Women Homicide

বাড়িই সবচেয়ে বিপজ্জনক, ৬০ শতাংশ নারীহত্যার নেপথ্যে পরিবার ও সঙ্গীরা! রাষ্ট্রপুঞ্জের রিপোর্টে হইচই

নারীহত্যা সংক্রান্ত রাষ্ট্রপুঞ্জের রিপোর্ট ঘিরে দুনিয়া জুড়ে শুরু হয়েছে শোরগোল। ওই রিপোর্ট অনুযায়ী পরিবার এবং সঙ্গীর হাতেই প্রাণ হারাচ্ছেন খুন হওয়া মহিলাদের ৬০ শতাংশ।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ নভেম্বর ২০২৪ ১১:১৩
Share:
০১ ১৮

পথেঘাটে বা কর্মস্থলে নয়। বাড়িতেই নাকি সবচেয়ে বেশি অসুরক্ষিত মেয়েরা! রাষ্ট্রপুঞ্জের এ হেন বিস্ফোরক রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসতেই দুনিয়া জুড়ে শোরগোল। গার্হস্থ্য হিংসা থেকে শুরু করে পণের জন্য বধূহত্যা আটকাতে কেন উন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশগুলি ব্যর্থ হচ্ছে, তা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।

০২ ১৮

সম্প্রতি ‘লিঙ্গ হিংসা’ (জেন্ডার ভায়োলেন্স) সংক্রান্ত একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে রাষ্ট্রপুঞ্জ। সেখানে বলা হয়েছে, গত বছর (পড়ুন ২০২৩) পূর্ণবয়স্ক নারী এবং কিশোরী মিলিয়ে প্রতি দিনে খুন হয়েছেন গড়ে ১৪০ জন। প্রতিটি ক্ষেত্রেই নিহতের সঙ্গী বা ঘনিষ্ঠ আত্মীয়েরাই ছিলেন হত্যাকারী।

Advertisement
০৩ ১৮

চলতি বছরের ২৫ নভেম্বর, ‘আন্তর্জাতিক নারীদের বিরুদ্ধে সহিংসতা নির্মূল দিবস’-এ ৩২ পাতার সংশ্লিষ্ট রিপোর্টটি প্রকাশ করে রাষ্ট্রপুঞ্জের ‘মহিলা ড্রাগ এবং অপরাধ’ দফতর। রিপোর্ট অনুযায়ী, গত বছর (পড়ুন ২০২৩) দুনিয়া জুড়ে ৮৫ হাজার মহিলা খুন হয়েছেন। নিহতদের ৬০ শতাংশেরই প্রাণ গিয়েছে সঙ্গী বা ঘনিষ্ঠ আত্মীয়দের হাতে।

০৪ ১৮

রাষ্ট্রপুঞ্জের রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, ‘‘মেয়েদের ক্ষেত্রে বাড়ি সবচেয়ে বিপজ্জনক জায়গা। তবে তাঁরা সর্বত্রই লিঙ্গভিত্তিক হিংসার শিকার হচ্ছেন। কোনও মাসেই এর সূচক নিম্নমুখী হওয়ার প্রবণতা দেখা যায়নি।’’

০৫ ১৮

মহাদেশভিত্তিক নারীহত্যার নিরিখে প্রথম স্থানে রয়েছে আফ্রিকা। ২০২৩ সালে এই ‘অন্ধকার মহাদেশে’ ঘনিষ্ঠ সঙ্গী বা পরিবারের সদস্যদের হাতে খুন হয়েছেন আনুমানিক ২১ হাজার ৭০০ জন মহিলা। জনসংখ্যার নিরিখে এই সংখ্যা সর্বাধিক। প্রতি এক লক্ষে আফ্রিকায় নারীহত্যার সংখ্যা প্রায় তিন (২.৯ জন)।

০৬ ১৮

আফ্রিকার পরে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে আমেরিকার নাম। বিশ্বের অন্যতম উন্নত মহাদেশটিকে গত বছর (পড়ুন ২০২৩) প্রাণ হারিয়েছেন ৮ হাজার ৩০০ জন মহিলা। মৃত্যুহার সেখানে প্রতি লক্ষে ১.৬।

০৭ ১৮

এই তালিকায় ওশিয়ানিয়া মহাদেশটি দখল করেছে তৃতীয় স্থান। এশিয়া এবং ইউরোপ রয়েছে যথাক্রমে চতুর্থ ও পঞ্চম স্থানে। রাষ্ট্রপুঞ্জের রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ওশিয়ানিয়ায় প্রতি এক লক্ষে খুন হয়েছেন ১.৫ জন নারী। মোট ৩০০ জন মহিলা প্রাণ হারিয়েছেন বিশ্বের সবচেয়ে ছোট মহাদেশটিতে।

০৮ ১৮

অন্য দিকে, এশিয়া এবং ইউরোপে প্রতি লক্ষে নারী হত্যার হার যথাক্রমে ০.৮ এবং ০.৬ শতাংশ। গত বছর (পড়ুন ২০২৩) এশিয়ায় খুন হওয়া মহিলার সংখ্যা ছিল ১৮ হাজার ৫০০। আর ইউরোপে এই সংখ্যা ২ হাজার ৩০০-তে পৌঁছেছিল।

০৯ ১৮

রাষ্ট্রপুঞ্জের আধিকারিকদের দাবি, ইউরোপ এবং আমেরিকায় ইচ্ছাকৃত ভাবে নারীহত্যার প্রবণতা বেশি। এই ধরনের ঘটনাগুলিতে অধিকাংশ ক্ষেত্রে নিহতের অন্তরঙ্গ সঙ্গীর হাত থাকার প্রমাণ মিলেছে।

১০ ১৮

দুনিয়া জুড়ে পুরুষ খুনের ঘটনা আবার পুরোপুরি উল্টো। ঘনিষ্ঠ সঙ্গীর হাতে তাঁদের প্রাণ হারানোর প্রবণতা তুলনামূলক ভাবে অনেকটাই কম। বাড়ি বা পরিবারের বাইরেই অধিকাংশ পুরুষকে হত্যা করা হয়েছে, বলছে রাষ্ট্রপুঞ্জের রিপোর্ট।

১১ ১৮

আন্তর্জাতিক সংগঠনটির আধিকারিকেরা জানিয়েছেন, মেয়েদের থেকে ছেলেদের খুন হওয়ার হার অনেক বেশি। তবে গার্হস্থ্য হিংসার অনুপাতের ক্ষেত্রে আকাশপাতাল পার্থক্য রয়েছে। সেখানে আক্রান্ত নারীদের সংখ্যা পুরুষদের চেয়ে অনেক বেশি।

১২ ১৮

এ ব্যাপারে ২০২৩ সালের পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে রাষ্ট্রপুঞ্জ। সংগঠনটির দাবি, গত বছর মোট হত্যাকাণ্ডের ৮০ শতাংশই পুরুষদের প্রাণ নিয়েছে। খুন হওয়া মেয়েদের ৬০ শতাংশই গার্হস্থ্য হিংসার শিকার।

১৩ ১৮

উন্নত, উন্নয়নশীল এবং পিছিয়ে পড়া দেশগুলি নারী সুরক্ষায় গুরুত্ব দিচ্ছে না এমনটা নয়। মহিলা হত্যাকাণ্ড এবং গার্হস্থ্য হিংসা আটকাতে রাষ্ট্রভেদে আলাদা আলাদা আইন রয়েছে। তা সত্ত্বেও এর সূচক ঊর্ধ্বমুখী থাকায় উদ্বেগপ্রকাশ করেছে রাষ্ট্রপুঞ্জ। নারী সুরক্ষায় আমেরিকা ও ইউরোপ যে ব্যর্থ, তা বকলমে স্বীকার করেছে তারা।

১৪ ১৮

রাষ্ট্রপুঞ্জের রিপোর্ট অনুযায়ী, গত বছর (পড়ুন ২০২৩) প্রতি ১০ মিনিটে খুন হয়েছেন একজন নারী। অন্তরঙ্গ সঙ্গী বা পরিবারের সদস্যদের হাতে প্রাণ হারানো মহিলার সংখ্যা ছিল ৫১ হাজার ১০০। ২০২২ সালে এই সংখ্যা ছিল ৪৮ হাজার ৮০০।

১৫ ১৮

রাষ্ট্রপুঞ্জের ‘ফেমিনিসাইড্ ইন ২০২৩’ শীর্ষক রিপোর্ট নিয়ে মুখ খুলেছেন সংগঠনের মহিলা দফতরের ডেপুটি এগজ়িকিউটিভ ডিরেক্টর নিয়ারাদজায়ি গুম্বনজভান্ডা। এত সংখ্যক নারীহত্যার নেপথ্যে ক্ষতিকর সামাজিক নিয়মকে দোষারোপ করেছেন তিনি।

১৬ ১৮

সংবাদ সংস্থা এপি-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে গুম্বনজভান্ডা বলেছেন, ‘‘গার্হস্থ্য হিংসার মূল কারণ হল মহিলাদের উপর কর্তৃত্ব কায়েম। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এর প্রতিবাদ করলেই সংশ্লিষ্ট মেয়েটিকে অত্যাচারের শিকার হতে হচ্ছে।’’

১৭ ১৮

জ়িম্বাবোয়ের বাসিন্দা পেশায় আইনজীবী গুম্বনজভান্ডা দীর্ঘ দিন ধরেই নারী অধিকার নিয়ে কাজ করছেন। তাঁর কথায়, ‘‘পরিবারের সদস্যেরা অপরাধী হলে মেয়েদের পক্ষে বিচার চাওয়া জটিল হয়ে যায়। কারণ, সে ক্ষেত্রে পরিবারের মধ্যেই নানা প্রশ্নের মুখে পড়তে হয় তাঁকে।’’

১৮ ১৮

এই পরিস্থিতির উন্নতির জন্য শুধুমাত্র কঠোর আইন যথেষ্ট নয় বলে মনে করছেন রাষ্ট্রপুঞ্জের আধিকারিকেরা। এর জন্য সামাজিক ভাবে চিন্তাভাবনা বদলের প্রয়োজন রয়েছে বলে জানিয়েছেন তাঁরা।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement