কমলালেবুর গাছের পরিচর্যায় ব্যস্ত পুরাতন মালদহের দীপক রাজবংশী। ছবি স্বরূপ সাহা কপি জয়ন্ত সেন।
আমের জেলা মালদহে এ বার নতুন চাষ কমলালেবুর। জেলার একাধিক বাসিন্দা তাঁদের ছাদ বাগানে কমলালেবু ফলিয়েছেন একাধিক বার। এ বার জমিতে কমলালেবু চাষ করে চমকে দিলেন পুরাতন মালদহের মশানভাসা গ্রামের কৃষক দীপক রাজবংশী। জৈব পদ্ধতিতে চাষ করা গাছের কমলালেবু মিষ্টত্ব ও স্বাদে দার্জিলিংয়ের কমলাকে টেক্কা দিলেও তা আকারে কিছুটা ছোট হওয়ায় সন্তুষ্ট নন দীপক। কমলালেবুর আকারকে আরও বড় কী ভাবে করা যায় সেই চেষ্টা তিনি চালাচ্ছেন।
জেলার ব্যবসায়ী মহলের আশা, দীপকের এই কমলালেবু চাষ জেলার অন্য চাষিদের দিশা দেখাবে। এ দিকে রবিবার দুপুরে কমলালেবুর চাষ পরিদর্শনে যান জেলা উদ্যানপালন দফতরের আধিকারিকরা। তাঁদের দাবি, নতুন অর্থবর্ষে তাঁরা জেলার আরও কিছু চাষিকে কমলালেবু চাষে উৎসাহিত করে তাদের জমিতে 'ডেমোনেস্ট্রেশন প্লট' করবেন। পুরাতন মালদহ ব্লকের মহিষবাথানি গ্রাম পঞ্চায়েতের মশানভাসা গ্রামের কৃষক দীপক রাজবংশী দীর্ঘ দিন ধরেই তার জমিতে ধান থেকে শুরু করে আলু, পটল ও অন্য আনাজের প্রথাগত চাষবাস করে আসছেন। সেই চাষবাসেই তাঁর সংসার চলে। তবে গত কয়েক বছর ধরে তিনি বিকল্প চাষের দিকে ঝুঁকেছেন এবং দশ কাঠা জমিতে ড্রাগন ফ্রুট, মোসাম্বি, অ্যাভোগাড্রো, লঙ্গনের চাষ শুরু করেছেন। দীপক জানিয়েছেন, ওই জমিতেই বছর চারেক আগে নদিয়ার রানাঘাটের একটি নার্সারি থেকে দশটি কমলালেবু গাছের চারা এনে বুনেছিলেন।
পরিচর্যা করলেও একটি গাছ মরে যায়। এই বছরই প্রথম সেই ৯টি গাছে প্রচুর কমলালেবু ফলেছে। বাণিজ্যিক ভাবে এখনই বিক্রি শুরু না করলেও প্রায় এক কুইন্টাল কমলালেবু তিনি ইতিমধ্যে মালদহের পাইকারি বাজারে বিক্রি করেছেন। গড়ে দাম পেয়েছেন কেজি প্রতি ৩২-৩৫ টাকা। দীপকের দাবি, এই কমলালেবু চাষে প্রথম থেকেই তিনি কোনও রাসায়নিক সারের ব্যবহার করেননি। সার হিসেবে গোবর, ভার্মি কম্পোস্ট, নিম-খইলের মিশ্রণ ব্যবহার করেছেন। কীটনাশক হিসেবে নিজের হাতে অ্যালোভেরা পাতা, কাঁচা হলুদ, কাঁচা লঙ্কা, পেঁয়াজ, রসুন, তুলসীপাতা, দারুচিনির গুঁড়ো, নিমপাতা প্রভৃতি দিয়ে তৈরি করা ভেষজ কীটনাশক ব্যবহার করেছেন। দীপক বলেন, ‘‘প্রতিটি কমলালেবু গাছে ভাল ফলন হয়েছে। মিষ্টত্ব, স্বাদ দার্জিলিং কমলালেবুর কাছাকাছি। তবে কমলালেবুগুলি আকারে ছোট। কমলালেবুর আকার কী করে বড় করা যায় সেই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’’ মালদহ ম্যাঙ্গো মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি উজ্জ্বল সাহা বলেন, ‘‘জেলায় কমলালেবু চাষ খুবই ভাল উদ্যোগ। এই চাষ অন্য চাষিদের বিকল্প চাষের দিশা দেখাবে। উদ্যানপালন দফতর কমলালেবু চাষের প্রসারে আশা করি উদ্যোগী হবে।’’ মালদহ জেলা উদ্যানপালন আধিকারিক সামন্ত লায়েক বলেন, ‘‘এ দিন কমলালেবু গাছগুলি পরিদর্শন করেছি। কমলালেবুর আকার বড় করার জন্য কৃষককে কিছু পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। নতুন অর্থবর্ষে কিছু এলাকায় কমলালেবু চাষের প্রসারে কিছু ডেমোনস্ট্রেশন প্লট করতে চাই।’’