—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
আলিপুরদুয়ারের মহিলা ঋণদান সমবায় সমিতির দুর্নীতি নিয়ে কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের শুক্রবারের নির্দেশে নতুন করে আশার আলো দেখতে শুরু করলেন ‘প্রতারিত’ আমানতকারীরা। এ বার কেন্দ্রীয় দুই তদন্তকারী সংস্থা দ্রুত এই দুর্নীতির তদন্তে নেমে, তাঁদের টাকা ফেরতের ব্যবস্থা করুক, চাইছেন প্রতারিত আমানতকারীদের অনেকেই।
পঞ্চাশ কোটিরও বেশি টাকা প্রতারণার অভিযোগে আলিপুরদুয়ারের মহিলা ঋণদান সমিতির বিরুদ্ধে গত ২৪ অগস্ট কলকাতা হাই কোর্টের জলপাইগুড়ি সার্কিট বেঞ্চ থেকে এক যোগে ইডি ও সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ই। তখন থেকেই আলিপুরদুয়ারে কবে এই ঘটনার তদন্তে ইডি ও সিবিআইয়ের আধিকারিকেরা আসবেন, তা নিয়ে আমানতকারীদের অপেক্ষা শুরু হয়। কিন্তু সে নির্দেশ এখনও কার্যকর হয়নি। সিবিআইয়ের কাছে সিআইডি নথি হস্তান্তর তো করেইনি, উল্টে, আগের নির্দেশ পুনর্বিবেচনার আর্জি জানিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে এ দিন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় সিআইডিকে ৫০ লক্ষ টাকা জরিমানা করার পাশাপাশি, তিন দিনের মধ্যে এই মামলার যাবতীয় নথি সিবি আই ও ইডিকে দেওয়ার নির্দেশ দেন। বিচারপতির এ দিনের নির্দেশের পরে, শহর জুড়ে আবারও এই দুর্নীতিতে ইডি-সিবিআই তদন্ত নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে।
পুলিশ সূত্রের খবর, ২০২০ সালের মার্চ মাসে এই দুর্নীতি নিয়ে আলিপুরদুয়ার থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছিলেন অলোক রায় নামে এক আরটিআই কর্মী। শুরুতে পুলিশ এর তদন্ত শুরু করলেও, পরে, তদন্তভার নেয় সিআইডি। প্রায় তিন বছর রাজ্যের তদন্তকারী সংস্থাটি এই দুর্নীতির তদন্ত করে। তাদের হাতে ছ’জন গ্রেফতারও হয়। কিন্তু আমানতকারীদের অভিযোগ, তার পরে এই মামলার খুব বেশি আর অগ্রগতি হয়নি। এরই মধ্যে গত মাসে গোটা দুর্নীতির ইডি ও সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেয় হাইকোর্টের জলপাইগুড়ি সার্কিট বেঞ্চ। ২০২০ সালে আলিপুরদুয়ার থানায় এই দুর্নীতি নিয়ে অভিযোগ করা অলোক রায় এ দিন বলেন, “আমি চাই, গরিব মানুষ তাঁদের টাকা ফেরত পান। রাজ্য সরকার তদন্তকারী সংস্থাকে সাহায্য করুক।”
অবসরের পরে ২০১৯ সালে আলিপুরদুয়ার মহিলা ঋণদান সমবায় সমিতিতে প্রায় সাড়ে ১১ লক্ষ টাকা ‘এমআইএস’ করেছিলেন ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের কর্মী কল্পনা দাস সরকার। হাইকোর্টের এ দিনের নির্দেশের কথা জেনে তিনি বলেন, “বিচারপতির নির্দেশে অনেকটাই স্বস্তি পাচ্ছি। মনে হচ্ছে, এ বার তদন্তে অগ্রগতি হবে।” কল্পনা দাস সরকারের মতোই চাকরি থেকে অবসর নিয়ে মহিলা ঋণদান সমিতিতে প্রায় সাড়ে ১৩ লক্ষ টাকা গচ্ছিত রেখেছিলেন সমাজকল্যাণ দফতরের কর্মী অঞ্জলি শুঁড়। এ ছাড়া, প্রায় ৭০ হাজার টাকার ‘রেকারিং’ ছিল তাঁর। অঞ্জলি বলেন, “বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের চেষ্টাতে যদি আমার গচ্ছিত টাকা ফেরত পাই! সে আশাতেই এখন বসে আছি।”