মুখ আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। উদ্দেশ্য একটাই, দলের মধ্যে যাঁদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে, তাঁদের সংগঠনের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া। শুধু তাই নয়, দুর্নীতিগ্রস্ত নেতাদের বিরুদ্ধে যদি কোনও ফৌজদারি মামলা হয়, সেখানেও দল কোনও হস্তক্ষেপ করবে না। বরং অভিযোগের সঠিক তদন্তের দাবি করবে। দিনহাটার এক তৃণমূল নেতা ধর্ষণের মামলায় অভিযুক্ত হওয়ার পরে টিম পিকে’র পরামর্শেই তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। সেখানে অবশ্য অনেকে বলছেন, ওই নেতার বাইরেও তৃণমূলের একাধিক নেতার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ রয়েছে। খুনের অভিযোগ পর্যন্ত রয়েছে। তাঁদের ক্ষেত্রে দলের অবস্থান এখনও কেন নরম? দুর্নীতিতে অভিযুক্ত বেশ কিছু নেতা এখনও দলের সামনের সারিতে রয়েছেন, সে ক্ষেত্রেও দল কেন চুপ করে বসে রয়েছে— এমন প্রশ্ন তুলেছেন রাজ্যের শাসক দলেরই একটি অংশ।
ওই অংশের অভিযোগ, জেলায় দলের মধ্যে এখনও গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব রয়েছে। সেই হিসেবে শুধুমাত্র একটি অংশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। যদিও তা মানতে নারাজ তৃণমূলের দায়িত্বে থাকা নেতারা। তাঁদের দাবি, খুনে অভিযুক্ত তৃণমূল নেতাদের দলে জায়গা দেওয়া হয়নি। কারও বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবেই। রাজ্যের বিরোধী দল বিজেপি অবশ্য টিম পিকের ওই কাজ লোক দেখানো ছাড়া কিছু নয় বলে দাবি করেন। তাঁদের দাবি, শহরে এবং তৃণমূলের একাধিক নেতা নানা মামলায় অভিযুক্ত রয়েছেন। তাঁদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তৃণমূলের কোচবিহার জেলার সভানেত্রী মালতী রাভা বলেন, “তৃণমূলের সঙ্গে দুর্নীতি জড়িয়ে পড়ছে। শুধু তাই নয়, নানা অভিযোগ রয়েছে শাসক দলের নেতাদের বিরুদ্ধে। মানুষই এ সবের ব্যবস্থা নেবে।”