পাকড়াও: মহানন্দায় ভেসে ওঠেছে মরা মাছ। নিজস্ব চিত্র
সেখানে মহানন্দার জলের রং কালচে। আবর্জনা জমে এমন দুর্গন্ধ যে পাড়ে দাঁড়ানো দায়। শিলিগুড়ির লালমোহন মৌলিক বিসর্জন ঘাট লাগোয়া মহানন্দার সেই অংশে ভেসে উঠল রাশি রাশি মরা, আধমরা মাছ। শনিবার সকালে এই দৃশ্য দেখে হকচকিয়ে গিয়েছেন শহরবাসীদের অনেকেই। মাছ তুলে নিতে ভিড় উপচে পড়ে নদীতে। যে যেমন ভাবে যতটা পেরেছেন, ততটা মাছ তুলে নিয়ে গিয়েছেন।
মৎস্য দফতরের কর্তাদের প্রাথমিক সন্দেহ বিষক্রিয়ার জেরেই মাছগুলো মরে থাকতে পারে। ঘটনার তদন্তের নির্দেশে দিয়েছে জেলা প্রশাসন। অভিযোগ ঘটনার দীর্ঘক্ষণ পরে এলাকায় যায় পুলিশ। জেলাশাসক জয়সী দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘ঘটনার খবর পেয়েছি। মৎস্য দফতরকে বলা হয়েছে তদন্ত করে রিপোর্ট দিতে। পুরসভাকেও বলেছি, ওই মাছ যাতে কেউ না খায় তার জন্য এলাকায় প্রচার করতে।’’ যদিও পুরসভা থেকে প্রচারের কোনও পরিকল্পনা নেই বলেই জানিয়েছেন মেয়র অশোক ভট্টাচার্য। শিলিগুড়ির মৎস্য আধিকারিক সুরজিৎ সাহা বলেন, ‘‘মাছ পাইনি। দু’টি পাত্রে জলের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। কলকাতায় পাঠানো হবে।’’
প্রায় দু’বছর আগে নৌকাঘাট এবং তারও কিছু আগে ফুলবাড়িতে মহানন্দার জলে এভাবেই মৃত মাছ ভেসে উঠেছিল। শনিবার বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ মাছ ভেসে ওঠার খবর পেতেই চম্পাসারি থেকে নৌকাঘাট পর্যন্ত শ’য়ে শ’য়ে মানুষ নদীতে নেমে পড়েন। এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, কিরণচন্দ্র শ্মশানঘাট সংলগ্ন এলাকা, লালমোহনঘাট, নৌকাঘাট, সন্তোষীনগর ছটঘাট, সূর্যসেন পার্কের পিছনে নদীতে লোকের ভিড়।
আরও পড়ুন: গোবর, গঙ্গাজলে সভাস্থল ‘শুদ্ধ’ করতে অভিযান
নদীতে নেমেছিল ১ নম্বর ওয়ার্ডের একাদশ শ্রেণির ছাত্র রবি চৌধুরী। প্রায় দু’কেজি ওজনের একটি আমেরিকান রুই পেয়েছে সে। রবি বলল, ‘‘বাড়িতে গিয়ে ভাজা করে খাব।’’ মেয়ে সেরেউন্নিসাকে সঙ্গে করে লালমোহন ঘাটে চলে এসেছিলেন ৪ নম্বর ওয়ার্ডের চা দোকানি মহম্মদ সাহাবুদ্দিন, সঙ্গে এনেছিলেন জাল। তিনি বলেন, ‘‘ডাক্তার আমাকে বড় মাছ খেতে বারণ করেছে। ছোট মাছ খুব একটা মেলে না। তাই এলাম।’’ কয়েকজন মাছ ধরে ঘাটে বসেই বিক্রির জন্য দর হাঁকতে শুরু করেছেন।
আরও পড়ুন: রুপোর পাঁচন কেষ্টকে
মাছ ধরার হিড়িক দেখে মহানন্দা বাঁচাও কমিটির নেত্রী ও প্রাক্তন কাউন্সিলর জোৎস্না আগরওয়াল পুলিশকে জানান। কিন্তু, বেলা ৩টে অবধি অবাধে মাছ সংগ্রহ চলে। শিলিগুড়ি নিয়ন্ত্রিত বাজার থেকে নদীর এই এলাকা বেশি দূরে নয়। বাজারে নষ্ট হওয়া মাছ নদীতে ফেলা হয়েছে কিনা তা নিয়েও তদন্তের দাবি তুলেছেন পরিবেশকর্মীদের একাধিক সংগঠন। নিয়ন্ত্রিত বাজারের পাইকারি মাছ ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতা বাপি চৌধুরী বলেন, ‘‘আমাদের এখানে আমেরিকান রুই, কাতলা, বাটা আসে। তবে গত দু’দিন দিনে মাছ নষ্ট হয়নি। নষ্ট হলে বাজারের মধ্যেই গর্ত খুঁড়ে পুঁতে ফেলা হয়।’’ তা হলে এত মরা, আধমরা মাছ নদীতে কী ভাবে এল তা নিয়ে দানা বাঁধছে রহস্য।