পুর এলাকায় ডেঙ্গি প্রতিরোধের কাজ নিয়ে ছড়িয়েছে উদ্বেগ। ফাইল চিত্র।
জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর শিলিগুড়ির পুর এলাকায় ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা পাঁচশো ছাড়িয়েছে। এরমধ্যেই অষ্টমীতে জ্বরে আক্রান্ত এক বাসিন্দা মারা গিয়েছেন। তাঁর পরিবারের দাবি, ডেঙ্গি আক্রান্ত ছিলেন তিনি। এই পরিস্থিতিতে পুর এলাকায় ডেঙ্গি প্রতিরোধের কাজ নিয়ে ছড়িয়েছে উদ্বেগ।
পুর এলাকায় ডেঙ্গি প্রতিরোধের কাজে নজরদারি করা হয় উপমুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক-২-এর দফতর থেকে। শুক্রবার সেই দফতরে গিয়ে দেখা গেল একটি ঘরে তিনজন কর্মী বসে রয়েছেন। তখন দফতরে ছিলেন না উপমুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক-২ তুলসি প্রামাণিক। তিনি ডেঙ্গি প্রতিরোধের নোডাল অফিসারও। দফতরে থাকা কর্মীরা জানালেন তুলসীবাবু ছুটি রয়েছেন। ফোন করা হলে তাঁর ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। বাকি কর্মীরা কোথায় জিজ্ঞেস করলে ওই কর্মীরা জানান, পুজোর ছুটির জন্য কেউ নেই। এখন শহরে যেভাবে ডেঙ্গি হচ্ছে সেই সময় এত গুরুত্বপূর্ণ দফতরের কর্মীরা কেন পদক্ষেপ করবেন না সেই প্রশ্ন তুলেছেন বাসিন্দারা।
জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রলয় আচার্য দার্জিলিংয়ে রয়েছেন। শনিবার মন্ত্রীর ডাকা বৈঠকে তিনি থাকবেন বলে জানান। তিনি বলেন, ‘‘দফতর বন্ধ বলে ব্যাপার নেই। অতিরিক্ত মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক আছেন।’’
পুরসভা এবং স্বাস্থ্য দফতরের তরফে ডেঙ্গির প্রতিরোধের কাজের মান নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। সমীক্ষা করতে গিয়ে কর্মীরা বাড়ির ভিতরে ঢুকে জমা জল ফেলে সাফ করছেন না বলে অভিযোগ। তাতেই ডেঙ্গি বাড়ছে বলে আশঙ্কা। শুক্রবার তা স্বীকার করেন পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগের মেয়র পারিষদ শঙ্কর ঘোষ।
শঙ্করের দাবি, ‘‘ডেঙ্গি পরিস্থিতি অযথা উদ্বেগ বা আশঙ্কা প্রকাশ করার মতো নয়। স্বাস্থ্য দফতরের পরামর্শ মেনে কয়েকটি ওয়ার্ডে ডেঙ্গি প্রতিরোধের কাজে জোর দিতে বলা হয়েছে। অন্য ওয়ার্ডগুলোকেও সতর্ক করা হয়েছে।’’ স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে, ২, ৩, ৫, ১৩ থেকে ১৫ এবং ২১ ও ৪২ নম্বর ওয়ার্ডে ডেঙ্গি আক্রান্ত বেড়েছে। শঙ্করের দাবি, একমাত্র ২১ নম্বর ওয়ার্ডে ডেঙ্গি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসেনি। সেখানে একই বাড়িতে একাধিক জন ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হচ্ছেন বলে অভিযোগ।
পুর কর্তাদের একাংশের ধারণা বাড়ির মধ্যেই জমা জলে মশার লার্ভা জন্মাচ্ছে। সেই কারণে একই বাড়িতে একাধিক সদস্য ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হচ্ছেন। শঙ্কর জানান, পুরসভার বা স্বাস্থ্য দফতরের সেই পরিকাঠামো নেই যাতে বাড়ি বাড়ি ঢুকে কোথায় জল আছে সব কিছু দেখে পরিষ্কার করে আসবে। যদিও স্বাস্থ্য দফতরের তরফে জানানো হয়েছে, বাড়ি বাড়ি যাওয়া সমীক্ষক দলের অন্যতম কাজই হল ঘরে ঢুকে কোথাও জল জমে রয়েছে কিনা দেখা। তা থাকলে জন ফেলে দিয়ে বাসিন্দাদের সচেতন করাও তাদের কাজ। অথচ মেয়র পারিষদ অন্য কথা বলায় তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অভিযোগ, অনেক জায়গায় সমীক্ষকদের বাড়িতে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না।
শহরের বিভিন্ন নির্মাণ কাজের জায়গাতেও জল জমে থাকার অভিযোগ রয়েছে। সেগুলোকে নোটিস পাঠানো বা জরিমানা করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। মেয়র পারিষদ শঙ্কর ঘোষ জানান, পুর কমিশনার পুজোর ছুটিতে বাইরে। তিনি ফিরলে যাঁরা নির্দেশ মানছেন না তাঁদের জরিমানা করার বিষয়টি দেখবেন। পর্যটনমন্ত্রী বৃহস্পতিবার জানান, ২১ নম্বরে ডেঙ্গি মহামারির মতো হয়েছে। ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সুজয় ঘটকের কথায়, ‘‘ওয়ার্ডে ২ জন আক্রান্ত ছিলেন। তবে ২১ নম্বর ওয়ার্ড নিয়ে চিন্তা রয়েছে।’’