কয়েকদিন আগে শিলিগুড়ি পুরসভার মেয়র অশোক ভট্টাচার্যের ভাই ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছিলেন। এবার শিলিগুড়ি পুরসভার প্রাক্তন ডেপুটি মেয়র হরিসাধন ঘোষের ভাই প্রদীপবাবু ডেঙ্গি আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন নার্সিংহোমে। অশোকবাবুরা শিলিগুড়ির সুভাষপল্লির বাসিন্দা। হরিসাধনবাবুর ভাই থাকেন হাকিমপাড়া এলাকায়। কর্মসূত্রে ক্ষুদিরামপল্লিতে নিয়মিত যাতায়াত তাঁদের।
চিকিৎসকদের একাংশের মতে, শিলিগুড়িতে বাগরাকোট, সুভাষপল্লি, হাকিমপাড়া, ক্ষুদিরামপল্লি এলাকায় যে ডেঙ্গির প্রকোপ ক্রমশ ছড়াচ্ছে তা স্পষ্ট। সে জন্য জরুরি ভিত্তিতে মশা নিয়ন্ত্রণ ও ডেঙ্গি সংক্রান্ত সচেতনতা আরও বাড়ানোর উপরে জোর দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। প্রাক্তন ডেপুটি মেয়র হরিসাধনবাবু বলেছেন, ‘‘শহরের ডেঙ্গি পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে আরও নিবিড় কর্মসূচি নেওয়া জরুরি। পুরসভা-প্রশাসন নিশ্চয়ই ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণে কাজে আরও গতি বাড়াবে।’’
এই মুহূর্তে শহরের বিভিন্ন নার্সিংহোমগুলিতে অন্তত ২০ জন ডেঙ্গি রোগী ভর্তি রয়েছে বলে জানা গিয়েছে। শিলিগুড়ির কলেজপাড়া, খালপাড়া, সেবকরোড় এলাকার নার্সিংহোমগুলিতে ডেঙ্গি রোগী রয়েছে। শনিবার ডেঙ্গি পরিস্থিতি নিয়ে মহকুমা পরিষদে বিভিন্ন নার্সিংহোমগুলির প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠক ডাকেন মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক। নার্সিংহোমগুলির তরফে জানিয়ে দেওয়া হয় পরিস্থিতির কথা। তবে স্বাস্থ্য দফতরের কথায়, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে র্যাপিড কার্ড টেস্ট করে ডেঙ্গি বলে দাবি করা হচ্ছে। কিন্তু ম্যাক এলাইজা পরীক্ষায় জীবাণু না পাওয়া গেলে নিশ্চিত করে বলা যাবে না ডেঙ্গি হয়েছে। শহরে ডেঙ্গি পরিস্থিতি নিয়ে মেয়র বলেন, ‘‘নার্সিংহোম কার্ড টেস্ট পরীক্ষায় যেগুলিকে ডেঙ্গি বলা হছে তা নিশ্চিত কি না সেটা দেখার দায়িত্ব স্বাস্থ্য দফতরের। তারা বলছেন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে। কিছু নার্সিংহোমে জ্বর নিয়ে রোগী এখনও যাচ্ছেন বলেও জানা গিয়েছে।’’
গত ১৬ নভেম্বর ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে শিলিগুড়ি ১১ নম্বর ওয়ার্ডে ক্ষুদিরামপল্লি এলাকায় অমিত ছেত্রী নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়। কার্ড টেস্ট পরীক্ষায় তাঁর ডেঙ্গি মিলেছিল। পরে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তাঁর রক্তের নমুনা পরীক্ষা করেও হেমারেজিক ডেঙ্গি বলে জানা গিয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ে তাই বাসিন্দাদের অনেকেই চিন্তিত। মুখ্যস্বাস্থ্য আধিকারিক অসিত বিশ্বাস বলেন, ‘‘ডেঙ্গি নয়, নার্সিংহোমগুলিতে জ্বরে আক্রান্ত রোগী রয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে কার্ড টেস্ট পরীক্ষায় ডেঙ্গি বলা হচ্ছে। তাতে পরিবারের লোকেরা চিন্তিত হয়ে চিকিৎসা করাচ্ছেন। কিন্তু, ম্যাক এলাইজা পরীক্ষায় নিশ্চিত না হলে ডেঙ্গি বলা যাবে না।’’
এ দিন বৈঠকে সে কথাও জানানো হয়। নার্সিংহোমগুলির প্রতিনিধিদের একাংশের বক্তব্য কার্ড টেস্ট পরীক্ষায় অনেক ক্ষেত্রে ডেঙ্গি ধরা পড়ছে। সেই মতো চিকিৎসা শুরু করতে হচ্ছে। প্লেটলেট কমে গেলে দিতে হচ্ছে। রক্তের নমুনা মেডিক্যাল কলেজে পাঠানোও হচ্ছে। কিন্তু সেখানে ডেঙ্গি না মিললেও চিকিৎসক তো ডেঙ্গি হিসাবেই তাঁদের চিকিৎসা করে সুস্থ করছেন। মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের দাবি, ‘‘পরিস্থিতি আগের চেয়ে নিয়ন্ত্রণে। রোগের প্রকোপও কমে আসছে।’’
চিকিৎসকদের একাংশের কথায়, ডেঙ্গির ম্যাক এলাইজা পরীক্ষা করতে নির্দিষ্ট সময় রক্তের নমুনা নেওয়া প্রয়োজন। জ্বর শুরু হওয়ার পাঁচ দিন পর রক্তের নমুনা নেওয়া উচিত। তার আগে বা চিকিৎসা শুরুর কয়েক দিন পর রক্তের নমুনা নিলে অনেক সময় জীবাণু মিলছে না। শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালে ডেঙ্গির রোগী নেই বলে কর্তৃপক্ষের দাবি। তবে অন্তত ৯ জন জ্বরের রোগী রয়েছেন পুরুষ এবং মহিলা মেডিসিন বিভাগ মিলিয়ে। হাসপাতালের সুপার অমিতাভ মণ্ডল বলেন, ‘‘ডেঙ্গির রোগী নেই। তবে জ্বরের রোগী রয়েছেন। তাদের চিকিৎসা চলছে।’’
পরিস্থিতি নিয়ে গত শুক্রবার পুর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করেন জেলার স্বাস্থ্য আধিকারিকরা। সচেতনতা প্রচারে বাড়িতে বাড়িতে ফের লিফলেট বিলি, জ্বর নিয়ে সমীক্ষার কাজ হবে বলে ঠিক হয়। নির্মাণকাজের জায়গাগুলিতে যাতে জল জমে না থাকে শীঘ্রই অভিযান চালিয়ে তা দেখা হবে বলে পুর কর্তৃপক্ষ জানান।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এ বছরে শিলিগুড়িতে ডেঙ্গিতে মৃত্যু হয়েছে ১ জনের। দার্জিলিং জেলায় এখনও পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ১৬৩ জন। শিলিগুড়ি পুর এলাকায় আক্রান্ত হয়েছেন ১১২ জন। শিলিগুড়ি হাসপাতালে জ্বর নিয়ে ভর্তি রয়েছেন অন্তত ৯ জন। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ৭ জন জ্বরের রোগী ভর্তি রয়েছেন।